কাঁঠালের বাম্পার ফলনেও কৃষকের মাঝে হতাশা
জাতীয় ফল কাঠালের তুলনাই চলেনা। গ্রামাঞ্চলে বিশেষ করে মুড়ির সাথে কাঠাল খুবই জনপ্রিয় ও ঐতিহ্যবাহী একটি খাবার । একসময় গ্রামে যেখানে কাঠালের আধিক্য থাকতো সেখানেই গ্রীষ্মকালীন সময়ে কাঠাল ছিল সকালের খাবারে বাধ্যতামূলক। কেবল ফল হিসেবেই নয়। কাঁচা কাঠাল তরকারী হিসেবেও খাওয়া হয়। এর স্বাদ অন্যরকম হয় বিধায় অনেকের কাছে এর তরকারি খুব প্রিয়। সেই সাথে কাঠালের বিচি ও বিচির ভর্তাও খুব পছন্দের খাবার।
কাঁঠালে নানান পুষ্টিগুণে পুরোপুরি ভরপুর । কাঁঠালের কোয়াতে থাকে আইশ এবং ৪-৫ কোয়া থেকে ১০০ কিলো ক্যালরি খাদ্যশক্তি পাওয়া যায়। কাঁঠালের হলুদ রঙের কোষ হচ্ছে ভিটামিন ‘এ’ সমদ্ধ। ২-৩ কোয়া কাঁঠাল আমাদের এক দিনের ভিটামিন ‘এ’ এর চাহিদা পূরণ করে।
কাঁঠাল ফল অপুষ্টিজনিত সমস্যা রাতকানা এবং রাতকানা থেকে অন্ধত্ব প্রতিরোধ করার জন্য খুবই উপযোগী । শিশু, কিশোর, কিশোরী এবং পূর্ণ বয়সী নারী-পুরুষ সব শ্রেণির জন্যই কাঁঠাল খুবই উপকারী ফল। গর্ভবতী এবং যে মা বুকের দুধ খাওয়ান তাদের জন্য কাঁঠাল দরকারি ফল।
কাঁঠালের উপকারিতা লেখে শেষ কর যাবে না শরীরে ভিটামিন ‘এ’ এর অভাব দেখা দিলে ত্বক খসখসে হয়ে যায়। শরীরের লাভণ্যতা হারিয়ে ফেলে এজন্য কাঁঠাল প্রতিরোধ করতে পারে। কাঁঠালের মধ্যে ভিটামিন ‘সি’এবং কিছুটা ‘বি’ আছে যা শরীরের ত্বক পূর্ণ গঠনে কাজ করে। পাকা কাঁঠাল যেমন উপকার রয়েছে, তেমনি কাঁচা কাঁঠালও কম উপকারী নয়। কাঁচা কাঁঠাল আমিষ ও ভিটামিন সমদ্ধ তরকরি। পাকা কাঁঠালের বিচি বাদামের মতো ভেজে যেমন খাওয়া যায়, তেমনি তরকারি হিসেবেও খাওয়া যায়।
১০০ গ্রাম কাঁঠালের বিচিতে ৬.৬ গ্রাম আমিষ ও ২৫.৮গ্রাম শর্করা আছে। সবার জন্যই আমিষসমদ্ধ কাঁঠালের বিচি উপকারী। কাঁঠাল ফলটি খেয়ে ভিটামিন ‘এ’ এর ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব।
আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবছর কাঠালের বাম্পার ফলন ঘটেছে মাগুরা জেলায়। তবে ক্রেতার অভাবে বিক্রয় করতে পারছেন না তারা। ফলে যথাযথ দাম পাচ্ছেন কৃষকেরা। যার জন্য দায়ী করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি। এই পরিস্থিতিতে না কেবল মানুষ শারীরিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, সাথে সাথে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মানুষের ব্যবসায়ীক অবস্থান।
বাম্পার ফলনের কারণে এবছর বাজারে ব্যাপকভাবে পাকা কাঁঠাল উঠেছে মাগুরার বিভিন্ন বাজারে। কিন্তু করোনা ভাইরাস পরিস্থিতির কারনে বিক্রয়ই করতে পারছেন না কেউ। সেজন্য দাম অনেক পড়েগেছে, কৃষকেরা তাই হতাশ। হিসাব অনুযায়ী জেলার এক হাজার হেক্টর জমিতে কাঁঠাল বাগান আছে, আর বিভিন্ন বাড়িতে ব্যাক্তিগত মিলিয়ে লক্ষাধিক কাঁঠালগাছ। প্রচুর উৎপাদন হওয়া স্বত্তেও প্রতিশত কাঁঠাল এর বাজারদর প্রকারভেদে ১-৩ হাজার টাকার মধ্যে।
এই কাঁঠাল দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিবছর পাঠানো গেলেও, এবছর সেটি আটকে গেছে। এর মধ্যে কিছু চালান গেলেও তার দাম অনেক কম। গত বছর যে কাঠাল ১০০ টাকা দরে বিক্রয় হয়েছে এবছর তা ৪০-৪৫ টাকা দরে বিক্রয় হচ্ছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা, যা পাইকারী বাজারে আরও কম। অনেক পাইকারই আসছে না বাজারে। তাই অবিক্রিত থাকছে জাতীয় ফল কাঁঠাল । এক্ষেত্রে সরকারী পদক্ষেপ খুবই প্রয়োজনীয়।