বিশ্বে টমেটোর পরে দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ সবজি হচ্ছে ক্যাপসিকাম বা মিষ্টি মরিচ। এর বহুবিধ ব্যবহার রয়েছে যেমন পাতা সালাদ অথবা স্যুপ তৈরিতে ব্যবহার হয়, কাঁচা ফল সালাত এবং রান্না করে সবজি হিসেবে অতি সুস্বাদু খাদ্য। পুষ্টিমানের দিক থেকে ক্যাপসিকাম একটি অত্যন্ত মূল্যবান সবজি।
প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকার কারণে এবং টবে চাষের উপযোগী বলে দেশের জনসাধারণকে মিষ্টি মরিচ খাওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করা যেতে পারে।
সৌখিন বাগানে ছোট পটেই প্রচুর ক্যাপসিকাম ফলানো সম্ভব। কিছু ম্যানেজমেন্ট ঠিক থাকলে আর একটু ধৈর্য ধরে অভিজ্ঞতা অর্জন করলে সিজনে তো বটেই এমনকি সারা বছর ফলানো সম্ভব।
এই লেখায় টবে ক্যাপসিকাম চাষের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছি। আপনারা চাইলেও আপনাদের অভিজ্ঞতা নিয়েও পোস্ট দিয়ে নতুন বাগানীদের সহযোগিতা করতে পারেন।
ক্যাপসিকামের জন্য টব নির্ধারণ
অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায় ক্যাপসিকামের জন্য মিনিমাম চার লিটার মাটি ধরে এমন পট হলে যথেষ্ট পরিমাণে ফল ধরে। তবে ছয় সাত লিটার আয়তনের টব আদর্শ। আপনারা পাচ লিটারের খালি তেলের ক্যান কেটে ঐটাকেই দারুণ টব হিসেবে ব্যাবহার করতে পারেন।
এছাড়া সবথেকে ভালো মাটির টব। দেখতে যেমন সুন্দর , গাছের জন্য আদর্শ। এতে যেমন গাছ ভালো থাকবে, তেমনি আপনার বারান্দা বা ছাদ বাগান নতুন করে সৌন্দর্য ভরে উঠবে। এ ধরনের টব খুবই মজবুত, অনেক দিন টিকে আর এগুলোতে যেকোনো জাতের টমেটো, মরিচ, ক্যাপসিকাম সফলভাবে ফলাতে পারবেন।
ক্যাপসিকামের জাত নির্ধারণ
ক্যাপসিকাম ঠান্ডা অঞ্চলের সবজি, তাই আমাদের এখানে শীতকালেই এর চাষ বেশি হয়। তবে এখন অনেক গরম সহিষ্ণু জাত উদ্ভাবিত হয়েছে যেগুলো বিশেষ করে ১২ মাস ফলানো সম্ভব।
ভালো উন্নত মানের চারা অবশ্যই নিতে হবে। লোকাল নার্সারী গুলোতে যেকোনো ধরনের চারা ধরিয়ে দেয়, যার ৮০% ফল আসে না।
ক্যাপসিকামের টবের মাটি তৈরি
ক্যাপসিকামের মাটি তৈরির সময় মনে রাখতে হবে মাটির পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা যেন ভালো থাকে। ছাদ কৃষিতে টবের মাটি তৈরি করবেন কিভাবে ছাদ বাগান করতে মাটি তৈরির নিয়ম লেখাটি পড়ুন।
ক্যাপসিকাম ফলাতে আমি সবসময় কয়েক ধরনের জৈবসার ব্যবহার করতে পারবেন। তবে আপনারা উন্নত মানের ভার্মি কম্পোস্ট জৈবসার হিসেবে ব্যাবহার করতে পারেন, ভার্মি কম্পোস্ট সহজলভ্য। ভালো ভাবে পচানো গোবর, ভালো শাকসবজির জৈব সার হিসেবে অনেক ভালো কাজ করে।
দশ কেজি মাটির সঙ্গে চার কেজি যেকোন ভালো জৈব সার, দুই কেজি কনস্ট্রাকশনের সাদা অথবা লাল বালু, একমুঠ সরিষা খৈল গুড়ো, হাফমুঠ নীম খৈল গুড়ো, একমুঠ ছাই, হাফ মুঠ হাড়ের গুড়া (এর পরিবর্তে ডিমের খোসা ব্যবহার করতে পারেন। দারুন কাজ করবে সার হিসেবে) খুব ভালো ভাবে মিশিয়ে ১৫ দিন ভিজা অবস্থায় রেখে দিতে হবে।
দুই সপ্তাহ পর সব মাটি আবার মিক্স করে শুকিয়ে ঝরঝরে হলে পটে ভরে চারা বসাতে পারবেন। এখানে কিছু উপাদান না পেলেও কাজ চালিয়ে নিতে পারবেন,আর কষ্ট হলেও ছাই জোগাড় করতে চেষ্টা করবেন।
এ ছাড়া ভাল ফলন পেতে নিয়মিত টবের মাটি পরিবর্তন করতে হয় । কিভাবে ছাদের বাগানের জন্য টবের মাটি পরিবর্তন করবেন ? লেখাটি পড়লে বিষয়টি আর বিস্তারিত জানবেন।
ক্যাপসিকামের চারা রোপন পদ্ধতি
টবের নিচে ছিদ্র না থাকলে অবশ্যই ছিদ্র করে নিবেন, আর ঐ ফুটোর উপরে ভাঙা টবের টুকরো বা ছোট নুরি বা ইটের টুকরো দিয়ে ঢেকে তারপর মাটি ভরে চারা বসাবেন।
প্রথমে বীজগুলো ১২ ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। বীজ গজাতে ৩-৪ দিন সময় লাগে। বীজ বপনের ৭-১০দিন পর চারা ৩-৪ পাতা বিশিষ্ট হলে ৯-১২ সে.মি. আকারের টবে স্থানান্তর করতে হবে।
পরে টব ছায়াযুক্ত স্থানে স্থানান্তর করতে হবে, যাতে প্রখর সূর্যালোকে এ বং ঝড় বৃষ্টি আঘাত হানতে না পারে। উল্লেখ্য যে, অক্টোবর মাস হচ্ছে বীজ বপনের উত্তম সময়।
ক্যাপসিকামের রোগ-বালাই
ক্যাপসিকাম বা মিষ্টি মরিচে কিছু পোকামাকড় ও রোগের আক্রমণ হয়ে থাকে। এগুলোর মধ্যে আছে জাবপোকা. থ্রিপস পোকা, লালমাকড়, এ্যানথ্রাকনোজ রোগ, ব্লাইট রোগ ইত্যাদি।
এসব রোগের আক্রমণ হলে নিকটস্থ কৃষিকর্মীর সাথে পরামর্শ করে অনুমোদিত বালাইনাশক প্রয়োগ করতে হবে।
ক্যাপসিকাম ফসল তোলা
মিষ্টি মরিচ সাধারণত পরিপক্ক সবুজ অবস্থায় লালচে হওয়ার আগেই গাছ থেকে উঠানো যায়।