নরম শাঁস ও মিষ্ট গন্ধ যুক্ত গোলাপি বর্ণের ড্রাগন ফল খেতে অনেক সুস্বাদু । ড্রাগন ফল ভিটামিন সি, মিনারেল পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ এবং ফাইবারের উৎকৃষ্ট উৎস।
ড্রাগন ফ্রুট গাছ ক্যাকটাস সদৃশ্য এবং ছোট গোলাকার ফলের ভিতরের অংশ সাধারনত লাল ও সাদা বর্ণের হয়ে থাকে।
উপকারী সুস্বাদু ড্রাগন আমাদের দেশের ফল নয়। ড্রাগন ফলের আদি নিবাস আমেরিকায়। কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ড্রাগন ফলের চাষ হয়ে থাকে।
আমাদের দেশের মাটি এবং পরিবেশ ড্রাগন ফল চাষের উপযোগী। বাড়ির চিলেকোঠা বা ছাদে অথবা ঘরের বারান্দায় অথবা বাড়ির আঙ্গিনায় বা উঠোনে এই বিদেশী ফলের চাষ করতে পারেন।
আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় কিভাবে আপনার বাড়িতে ড্রাগন ফল চাষ করবেন।
ড্রাগন ফলের কাটিং স্থাপনের সময়:
সাধারণত সারা বছরেই ড্রাগন ফল চাষ করা যায়।সেক্ষেত্রে মোটামুটি শক্ত প্রজাতির গাছ হওয়ায় প্রায় সব ঋতুতেই চারা রোপন করতে পারেন।
ছাদে ড্রাগন ফল চাষ করে ভালো ফলন পেতে এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর মাসে চারা রোপন করতে হবে।
কিভাবে ড্রাগন ফলের টব/মাটি তৈরি করবেন ?
সব ধরনের মাটিতেই ড্রাগন ফল চাষ করা যায়। জৈব পদার্থসমৃদ্ধ বেলে-দোঁআশ মাটিই ড্রাগন চাষের জন্য উত্তম।
শুরুতে বেলে দোআঁশ মাটি, গোবর, টি,এস,পি, পটাশ সার, একসাথ করে টব বা ড্রামের মধ্যে পানি দিয়ে রেখে দিতে হবে ১০-১২ দিন ।
এর পর এই মাটি কিছুটা খুচিয়ে দিতে হবে এবং এই অবস্থায় ৪ অথবা ৫ দিন রেখে দিতে হবে। মাটি যখন ঝুরঝুরে হবে তখন একটি কাটিং এর চারা উক্ত টবে রোপন করতে হবে ।
কিভাবে টবের মাটি তৈরি করবেন বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন।
ড্রাগন ফলের সেচ ও পরিচর্যা
ড্রাগন ফল গাছে তেমন একটা রোগ বালাইয়ের আক্রমন দেখা যায় না । পারিপার্শ্বিক অন্যান্য যত্ন নিয়মিত নিতে হয়।
চারা লাগানোর পর ড্রাম টি রোদ যুক্ত স্থানে রাখুন।
ড্রাগন ক্যাকটাস জাতীয় গাছ বলে চাষে খুব বেশি পানি দিতে হয়না। চারায় পানি দেয়ার সময় লক্ষ্য রাখুন যেন গোড়ায় পানি না জমে।
ড্রামের ভিতরের বাড়তি পানি সহজেই বের করে দেবার জন্য ড্রামের নিচের দিকে ৪ থেকে ৫ টি ছিদ্র করে দিন মাটি ভরাট করার পুর্বেই।
ড্রাগন গাছের ডালপালা লতার মত হওয়ার কারনে গাছের হালকা বৃদ্ধির সাথে সাথেই খুঁটির সাথে বেঁধে দিবেন এতে করে গাছ সহজেই ঢলে পরবেনা।
ফল সংগ্রহঃ
ড্রাগন ফলের কাটিং বা চারা রোপনের ১২ মাস থেকে ১৮ মাস বয়সে ফল সংগ্রহ করা যায়। গাছে ফুল ফোঁটার মাত্র ৩৫-৪০ দিনের মধ্যেই ফল খাওয়ার উপযুক্ত হয়। প্রতি কেজি ফলের মূল্য প্রায় ৫০০-৭০০ টাকা।
ড্রাগন ফল গাছের পোকামাকড় দমন ও বালাইনাশক/কীটনাশকের ব্যবহারঃ
অনেক সময় ড্রাগন গাছে মূল পচা, কান্ড ও গোড়া পচা রোগ দেখা যায়।
এছাড়াও কখন কখন ও এফিড ও মিলি বাগের আক্রমণ দেখা যায়।
বাচ্চা ও পূর্ণ বয়স্ক পোকা গাছের কচি শাখা ও পাতার রস চুষে খায়, ফলে আক্রান্ত গাছের কচি শাখা ও ডগার রং ফ্যাকাশে হয়ে যায় ও গাছ দূর্বল হয়ে পড়ে।
রোগ নিয়ন্ত্রনে সুমিথিয়ন/ডেসিস/ম্যালাথিয়ন ইত্যাদি ঔষধের গায়ে লেখা অনুসারে নিয়ে পানিতে ভালভাবে মিশিয়ে স্প্রে করে সহজেই এ রোগ দমন করা যায়।
ড্রাগন ফলের ব্যবহারঃ
সুস্বাদু ড্রাগন ফল ফ্রিজে রেখে ঠাণ্ডা খেতে পারেন ।
ফলকে ২/৪ টুকরা করে চামচ দিয়ে কুরে এর শাঁস খাওয়া যায়।
খোসা ছাড়িয়ে ছোট ছোট টুকরো করে কেটে কাঁটাচামচ দিয়ে খাওয়া যায়।
অনুচ্ছেদটি লিখেছেন
আজনাবী সুলতানা নীলা
বি এস ইন এগ্রিকালচার, এম এস ইন এগ্রোফরেসট্রি & এনভাইরনমেন্ট
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়