আলুর দর পড়ে গেছে উত্তরাঞ্চলে। রংপুরের তারাগঞ্জ ও বদরগঞ্জের অনেক চাষি গত মৌসুমে উৎপাদিত আলু হিমাগারে রেখেছিলেন। চাষের জন্য আলু কেনা, জমি তৈরি, পরিচর্যা ও সবশেষে হিমাগারে রেখেছেন। বেশি লাভের আশায় একজন চাষি এগুলো করেন। কিন্তু বর্তমানে বাজারে আলু বেচে এর অর্ধেক টাকাও উঠছে না।
দুই উপজেলার চাষি ও হিমাগারের মালিকদের সঙ্গে কথা হয়।
তারা জানান, উৎপাদন ও হিমাগার ভাড়াসহ প্রতি বস্তা আলুর জন্য চাষির খরচ হয়েছে সাড়ে আট শ টাকা।
কিন্তু পাইকারি বাজারে সে আলুর দাম ৪০০ টাকা।
অর্থাৎ প্রতি কেজি আলু মাত্র ৮ টাকা দামে বিক্রয় হচ্ছে।
অন্যদিকে বছরের এই সময়টায় শাক–সবজির চাহিদা বেশি থাকার কারণে সেগুলোর ভালো দাম পাচ্ছে কৃষকরা।
আলু তোলার মৌসুমের সময় প্রতি কেজি আলুর দাম ১৩ থেকে ১৪ টাকা ছিল।
বেশি দামের আশায় আলু হিমাগারে সংরক্ষণ করেন অনেক কৃষক।
তারাগঞ্জের একজন চাষি মাহুবার হোসেন জানান, আলুর বীজের দাম গত মৌসুমে বেশি ছিল।
তার এক একর জমিতে আলুর চাষ করতে ৭৯ হাজার টাকা খরচ করেন।
১৩০ বস্তা আলু যখন তোলেন আলুর দাম ছিল ১৩ টাকা কেজি।
কিন্তু দাম পড়ে যাওয়ায় এখন তিনি দুশ্চিন্তায় আছেন।
উপজেলা কৃষি বিভাগ জানায়, গত মৌসুমে তারাগঞ্জে ৪২০০ হেক্টর ও বদরগঞ্জে ৩২৬৫ হেক্টরে আলুর চাষ করা হয়।
দুটি উপজেলার ছয়টি হিমাগারে প্রায় আট লাখ বস্তা আলু রাখা হয়।
এখনো এখানে প্রায় ছয় লাখ বস্তা মজুত আছে।
কৃষি বিভাগের কর্মকর্তা ও আলুচাষিরা বলেন গত বছর এই সময়ে প্রতি বস্তা আলু চাষিরা ১৮০০ টাকা থেকে ২০০০ টাকায় বিক্রি করেছিলেন।
২০১৪ সালে আলু হিমাগারে রেখে লাভ করেছিলেন তাঁরা।
চাষিরা মাঝের বছরগুলোতে আলুর চাষ করে উৎপাদন খরচ তুলতে পারেননি।
অন্যদিকে আলু রেখে হিমাগারমালিকদের কাছে থেকে ঋণ নিয়েছিলেন অনেকে।
এখন তারা তাদের আলু নিতে চাইলে সে ঋণ শোধ করতে হবে।
হিমাগার মালিকেরা জানান প্রতি বস্তার বিপরীতে চাষিদের ২৫০ টাকা করে ঋণ দেওয়া হয়েছিল।
কিন্তু বাজারে আলুর দাম পড়ে যাবার কারণে লোকসানের ভয়ে চাষিরা হিমাগারে আসছেন না।
তারাগঞ্জ উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা ঊর্মি তাবাসসুম।
তিনি বলেন, আলুর দাম বেশি ছিল গত বছর।
সে কারণে চড়া দামে বীজ কেনায় আলুর উৎপাদন খরচ বেশি পড়েছিল।
গত বছরের তুলনায় এবার বৃষ্টিপাত কম হয়।
এতে শাকসবজির আবাদ ভালো হয়েছে। সে কারণে আলুর তুলনায় শাক–সবজির চাহিদাও অনেক বেশি।