বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) এর গবেষকরা দেশে ধানের জিন পরিবর্তনে সফল হয়েছেন। ক্রিসপার ক্যাস-৯ পদ্ধতি ব্যবহার করে তারা এই সফলতা পেয়েছেন। ব্রি’র বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন ক্রিসপার ক্যাস-৯ পদ্ধতি ব্যবহার করে সুগন্ধী ও রোগ প্রতিরোধী ধান পাওয়া যাবে। সেই সাথে মাজরা ও বাদামি ঘাসফড়িং (কারেন্ট পোকা) প্রতিরোধী জিন ঢুকিয়ে নতুন জাতের ধানের উদ্ভাবন করা সম্ভব হবে।
জিন পরিবর্তনের মাধ্যমে নতুন ধানের জাত উদ্ভাবন করা সম্ভব
ক্রিসপার ক্যাস-৯ পদ্ধতি মূলত ফসলের জিন পরিবর্তনের একটি আধুনিক ও বিতর্কমুক্ত একটি প্রযুক্তি।
ব্রি সূত্রে জানা যায়, বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরে ফসলের জাত উদ্ভাবনে ইনট্রুডাকশন, ক্রসিং ও সিলেকশন, হাইব্রিডাইজেশন, মিউটেশন ইত্যাদি পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন।
এরপর উদ্ভাবিত হয় জেনেটিক্যাল মডিফাইড ক্রপস (জিএমও) প্রযুক্তি।
কিন্তু সারাবিশ্বে এসব প্রযুক্তির পক্ষে-বিপক্ষে চলছে আলোচনা-সমালোচনা।
এসকল দিক থেকে অত্যন্ত আধুনিক এবং বিতর্কমুক্ত ক্রিসপার ক্যাস-৯ প্রযুক্তিটি।
২০২০ সালে জার্মানির বিজ্ঞানী ইমান্যুায়েল চার্পেনিয়ার ও আমেরিকার জেনিফার দোদনা এ প্রযুক্তি উদ্ভাবনের জন্য রসায়নে নোবেল পুরস্কার পান।
সেই থেকে ফসলের জাত উন্নয়নে কৃষি বিজ্ঞানীদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয় এই প্রযুক্তি।
২০২০ সালের শুরুতে বাংলাদেশে এই প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণা শুরু হয়।
ব্রি’র উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা কীটত্ত্ববিদ ড. মো. পান্না আলীর নেতৃত্বে একদল বিজ্ঞানী শুরু করেন তাদের গবেষণা।
সম্প্রতি তারা সফলও হয়েছেন বলে ব্রি সূত্র জানায়।
এই বিজ্ঞানী দল সুগন্ধি ও পোকা প্রতিরোধী বৈশিষ্ট্য সন্নিবেশ করে ধানের ২৪টি গাছ পান।
সুগন্ধি চালের বিশাল বাজার রয়েছে মধ্যপ্রাচ্যে
কীটত্ত্ববিদ ড. পান্না আলী জানান, তারা সুগন্ধি চাল এবং মাজরা ও বাদামি ঘাসফড়িং পোকা প্রতিরোধী ধানের জাত উন্নয়নে কাজ করে চলেছেন।
সুগন্ধি চালের ফলন প্রচলিত জাতগুলোর চেয়ে অনেক কম।
যার কারণে সুগন্ধি ধানের জাত চাষ করতে চায় না আমাদের দেশের কৃষকরাও।
কিন্তু তার দেয়া তথ্যানুসারে, সুগন্ধি চালের দাম বাণিজ্যিকভাবে অনেক বেশি।
তিনি আরও বলেন মধ্যপ্রাচ্যে এই চালের বিশাল বাজার রয়েছে।
তা ছাড়া কৃষকরা প্রায় ১০-১৮ ভাগ ফলন হারান মাজরা ও কারেন্ট পোকার কারণে।
কৃষকদের প্রতিবছর এই পোকা দমনে প্রচুর পরিমাণ রাসায়নিক কিটনাশক ব্যবহার করতে হয়।
স্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য যেটি মারাত্মক হুমকিস্বরূপ।
এসব চিন্তা থেকেই ধান ও এর জিন নিয়ে গবেষণা শুরু করেন গবেষকরা।
ড. পান্না আলী জানান, দীর্ঘ প্রচেষ্টায় পাওয়া গেছে সুগন্ধি ও পোকা প্রতিরোধী ২৪টি গাছ।
বর্তমানে ধানের শীষগুলো কিছু কিছু করে পাকতে শুরু করেছে।
এর বীজ আগামী কয়েক বছরের মধ্যে পৌঁছে দেয়া সম্ভব হবে।
এ সফলতায় আমারা দারুণ আনন্দিত ও উজ্জিবীত।’
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবির।
তিনি জানান, প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত উচ্চ ফলনশীলসহ বিভিন্ন প্রকার ধানের ১০৬টি জাত উদ্ভাবন করেছে ব্রি।
এবার মুজিববর্ষে এসে তাদের সফলতার ঝুলিতে যুক্ত হয়েছে নতুন জাত।
জিন পরিবর্তনের মাধ্যমে সুগন্ধি ও পোকা প্রতিরোধী ধানের জাত উদ্ভাবন ব্রি’র একটি যুগান্তকারী সফলতা বলে মনে করেন মহাপরিচালক।