বীজের ডিলার লাইসেন্স দেয় বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি)। এই বিএডিসির নাটোর জেলার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে ঘুষ নিয়ে লাইসেন্স দেবার। এই অভিযোগ প্রতিষ্ঠানের সহকারী পরিচালকের (বীজ) বিরুদ্ধে। জেলার ১৭ জন বীজ ব্যবসায়ী নাটোর জেলা প্রশাসকের বরাবর লিখিতভাবে এ অভিযোগ করেন। এক ব্যবসায়ীর কাছে একজন সরকারি কর্মকর্তা ঘুষ চেয়েছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফাঁস হয়েছে সেই ফোনালাপ।
বিএডিসি নাটোর জেলা সূত্র জানায়, বীজ বিতরণ বিভাগ গত ২ আগস্ট বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য বীজ ডিলার লাইসেন্স নবায়ন ও নতুন বীজ ডিলার নিয়োগের। আবেদনের শেষ সময় ছিল গত ৩০ সেপ্টেম্বর। লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেন ১৬৫ জন বীজ ব্যবসায়ী। সকল কিছু যাচাই–বাছাই করে সহকারী পরিচালকের সুপারিশে বিএডিসির বীজ বিতরণ বিভাগের লাইসেন্স সরবরাহ করবে।
কিন্তু ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, নির্ধারিত সময়ের এক দিন আগেই লাইসেন্স সরবরাহ করা হয়েছে। বিশেষ করে নাটোরের অপেশাদার ১১০টি প্রতিষ্ঠানকে লাইসেন্স সরবরাহ করেছে বলে অভিযোগ। রোববার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এ–সংক্রান্ত লিখিত অভিযোগ জমা দেন জেলার ১৭ জন বীজ ব্যবসায়ী। অভিযোগটি গ্রহণ করেন জেলা প্রশাসক শামীম আহম্মেদ।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, মোটা অঙ্কের উৎকোচের বিনিময়ে অপেশাদার নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানকে লাইসেন্সের জন্য সুপারিশ করেছেন। এই সুপারিশ করেন বিএডিসি নাটোর জেলার সহকারী পরিচালক (বীজ) মোহাম্মদ শাহজাহান। তিনি প্রকৃত বীজ ব্যবসায়ীদের লাইসেন্সের জন্য সুপারিশ করেননি ঘুষের টাকা না দেওয়ায়।
ফা্স হয়েছে ফোনালাপ
এ ছাড়াও বিএডিসির রাজশাহী বিভাগীয় কার্যালয়ের যুগ্ম পরিচালক (বীজ) দেলোয়ার হোসেনের পক্ষ থেকে ঘুষ চাওয়ার অভিযোগ রয়েছে। তার পক্ষে সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তা হেদায়েতুল্লাহ খোকন বীজ ব্যবসায়ীদের কাছে ফোন করে ঘুষ দাবি করেন। নাটোরের বড়াইগ্রামের একজন ব্যবসায়ীর কাছে তাঁর ঘুষ চাওয়ার ফোনকল রেকর্ড রয়েছে বলে তাদের দাবি। ব্যবসায়ীদের কাছেও এ রেকর্ড সংরক্ষিত আছে বলেও ব্যবসায়ীরা তাঁদের অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেন। রেকর্ডটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইতিমধ্যেই ছড়িয়ে পড়েছে। এ বিষযে হেদায়েতুল্লাহ খোকনের মুঠোফোনে চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
অভিযোগের সূত্র ধরে নাটোর শহরের নিচাবাজারের মেসার্স এষা এন্টারপ্রাইজের খোঁজ করলেও প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। এর স্বত্বাধিকারী আরিফ খান জানান তার বড় ভাই নাটোর জেলা বিএডিসি বীজ ডিলার সমিতির সভাপতি আসিফ খান। ডিলারশিপের লাইসেন্সটি তিনি করেছেন, প্রতিষ্ঠানের কথাও তিনিই জানেন। জেলার অধিকাংশ নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানকে ডিলার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সরেজমিনে ঘুরেও কোনো প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি।
বিএডিসি সহকারী পরিচালক (বীজ) মোহাম্মদ শাহজাহান অবশ্য সকল অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, তাঁর একার পক্ষে জেলার সব ডিলারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে যাচাই–বাছাই করা সম্ভব হয়নি। সেকারণে প্রায় সব আবেদনকারীর আবেদনে সুপারিশ করেছেন তিনি। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ১১০ জন ব্যবসায়ীকে মনোনীত করেছেন। ঘুষের বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না বলে দাবি করেন তিনি কারও কাছ থেকে ঘুষ নেননি।
জেলা প্রশাসক শামীম আহম্মেদ জানান তিনি একটি অভিযোগ পেয়েছেন,তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।