সংরক্ষিত আলু সাধারণত নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে বের করে নেওয়া হয় ঠাকুরগাঁওয়ের হিমাগারগুলোতে। তবে এখনো অর্ধেক আলুই এ বছর বের হয়নি। হিমাগার কর্তৃপক্ষ চুক্তির শর্ত অনুযায়ী ১৫ নভেম্বরের মধ্যে সব আলু বের করে নিতে নোটিশ দিয়েছে। এমন অবস্থায় হিমাগারে রাখা আলু নিয়ে বিপাকে চাষিরা, কি করবে ভেবে পাচ্ছেন না।
নিজের জমিতে আবাদ করা আলু শহরের শাহী হিমাগারে সংরক্ষণ করেছেন ঢোলারহাট এলাকার কৃষকরা।
কিন্তু হিমাগারের ফটকে টাঙানো নোটিশ দেখে কৃষকরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন।
তারা বলেন, এখন বাজারে আলুর দাম দিন দিন পড়তে শুরু করেছে।
হিমাগারের মেশিন এ অবস্থায় বন্ধ করে দিলে তাঁরা বিপদে পড়বেন।
একসঙ্গে ব্যাপক পরিমাণ আলু বেরহলে আলুর বাজারে আরও ধস নামবে।
আর যদি রেখে দেয়া হয় তবে আলু পচে নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
আলু চাষের জন্য ঠাকুরগাঁও বিখ্যাত।
বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ীরা এখান থেকে আলু কিনে দেশের অন্য জেলায় নিয়ে যান।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ঠাকুরগাঁও কার্যালয় সূত্র জানায় যে, ২০২০ সালে ২৫ হাজার ৩৫ হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ হয়েছিল জেলায়।
৬ লাখ ৭২০ মেট্রিক টন আলু উৎপাদন হয়েছিল সেবার।
সেবার বাজারে আলুর দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাবার কারণে লাভের ফলে কৃষক আলু চাষে ঝুঁকে পড়েন।
এ বছর কৃষকরা আলুর আবাদ করেন ২৮ হাজার ৫১৫ হেক্টর জমিতে ।
সেখান থেকে ফলন এসেছে ৬ লাখ ৯৮ হাজার ৬১৭ মেট্রিক টন।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ঠাকুরগাঁওয়ে সরকারি-বেসরকারি সব মিলিয়ে ১৫টি হিমাগার রয়েছে।
এসব হিমাগারের ১ লাখ ৪০ হাজার মেট্রিক টন আলু সংরক্ষণ করার যায়।
হিমাগারে প্রতি বস্তা আলু সংরক্ষণে ১৮০ থেকে ২০০ টাকা নেওয়ার কথা ছিল।
কিন্তু হিমাগারের মালিকেরা আলুর ব্যাপক ফলন দেখে ৩২০ টাকা দাবি করেন।
এতে আলুচাষি ও ব্যবসায়ীদের ক্ষেোভ ও মানববন্ধন এর প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপে প্রতি বস্তা আলু সংরক্ষণে ২৫০ টাকা বেঁধে দেওয়া হয়।
অন্যদিকে বাজারে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ বেশি থাকায় আলুর দাম পড়তে থাকে।
এ অবস্থায় গত জুলাই মাস পর্যন্ত হিমাগারে রেখে দেওয়া আলু একেবারেই বের করার সুযোগ হয়নি কৃষক-ব্যসায়ীদের।
ব্যাপক সরবরাহ থাকায় বাজারে আলুর দামও আর বাড়েনি।
এ অবস্থায় মালিকেরা অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে হিমাগারের ফটকে নোটিশ টাঙিয়ে দিয়েছেন।
ওই নোটিশে বলা হয়, চুক্তি অনুসারে ১৫ নভেম্বর হিমাগারে আলু সংরক্ষণের শেষ তারিখ।
হিমাগারের সব কুলিং মেশিন ওই দিনই বন্ধ করে দেওয়া হবে।
উল্লিখিত সময়ের মধ্যে হিমাগার থেকে আলু বের করতে চাষি ও ব্যবসায়ীদের অনুরোধ করেছেন হিমাগার মালিকেরা।
এ অবস্থায় আলু নষ্ট হয়ে গেলে কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না বলেও তারা এতে উল্লেখ করেছেন।
আলুচাষি ও ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাসিবুল ইসলাম।
তিনি অভিযোগ করেন যে হিমাগারে আলু সংরক্ষণের ভাড়া নিয়ে আন্দোলনের প্রেক্ষিতেই মালিকেরা তাদের আক্রোশ মেটাচ্ছেন।
তার থেকেই ১৫ নভেম্বরে হিমাগারের কুলিং মেশিন বন্ধ করে দিতে জেদ ধরেছেন তারা।
তিনি আরও জানান হিমাগারে সংরক্ষণ করা বীজআলু নষ্ট হলে আগামী মৌসুমে বীজ আলুর সংকটে আবাদ কম হবে।
এতে দিন শেষে হিমাগারের মালিকদেরই ক্ষতি হবে বলে তিনি জানান।
ঠাকুরগাঁওয়ে শাহী হিমাগারের চারটি ইউনিট আছে।
সেসব হিমাগারে ৩২ হাজার মেট্রিক টন আলু এ বছর সংরক্ষণ করা গেছে।
শাহী হিমাগারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দেলোয়ার হোসেন।
তিনি বলেন, এবার বিপুল পরিমাণ আলু অন্য সব বছরের তুলনায় হিমাগারে পড়ে আছে।
হিমাগার থেকে ৪৬ ভাগ আলু বের হয়েছে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত।
আলু সংরক্ষণের চুক্তিতেই শর্তটি উল্লেখ করা আছে বলে তিনি জানান।
এই সময়ের মধ্যে কৃষক-ব্যবসায়ীরা আলু যদি তুলতে না আসেন তাহলে হিমাগারের মালিকেরা লোকসানে পড়বেন।
ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসক মো. মাহবুবুর রহমান জানান যে, বিষয়টি তিনি অবগত হয়েছেন।
সমস্যাটি সমাধানে দ্রুত উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে তিনি আশ্বস্ত করেন।