
উত্তরাঞ্চলের কৃষিপ্রধান জেলা গাইবান্ধায় প্রতিদিন হাজার হাজার কৃষি শ্রমিক মাঠে ঘাম ঝরাচ্ছেন—কখনো প্রখর রোদে, কখনো হঠাৎ বৃষ্টির ভেজায়। এখানকার প্রচলিত একটি প্রবাদ—“মুই হনু কামলা, সারা দিন কাম দিলে, ভাত এক গামলা”—এখনো যেন হুবহু বাস্তব চিত্র। তাদের কঠোর পরিশ্রমে দেশের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত হলেও নিজেরাই রয়েছেন মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত।
জেলার ৫৫ হাজারের বেশি কৃষি শ্রমিক দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে কাজ করছেন। কিন্তু এই মজুরি দিয়ে চলা যেন এক অসম্ভব লড়াই। আরও উদ্বেগজনক হচ্ছে, নারী শ্রমিকরা পুরুষদের সমান কাজ করলেও পান বৈষম্যমূলক কম মজুরি। ক্ষেতের ফসল তোলা, আগাছা পরিষ্কার, সার প্রয়োগ—সবখানেই তারা দক্ষ, কিন্তু প্রকৃত ন্যায্য পারিশ্রমিক থেকে থেকে যাচ্ছেন বঞ্চিত। অনেক ক্ষেত্রেই নারী শ্রমিকরা পুরুষদের তুলনায় এক-তৃতীয়াংশ পর্যন্ত কম মজুরি পান।
এই বৈষম্যের পেছনে রয়েছে সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি, দর কষাকষির ক্ষমতার অভাব এবং সংগঠনের দুর্বলতা। কৃষকরা নিজেরাও অনেক সময় আর্থিক সংকটে থাকায় শ্রমিকদের যথাযথ মজুরি দিতে ব্যর্থ হন। অন্যদিকে, মধ্যস্বত্বভোগীরা কৃষিপণ্য ও শ্রমের উভয় দিক থেকেই মুনাফা লুটে শ্রমিকদের ঠকাচ্ছে।
জাতীয় কৃষক-ক্ষেতমজুর সমিতি এবং বিভিন্ন নারী অধিকার সংগঠন দাবি জানাচ্ছে—কৃষি শ্রমিকদের জন্য নির্ধারিত ন্যায্য মজুরি, স্বাস্থ্যসেবা, সুনির্দিষ্ট কর্মঘণ্টা এবং সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। বিশেষত নারী শ্রমিকদের মর্যাদা রক্ষায় চাই সচেতনতা, সংগঠিত উদ্যোগ এবং কার্যকর আইনগত সুরক্ষা।
মে দিবসে যখন শিল্প খাতের শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে আলোচনা হয়, তখন প্রশ্ন উঠে—কৃষি শ্রমিকদের কথা আমরা কতটা বলি? তাদের অধিকার নিশ্চিত না হলে দেশের কৃষি ব্যবস্থা এবং খাদ্যনিরাপত্তা গভীর সংকটে পড়তে পারে।