রাজশাহীর গোদাগাড়ীর চাষিরা দেশে টমেটোর চাহিদা পূরণের একটি বিশাল অংশের জোগান দেন। এই চাষিদের বিরুদ্ধে হরমোন ব্যবহারের অভিযোগ ছিল। মৌসুমের আগাম বাজার ধরতে হরমোনের ব্যবহারে কাঁচা টমেটো তারা পাঁকাতো। এর অন্যতম কারণ হিসেবে প্রাকৃতিকভাবে টমেটো পাকতে পাকতে বাজার পড়ে যাওয়াকে ধরা হত। যার কারণে গোদাগাড়ীর চাষিদের একটা বড় অংশ এখন কাঁচা টমেটো বিক্রি করেন। অবশ্য কাঁচা টমেটোর বাজার ভাল যাচ্ছে এখন। যা ঢাকার কারওয়ান বাজারে মাঠ থেকে সরাসরি চলে যাচ্ছে। কাঁচা টমেটোর বাজার ভাল থাকায় চাষিরাও খুব খুশি।
চাষিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, হরমোন ব্যবহার করা খুবই বিড়ম্বনার ব্যাপার। অন্যদিকে কাঁচা টমেটোর বাজার ভাল যাচ্ছে এখন।
আর সে কারণেই তাঁরা এখন কাঁচা টমেটো বিক্রি করতে শুরু করেছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এবার গোদাগাড়ী উপজেলায় টমেটো চাষ হয়েছে ৩ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে।
চলতি মৌসুমে টমেটো উৎপাদনের ৭৬ হাজার ২৫০ মেট্রিক টন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।
ভোক্তাদের মধ্যে সচেতনতা বেড়েছে
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শারমিন সুলতানা।
তিনি জানান, বর্তমানে ভোক্তাদের মধ্যে সচেতনতা বেড়ে গেছে।
এমনকি ভোক্তাদের রুচিতে পরিবর্তন এসেছে।
বর্তমানে হরমোন দিয়ে পাকানো টমেটোর বদলে পরিপক্ব কাঁচা টমেটোই খেতে চান।
টমেটো এখন আর কেবল সালাদেই ব্যবহার হয় না। কাঁচা টমেটো পুরোপুরি সবজি হিসেবে এখন ব্যবহৃত হচ্ছে।
২০০৯ সালের দিকে গোদাগাড়ীর তৎকালীন কৃষি কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন সিরাজুল ইসলাম।
এখানকার চাষিদের টমেটোতে হরমোন ব্যবহারের বিরুদ্ধে সচেতন করার জন্য তখন প্রচারপত্র বিলি করেছিলেন।
তিনি বলেন, খাদ্যের উপাদান পরিমাণমতো পাওয়া যায় শুধু পরিপক্ব টমেটোতেই।
টমেটোতে থাকা ভিটামিন সি তাপে ও বাসি হলে নষ্ট হয়ে যায়।
কচি টমেটোতে এমনিতেই পরিমাণমতো পুষ্টিমান তৈরি হয় না।
তা ছাড়া মানবদেহের জন্য হরমোন ক্ষতিকর।
সরেজমিনে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় গিয়ে দেখা যায়, বস্তায় ভরে কাঁচা টমেটো ট্রাকে তোলা হচ্ছে।
একজন টমেটোর ব্যাপারী পিয়ারুল ইসলাম।
তিনি জানান, ১৭০ মণ টমেটো কিনেছেন তিনি ঢাকার কারওয়ান বাজারে নেওয়ার জন্য।
তার ভাষ্যমতে, রাসায়নিকমুক্ত কাঁচা টমেটোর চাহিদা তৈরি হয়েছে বর্তমানে।
বাড়তি চাহিদার কারণেই গোদাগাড়ী থেকে কাঁচা টমেটো কিনে থাকেন তিনি।
স্থানীয় আড়তদার হালিম রেজা।
তিনি বলেন, তাঁর আড়ত থেকে প্রতিদিন ঢাকায় টমেটো যাচ্ছে ১০০ থেকে ২০০ মণ পর্যন্ত।
এই গ্রাম থেকে সপ্তাহে সব মিলিয়ে ৫০০ মণের বেশি টমেটো ঢাকায় যায়।
এলাকার চাষি আবদুল আজিজ আড়াই বিঘা জমিতে চাষ করেছিলেন টমেটো।
তিনি জানান, প্রায় ৩২ হাজার টাকা খরচ হয়েছে টমেটো চাষে। ইতিমধ্যেই তাঁর টমেটো উৎপাদন খরচ উঠে গেছে বলে তিনি জানান।