ধান বিজ্ঞানী নূরমোহাম্মদের উদ্ভাবন ব্যাতিক্রম ৩৭ জাতের ধান
জমিতে প্রবেশ করলেই দেখা যাবে বিশালাকার সাইনবোর্ড, যাতে বড় বড় করে লেখা আছে “নূর মোহাম্মদ কৃষি পরিসেবা” যার সংক্ষিপ্ত রূপ করলে দাড়ায় ‘এনএমকেপি’। স্বশিক্ষিত এ কৃষক নিজের আগ্রহ থেকে করছেন ধান নিয়ে গবেষণা, উদ্ভাবন করছেন নিত্যনৈমিত্তিক ভাবে বিভিন্ন জাতের নতুন নতুন ধান। এলাকায় তার নাম হয়ে গেছে ‘ধান বিজ্ঞানী’।
এই ধান বিজ্ঞানীর দেখা পাওয়া গেছে রাজশাহী জেলার তানোর উপজেলায়। এই বরেন্দ্র অঞ্চলের প্রধান কৃষিজ পণ্য হল ধান। পৌর এলাকার গোল্লাপাড়া বিলকুমারী এর সংলগ্ন ধানক্ষেত এ গিয়ে দেখা যাবে প্রা্য় নিজের সম্পূর্ণ সময়টাই তিনি সেখানে অতিবাহিত করছেন। সমস্ত ক্ষেতে এই দেখা যাবে ছোট বড় বেশ কিছু সাইনবোর্ড, অনেকটা বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট এর প্রদর্শনীর মত।
কিন্তু এগুলো মূলত কৃষক নূর মোহাম্মদের নিজের জমি ও গবেষনার প্লট। একটু কাছে গেলেই দেখা যাবে যে বেগুনি, খয়েরী, সবুজ ইত্যাদি বিভিন্ন প্রজাতির ধান।
স্থানীয় গ্রামবাসী ও কৃষকদের কাছ থেকে জানা যায়, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকলেও নিজের নতুন নতুন চিন্তা ও সংকরায়নের মা্ধ্যমে তিনি বিভিন্ন জাতের নতুন নতুন ধানের জাত উদ্ভাবন করেছেন। এ যাবত পর্যন্ত প্রায় ৩৭ টি নতুন জাতের ধান উদ্ভাবন করেছেন তিনি। দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করা নূর মোহাম্মদ বরেন্দ্র অঞ্চলে পরিচিতি পেয়েছেন ধান বিজ্ঞানী হিসেবে।
তার কাজ কে আমলে নিয়েছে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটএর বিজ্ঞানীরা। বর্তমানে তার উদ্ভাবিত ধানের জাত সমূহ স্বীকৃতির অপেক্ষায় আছে।
কেবল বরেন্দ্র অঞ্চলেই নয়, কৃষি সম্প্রসারন অফিসগুলোতেও তাকে সবাই বিজ্ঞানী নূর মোহাম্মদ বলেই চেনে। তানোর উপজেলার গোল্লাপাড়া গ্রামের এই বাসিন্দা খরায় নষ্ট হওয়া ধান বাচাতে শুরু করেন গবেষণা। নিজের মাটির ঘরকে বানিয়ে ফেলেন ধানের গবেষণাগার ও সংরক্ষণাগার। খোজ নিয়ে জানা যায় যে নতুন ও বিলুপ্ত মিলিয়ে প্রায় ৩০০ প্রজাতির ধান তার সংরক্ষনে রয়েছে।
তার সর্বশেষ উদ্ভাবিত খরসহিষ্ণু ধানের জাত এর নাম ‘এনএমকেপি-১০৫’। তার দাবি যে সাধারণত বোরো বপন করার পর থেকে শুরু করে কাটা অবধি ১৪০ দিন লাগলেও তার উদ্ভাবিত ধানের বেলায় তা লাগবে ১৩০ দিন। নূর মোহাম্মদ জানান যে তিনি এ বছর এক একর জমিতে ৩৭ জাতের ধানের সংকরায়ন করেছেন। এসব ধান দেখে কৃষি কর্মকর্তাগন যাচাই বাছাই এর মাধ্যমে যে সকল জাতকে স্বীকৃতি দিবেন তা নির্ধারণ করবেন।
কৃষক নূর মোহাম্মদ কে উপজেলার গর্ব বলে উল্লেখ করেছেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শামিমুল ইসলাম। তিনি বলেন নূর মোহাম্মদ দীর্ঘদিন যাবত ধানের উপর গবেষনা করে আসছেন এবং কৃষি অফিস এ ব্যাপারে তাকে যাবতীয় সহায়তা প্রদান করে আসছে।