দেশের একমাত্র মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন কেন্দ্র হালদা নদী। নদী দূষণ কম এবং মা মাছ ধরতে নিষেধাজ্ঞার কারনে পেয়েছে পুরাতন চিরচেনা রুপ। ডিম ছেড়েছে রুই, কাতলা, মৃগেল সহ বিভিন্ন প্রজাতির মা মাছ। এই ডিমের পরিমান হালদা নদীতে এক যুগের মধ্যে সর্বোচ্চ। বর্ষা কালে বৃষ্টি হওয়া শুরু করলে ডিম ছাড়তে শুরু করে মা মাছ। বৃষ্টি হবার পর নদীর পানি ঘোলা হতেই ডিম দেবার উপযুক্ত পরিবেশ। অতিতের সব রেকর্ড ভেংগে এবার ২৫ হাজার ৫ শত ৩৬ কেজি ডিম সংগ্রহ করা হয়েছে যা হালদা নদীতে এক যুগের মধ্যে সর্বোচ্চ মাছের ডিম সংগ্রহ।
হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমিন জানান বলেন, হাটহাজারী উপজেলার এশিয়ান পেপার মিল ও ১০০ মেগাওয়াট পিকিং পাওয়ার প্ল্যান্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।আমি যোগদানের পর গত একবছরে ১০৯ বার হালদা নদীতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনা করা হয়। তিনি আরও জানান, গত একবছরে হালদা নদীতে অভিযানে ২ লাখ ২১ হাজার মিটার ঘেরাজাল জব্দ করা হয়েছে।জালগুলো দিয়ে নদী থেকে মা মাছ শিকার করা হতো প্রতিদিন। এছাড়া অভিযানে বালু উত্তোলনকারী ৯টি ড্রেজার ও ১৫টি ইঞ্জিনচালিত নৌকা ধ্বংস করা হয়েছে। সাড়ে তিন কিলোমিটারেরও বেশি বালু উত্তোলনে ব্যবহৃত পাইপ ধ্বংস করা হয়েছে। জব্দ করা হয়েছে ১ লাখ ১৫ হাজার ঘনফুট বালু। গত এক বছের সুফল এবার ডিম সংগ্রহকারীরা পেয়েছে বলে আমি মনে করি।তবে এবার গত বছরের চেয়ে বেশি ডিম বেশি পেয়েছে। তিনি জনান,ডিম সংগ্রহের পর থেকে শুরু হয়েছে রেণু ফোটানোর কর্মযজ্ঞ। ব্যস্ত সময় পার করছেন বংশ পরম্পরায় অভিজ্ঞ ডিম সংগ্রহকারীরা। দ্রুত বড় হয় বলে হালদার পোনার চাহিদা দেশের বিভিন্ন স্থানে মাছচাষিদের কাছে বেশি।ডিম ছাড়ার পর মা-মাছগুলো খুবই দুর্বল হয়ে পড়ে। এ সময় যাতে কেউ মাছশিকার করতে না পারে সে লক্ষ্যে কঠোর নজরদারির ব্যবস্থা করেছে প্রশাসন।
সকাল ৭:৩০ পানিতে ডিম দেখার সঙ্গে সঙ্গে উৎসব শুরু হয় মাছের ডিম আহরনের। বছরের চৈত্র থেকে আষাঢ় মাসের (এপ্রিল থেকে জুনের মধ্যে) মধ্যে পূর্ণিমা-অমাবস্যার পাহাড়ি ঢল নামে হালদা নদীতে। বজ্রসহ বৃষ্টি হলে এবং তাপমাত্রা অনুকূলে থাকলে ডিম ছাড়ে কার্প জাতীয় মাছ। এবার অমাবস্যা তিথি থাকলেও বর্ষণ এবং পাহাড়ি ঢল ছাড়াই মা মাছ ডিম দিয়েছে। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে ডিম ছাড়া শুরু করে মা মাছ। বেলা বাড়ার সাথে সাথে ডিম দেওয়ার পরিমান ও বাড়তে থাকে।
ডিম সংগ্রহকারীদের জানান, শুক্রবার সকাল থেকে বিকাল সাড়ে ৩ টা পর্যন্ত হালদা নদীর নাপিতের ঘাট, সিপাহির ঘাট, আমতুয়া, হাটহাজারী গড়দুয়ারা,রামদাশ মুন্সিরহাট, সোনাইর মুখ, আবুরখীল, খলিফার ঘোনা, মোবারকখীল, মগদাই, মদুনাঘাট খলিফার ঘোনা, পশ্চিম গহিরা অংকুরী ঘোনা, বিনাজুরী, উরকিচর ঘাট এবং কাগতিয়ার আজিমের ঘাট এলাকায় শত শত নৌকা নিয়ে ডিম সংগ্রহ কারীরা নদীতে জাল ফেলে ডিম সংগ্রহ করেছেন। শুক্রবার রাত থেকে নৌকা নিয়ে নদীতে নেমেছেন শত শত ডিম সংগ্রহকারীরা।
উল্লেখ যে, ২০১৯ সালে প্রায় ৭ হাজার কেজি, ২০১৮ সালে ২২ হাজার ৬৮০ কেজি, ২০১৭ সালে মাত্র ১ হাজার ৬৮০ কেজি, ২০১৬ সালে ৭৩৫ কেজি, ২০১৫ সালে ২ হাজার ৮০০ কেজি ডিম সংগ্রহ করা হয়েছিল হালদা থেকে।