তরমুজের গুড় নাম শুনে অবাক হচ্ছেন! এবার প্রথমবারের মতো তরমুজের গুড় উৎপাদন করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন একজন কৃষক। তরমুজের নির্যাস দিয়ে খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার ছোটবন্ড গ্রামের কৃষক মৃত্যুঞ্জয় মন্ডল এটি তৈরি করেছেন। তরমুজের গুড় উৎপাদন করে এলাকায় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এখন তিনি।
ছোট আকারের তরমুজগুলো সাধারণত বিক্রিযোগ্য নয়।
সেগুলো থেকে পরীক্ষামূলকভাবে গুড় তৈরি করেন তিনি।
এতে সফলতাও পেয়েছেন তিনি।
এই গুড়ের নাম দেওয়া হয়েছে তোগুড়, যা অনেক মিষ্টি এবং একই সাথে সুঘ্রাণযুক্ত।
তরুণ কৃষক মৃত্যুঞ্জয় মন্ডল জানান, দীর্ঘ দিন ধরে তিনি তরমুজের চাষ করছেন।
তরমুজ চাষে তিনি সফলতা পেয়েছেন।
প্রতি বছরই চাষাবাদে দেখা যায় মৌসুমের কিছু কিছু তরমুজ সাইজে ছোট হয়।
ক্যাট নামে পরিচিত ছোট আকৃতির এই তরমুজ বিক্রি করা যায় না।
প্রায়ই মাঠে থেকে যাওয়া এগুলো বৃষ্টিতে পঁচে দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয়।
কিছু কিছু মাছ ও গবাদি পশুর খাবার হিসেবে ব্যবহার হয়ে যায়।
তরমুজের গুড় তৈরির বিষয়ে উপজেলা কৃষি অফিসার মোসাদ্দেক হোসেনের পরামর্শ নিয়েছেন তিনি।
এরপর তিনি ও তার স্ত্রী বিক্রিযোগ্য নয় এমন ছোট আকারের তরমুজ দিয়ে গুড় উৎপাদনের চেষ্টা করেন।
পরীক্ষামূলকভাবে ২০-২৫ কেজি তরমুজ থেকে ৫-৬ কেজি পরিমাণ রস উৎপাদন হয়।
সেই রস জ্বাল করে প্রথম দফায় গুড় তৈরিতে সফলতা আসে তার।
দেখতে খেজুর গুড়ের মতো এই গুড়, স্বাদ মধুর মতো।
তার ভাষ্যমতে, এই পর্যন্ত ১০-১২ কেজি গুড় তৈরি করেছেন।
স্থানীয় সংসদ সদস্য ও কৃষি কর্মকর্তা এবং পাড়া-প্রতিবেশীদেরও দিয়েছেন।
এছাড়া ৩০০ টাকা কেজি দরে গুড় বিক্রিও করেছেন।
মৃত্যুঞ্জয় ছোট আকারের তরমুজ নিয়ে দেশীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করে তোগুড় উৎপাদন করছেন।
কোনো রকম মেশিন ছাড়া একেবারে দেশীয়ভাবে তৈরি এ গুড়।
মৃত্যুঞ্জয় জানান, এ বছর তেমন ক্যাট না থাকায় গুড়ও বেশি হবে না। তবে ভবিষ্যতে প্রচুর পরিমাণে গুড় বাণিজ্যিক ভাবে উৎপাদনের ইচ্ছা পোষণ করেছেন।
তরমুজের গুড় কিভাবে তৈরি করেন
মৃত্যুঞ্জয়ের স্ত্রী মিতালী মন্ডল জানান, তরমুজ লাল অংশ কেটে বের করা হয়। তারপর রস বের করে পরে নেট দিয়ে চেলে জুস বের করে চুলায় জ্বাল দিতে হবে।
জ্বাল দিতে দিতে এক সময় রস গাঢ় হয়ে আসবে। এর ওপরে থাকা ফেনা উঠিয়ে ফেলে দিতে হবে।
আরও কিছুক্ষণ জ্বাল দিলে রস গুড়ের রং ধারণ করলে বোঝা যাবে গুড় তৈরি হয়েছে।
ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. মোছাদ্দেক হোসেন। তিনি জানান, তরমুজ চাষের জন্য খুলনা উপকূলীয় লবণাক্ত এলাকা অত্যন্ত উপযোগী। তরমুজ দিয়ে এই প্রথম গুড় তৈরি করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন কৃষক মৃত্যুঞ্জয়।
এটা কৃষিক্ষেত্রে দারুণ এক অর্জন বলে তিনি মনে করেন।
তিনি আরও বলেন দেশের গুড় শিল্প দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। গাছের পাশাপাশি গাছির সংখ্যাও কমে যাচ্ছে দিন দিন।
অদূর ভবিষ্যতে গুড় শিল্প হুমকির দিকে চলে যাচ্ছে।
দেশের গুড়ের চাহিদা মেটাতে তরমুজের গুড় অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে।
তার মতে, অনেক সময় তরমুজের ন্যায্য দাম পায় না কৃষক।
ছোট আকারের তরমুজ বিক্রি হয় না প্রায়ই।
বাণিজ্যিকভাবে তরমুজ দিয়ে গুড় তৈরি করলে কৃষক একদিকে যেমন তার উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য পাবে। অন্যদিকে ফসল নষ্ট হবে না।