
চা সর্বাধিক জনপ্রিয় একটি পানীয় | চাহিদার দিক থেকে চা-এর চাহিদা আকাশছোঁয়া তা নতুন কিছু নয়| বাংলাদেশ নয়, পশ্চিমবঙ্গেরও অর্থকরী ফসল এই চা | চা চাষ বেশ গুরুত্বপূর্ণ ও লাভজনক ফসল বটে | আমরা অনেকেই কৌতুহলি থাকি চা এর চাষ করার বিষয়ে। কিন্তু জানিনা কিভাবে চাষ করা হয়। তাই আজকে আমরা জেনে নিব কিভাবে চায়ের চাষ হয়।
কেমন জলবায়ু প্রয়োজন:
অন্যসব উদ্ভিদের মতই চায়ের চাষে প্রধানত নিয়ামক জলবায়ু। তাপমাত্রা ২৬ থেকে ২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস বিশিষ্ট উষ্ণ ও আর্দ্র পরিবেশ চায়ের খুব উপযুক্ত।
বৃষ্টিপাত ২০০০ মিলিমিটারের উপরে প্রয়োজন হয়। বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেশি প্রায় ৭০-৯০% থাকতে হয়। এমন পরিবেশ চা চাষের জন্য আদর্শ । দিনের আলো অন্তত ১২ ঘণ্টার কাছাকাছি থাকতে হবে |
মাটির ধরণ কেমন হতে হয়
অম্লধর্মী (পিএইচ ৪.৫-৫.৮) হতে হবে। বুনট বেলে দোআঁশ এবং পুষ্টিমান সন্তোষজনক হওয়া জরুরি।জমি নির্বাচনের সময় খেয়াল রাখতে হবে। চা গাছ সামান্য জলাবদ্ধতাও সইতে পারে না।
বীজ বপন করা হয় কিভাবে
চা বীজ সংগ্রহ করে বীজতলায় ত্রিভুজ দূরত্ব পদ্ধতিতে ২০ সেন্টিমিটার অন্তর লাগাতে হয়। বীজ বা কাটিং লাগানোর আগেই মাটি নেমাটোডমুক্ত থাকতে হয়।
বীজতলায় ছায়া থাকতে হবে। বাঁশের চাটাই দিয়ে ছায়ার ব্যবস্থা করা যায়। রাসায়নিক সার যেমন ইউরিয়া, টিএসপি ও এমওপি ২:১:২ অনুপাতে প্রয়োগ করা হয়। নার্সারিতে নিয়মিত জল সেচ এর ব্যবস্থা থাকতে হবে।
কিভাবে রোপণ করা হয়
৩০-৩৫ সে.মি গভীরতা বিশিষ্ট গর্ত করে রোপন করতে হবে। এটা কাটিং এর ক্ষেত্রে। বীজ চারার জন্য গর্তটি হবে ৪০-৪৫ সে.মি. গভীরতার। গর্তে সুস্থ সবল চারা রোপণ করতে হবে।
প্রতিটি গর্তের জন্য ২ কেজি পচা গোবর সার, ৩০ গ্রাম টিএসপি ও ১৫ গ্রাম এমপি মিশিয়ে মাটি তৈরি করতে হবে।
মাটির আর্দ্রতা সংরক্ষণের জন্য রোপণের পর চারার গোড়া থেকে ৭ -১০ সেন্টিমিটার দূরে এবং ৮-১০ সেন্টিমিটার উঁচু করে মালচিং করতে হবে।
বাগানের ভেতরে কিছু স্থায়ী গাছ লাগাতে হয়। এরা ঝড় বৃষ্টি এবং প্রখর সূর্যতাপর হাত থেকে চা গাছকে রক্ষা করে।
সার প্ৰয়োগ করা হয় কিভাবে:
চির সবুজ চা গাছেরপাতাই ফসল হিসাবে গন্য হয়। তাই ফসলের জন্যে সার খুবই গুরুত্বপূর্ণ |তবে বেশি পরিমাণে ফসফরাস ও পটাশ সার ব্যবহার করা হয়।
হেক্টর প্রতি ১৮ থেকে ৩৬ কেজি নাইট্রোজেন ব্যবহার হয় কম বয়সী চা-গাছে।মাটির অম্লত্ব রক্ষায় অ্যামোনিয়াম সালফেট ব্যবহার করা হয়।
গাছ ছাটাই করার পরে ২২৫-৩০০ কেজি অ্যামোনিয়াম সালফেট প্রয়োগ করা হয় যখন কুড়ি ধরে।
কিভাবে পরিচর্যা করা হয়:
একটা গুরুত্বপূর্ন কাজ চা চাষে গাছ ছাঁটাইকরণ । এতে গাছকে একটা নির্দিষ্ট উচ্চতায় রাখা হয়। গাছের অঙ্গজ বৃদ্ধিতে সাহায্য করে ছাটাইকরণ।
রোপণের সাড়ে ৩ বছর পর থেকেই ছাঁটাই কাজ শুরু হয়। এতে নতুন নতুন শাখা বের হয়। প্রথম ছাঁটাইকরণে গাছ ৩০ সেঃমিঃ উপরে কেটে নেয়া হয়।
প্রতি ঋতুর শেষে ১০ সেঃমিঃ করে ছাঁটাই করা হয়। ছাঁটাই করতে করতে চা গাছের উচ্চতা ১.২ মিটার হয়ে যায়। তখন শ্রমিকেরা দাঁড়িয়ে পাতা সংগ্রহ করতে পারেন।