ভোলায় কৃষি উপকেন্দ্রের জমি দখল করে করা হচ্ছে বিভিন্ন স্থাপনা। জেলার দৌলতখান উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অধীন বাংলাবাজার কৃষি উপকেন্দ্রের জমি দখল করে তৈরি হচ্ছে দোকান। শুধু তাই নয়, চলাচলের পথ এমনকি সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করা হচ্ছে এটি দখল করে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এ ঘটনায় থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছে। কিন্তু এরপরও গত সোমবার রাতে সেখানে প্রাচীর নির্মাণ শুরু হয়। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে ওই কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়। সেখানে সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয়ের সার্ভেয়ার মাপজোক করেন গতকাল বৃহস্পতিবার।
দৌলতখানের উত্তর-জয়নগর ইউনিয়নের মধ্য-জয়নগর গ্রামে বাংলাবাজার কৃষি উপকেন্দ্রের ওই জমির অবস্থান।
‘বাংলাবাজার কৃষি-উপকেন্দ্র’ নামে একটি বহুতল ভবন ভোলা-চরফ্যাশন সড়কের পাশে নির্মাণ করা হচ্ছে।
ভবনটির নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০২০ সালের মাঝামাঝি সময়ে।
আরও দুটি পরিত্যক্ত ভবন আছে নির্মাণাধীন ভবনের পেছনে।
যেগুলো ‘বীজ-ওষুধের ঘর’ নামে পরিচিত ছিল একসময় এলাকার কৃষকদের কাছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, পরিত্যক্ত ভবন দুটির পূর্ব দিকে কৃষি বিভাগের সীমানা পিলার আছে, পেছনের অংশে।
এর পাশেই দেয়া আছে টিনের বেড়া।
রাতের আধারে শুরু করেন নির্মাণকাজ
স্থানীয় মাকসুদ খান ও তাঁর লোকজন ওই বেড়া দিয়েছেন বলে জানা যায়।
আগে থেকেই সড়কের পাশে তাঁরা সাত-আটটি দোকান তৈরি করে ভাড়া দিচ্ছেন।
এখন তাঁরা দখল করেছেন পশ্চিম পাশের সড়ক ও বাংলাবাজারের দিকের জমি।
সীমানাপ্রাচীর তুলছেন জমির মাঝ বরাবর।
প্রায় সাড়ে ৪ শতাংশ জমি তারা দখল করেছন।
জানা যায়, নতুন করে সীমানাপ্রাচীর নির্মাণের কাজ শুরু হয় ১২ অক্টোবর।
এরপর কৃষি বিভাগ ১৫ অক্টোবর থানায় জিডি করে।
পরে ওই নির্মাণকাজ বন্ধ করা হলেও গত সোমবার রাতে আবার তা শুরু করেন মাকসুদ খান।
এ ছাড়া শামীম কাজী নামের এক ব্যক্তির বহুতল ভবন দক্ষিণ সীমানায় রয়েছে।
তিনিও তারা আগের সীমানাপ্রাচীর ভেঙে প্রায় ১ শতাংশ জমি দখল করে আছেন।
লম্বালম্বি ভাবে বালু ফেলে কৃষি বিভাগের জমি দখল করেছেন ওই ব্যাক্তি।
ভবনের দেয়ালের সঙ্গে উত্তর-দক্ষিণ বরাবর টিনের চালা তুলেছেন।
কৃষি বিভাগের জমির সীমানা পিলার ভাঙার অভিযোগ আছে তাঁর বিরুদ্ধে।
শামীম কাজী অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করে জানান যে ১৯৯৬ সালের এক সালিসে হাঁটার জন্য সরু একটি পথ দেওয়া হয়েছে।
সেই পথে হাঁটা যায় না বিধায় তা প্রশস্ত করার জন্য বালু ফেলেছেন।
তিনি জানান কৃষি বিভাগ যদি জমি পায়, তবে তিনি জমি ছেড়ে দেবেন
সড়কের পাশে প্লাস্টিক সরঞ্জামের ব্যবসা করেন জসিম উদ্দিন। তিনি জানান যে দোকান ভাড়া নিয়ে ব্যবসা করছেন তিনি। আগে সালেম দফাদার ভাড়া নিলেও জমির নতুন দাবিদার মাকসুদ খান ভাড়া নেন।
জোর করে দখল করছেন পরিত্যক্ত জমি
কয়েকজন ব্যবসায়ীর সাথে কথা হয়।
তারা জানান, ডোবা-নালা ও পরিত্যক্ত ছিল কৃষি বিভাগের সিড সেন্টারের সামনের জমি।
সে সময় যে যেভাবে পেরেছেন দখল করে দোকান তুলেছেন।
এতে কৃষি বিভাগও বাধা দেয়নি।
মাকসুদ খান সরকারি এসব জমির মালিকানা দাবি করছেন জমি ভরাট হয়ে যাবার পর।
অথচ এলাকাবাসী কয়েক দশক ধরে এই জমি কৃষি বিভাগের বলেই জেনে এসেছে।
বরাবরের মত রাতের আঁধারে সীমানাপ্রাচীর তোলার অভিযোগ অস্বীকার করেন মাকসুদ খান।
বরং পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, কৃষি বিভাগের জমি ৩১ নম্বর দাগে হলেও তারা ৩ নম্বর দাগের জমি দখল করতে চাইছে।
তিনি অবশ্য আরও জানান যে ইউএনও সকল কাগজপত্র নিয়ে বসার জন্য ডাকলেও তিনি তার চাচার আসার অপেক্ষা করছেন।
বাংলাবাজার কৃষি উপকেন্দ্রের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন।
তিনি বলেন, গতকাল দুপক্ষের উপস্থিতিতে জমি পরিমাপ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে রবি বা সোমবারের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়া হবে সহকারী কমিশনারের কার্যালয় থেকে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভোলা কার্যালয়ের উপপরিচালক আবু এনায়েতউল্যাহ।
তিনি বলেন, সেখানে ৩৩ শতাংশ জমি রয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের।
নিয়মিত ওই জমির খাজনা দেওয়া হচ্ছে ১৯৭৬ সাল থেকে।
দখলদার সরকারি জমিতে মার্কেট করার জন্য জোর করে তা অন্য দাগে সরাতে চাইছে।