সুনামগঞ্জ জেলায় চলতি বছর চার দফা বন্যার পরও এবার আমনের আশানুরূপ ফলন হয়েছে। এখন বিভিন্ন এলাকায় পাকা ধান কাটছেন কৃষকরা। তবে বন্যার কারণে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী এবার আমন চাষ করা সম্ভব হয়নি। বন্যার কারণে বারবার চাষ করে আর্থিক ক্ষতির মুখে আছেন কৃষকরা। অন্যদিকে কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, আমনের জাতীয় গড় ফলনের ছাড়িয়ে সুনামগঞ্জে ফলন হচ্ছে হেক্টর প্রতি ৩.১১। আমনের জাতীয় গড় ফলন নির্ধারিত হয়েছে হেক্টর প্রতি ২.৭৯ টন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় এ বছর ৮১ হাজার ৩৮৭ হেক্টর জমিতে আমনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। এর মধ্যে আবাদ হয়েছে ৮১ হাজার ১৯৫ হেক্টর জমি। গতকাল বুধবার (২ ডিসেম্বর) পর্যন্ত জেলায় ৩৫ ভাগ জমির আমন ধান কাটা হয়ে গেছে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ফলনও আশানুরূপ হয়েছে। তবে বন্যার কারণে একাধিকবার বীজতলা তৈরি ও ক্ষেতে ধান লাগানোর কারণে খরচ বেড়েছে কৃষকের।
কৃষকরা জানিয়েছেন, জেলায় প্রথম দফা বন্যা হয় ২৬ জুন থেকে। দ্বিতীয় দফা বন্যায় হয় ৯ জুলাই থেকে। ৩য় দফা বন্যা হয় ১৯ জুলাই থেকে। চতুর্থ দফা বন্যায় সেপ্টেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে। চারবারের বন্যাতেই আমনের ক্ষয়ক্ষতি হয়। যে কারণে বারবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন কৃষক। এই ক্ষতি সহজে কাটিয়ে ওঠা সম্ভব নয় বলে জানান কৃষকরা।
সদর উপজেলার বড়ঘাট গ্রামের কৃষক সাজ্জাদুর রহমান বলেন, ‘আমার সইত্তর বছরের জীবনে ইলা চাইরবার পাচবার বন্যা দেখছিনা। আমন গিরস্থি খরছিলাম টাইন্যা টুইন্যা। বারবার পানি আইয়া বুরাইয়া নষ্ট খইরা গেছেগি ধান। আমরার আমন ধান অইছেনা ইবার। খালি লস আর লস’ ।
কুতুবপুর গ্রামের কৃষক সমিরুল ইসলাম জানান, বন্যায় আমনের ক্ষতি হয়েছে। কয়েকবার চাষ করতে হয়েছে জমি। কিছু ধান চাষ হলেও আমাদের এলাকার বেশিরভাগ জমি নষ্ট হয়ে গেছে। তাই আমনচাষীরা এবার ক্ষতিগ্রস্ত। তবে যারা শেষ পর্যন্ত জমি চাষ করতে পেরেছিলেন তাদের ফলন ভালো হয়েছে।
তাহিরপুর উপজেলার উত্তরবড়দল ইউনিয়নের রাজাই গ্রামের এন্ড্রু সলোমার বলেন, আমার চার একর জমির সব আমনধান এবার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যেটুকু অবশিষ্ট ছিল তা থেকে ভালো ফলন হয়নি। তাই আমনচাষে এ বছর বড় ক্ষতি হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মো. ফরিদুল হাসান বলেন, বন্যায় এ বছর আমনের কিছু ক্ষতি হয়েছে। তবে লক্ষ্যমাত্রায় তেমন বড় প্রভাব পড়েনি। ফলনও হয়েছে আশানুরূপ। জাতীয় গড় ফলনের চেয়ে আমাদের সুনামগঞ্জে ফলন হয়েছে ভালো। এ পর্যন্ত ৩৫ ভাগ জমির ধান কাটা শেষ হয়ে গেছে। আগামী ১৫ দিনের মধ্যেই সম্পূর্ণ আমন ধান কাটা শেষ হবে।