আমাদের দেশে দীর্ঘদিন ধরে বাণিজ্যিকভাবে মাছ চাষ হচ্ছে। মাছ চাষ করে অনেক বেকার যুবক স্বাবলম্বী হচ্ছেন। লাভজনক হবার কারণে দিন দিন মাছ চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে মাছ চাষকে আরও বেশি লাভজনক করতে হলে কেবল প্রাকৃতিক খাদ্য হলে হবে না। পাশাপাশি মাছকে অতিরিক্ত সম্পূরক খাদ্য দিতে হবে। তবে সম্পূরক খাদ্য সমূহ সংরক্ষণ করতে হয় খুব সাবধানে ও যত্নের সাথে। তাই আসুন আজকে সঠিক উপয়ে সম্পূরক খাদ্য সমূহ সংরক্ষণ করতে হয় তা জেনে নিই।
আমাদের দেশে সম্পূরক খাদ্য হিসাবে সচরাচর ব্যবহার করা হয় চালের কুঁড়া, গমের ভুসি, তিলের খৈল, সরিষার খৈল, ফিশমিল, গরু-ছাগলের রক্ত ও নাড়ি-ভুঁড়ি ইত্যাদি।
এ ছাড়া জলজ উদ্ভিদ যেমন,- কচুরিপানা, ক্ষুদিপানা ইত্যাদি কেও ব্যবহার করা হয় সম্পূরক খাদ্য হিসেবে।
চাষিরা এসব উপাদান প্রয়োজন মাফিক মিশিয়ে তৈরি করেন মাছের খাদ্য।
তাছাড়া মাছের খামারে কারখানায় তৈরি বাণিজ্যিক খাদ্যও ব্যবহার করা যায়।
তবে মাছ চাষের পুকুরে ব্যবহার করা খাবারের কারণে গুণগতমান ভালো হওয়া আবশ্যক।
সুস্থসবল পোনা ও মাছ পাওয়া যাবে না খাবারের গুণগতমান ভালো না হলে।
অন্যদিকে সহজেই রোগাক্রান্ত হবে মাছ এবং মৃত্যুহার বেড়ে যাবে মাছের।
আবার আশানুরূপ হবে না মাছের বৃদ্ধিও।
তাই যথাযথ নিয়মে খাদ্য উপকরণ বা তৈরি খাদ্য সংরক্ষণ ও গুদামজাতকরণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
তাই এসকল বিষয়ের দিকে নজর দিতে হবে।
মাছের খাদ্যে আর্দ্রতার পরিমাণ ১০% এর বেশি থাকা যাবে না।
এতে ছত্রাক বা পোকা-মাকড় জন্মাতে পারে।
বাতাসে আপেক্ষিক আর্দ্রতা ৬৫% এর বেশি থাকা যাবেনা।
আবার খাদ্যের পুষ্টিমান নষ্ট হয় অতিরিক্ত তাপমাত্রায়।
আবার ২৬-৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় পোকামাকড়সমূহ জন্মাতে পারে।
খাদ্য সংরক্ষণের সঠিক নিয়ম, সঠিক উপায়
শুকনো খাদ্য, খাদ্য বায়ুরোধী পলিথিনের বা চটের বস্তায় সংরক্ষণ করতে হবে।
অথবা সংরক্ষণ করতে হবে কোনো মুখ বন্ধ পাত্রে ঠান্ডা ও শুষ্ক জায়গায়।
এই খাদ্য পুনরায় মাঝে মাঝে রোদে শুকিয়ে নিতে হবে।
খাদ্য রাখতে হবে পরিষ্কার, শুকনো, নিরাপদ এবং পর্যাপ্ত বাতাস চলাচলের ঘরে।
গুদাম ঘরে সংরক্ষিত খাদ্য মেঝেতে রাখা যাবে না।
অন্তত ১২ থেকে ১৫ সে.মি. উপরে কাঠের পাটাতনে রাখতে হবে।
খাদ্যের বস্তার নিচে এবং আশপাশে ছাই ছিটিয়ে দিতে হবে।
তবে এই খাদ্য গুদামে তিন মাসের বেশি রাখা যাবে না।
এর মধ্যেই এটি ব্যবহার করে ফেলতে হবে।
খাদ্য সংরক্ষণ করতে হবে ইঁদুর বা অন্যান্য প্রাণীর উপদ্রবমুক্ত স্থানে।
কীটনাশক ও অন্যান্য বিষাক্ত পদার্থের সাথে খাদ্য রাখা যাবে না।
খাদ্য তৈরির জন্য তাজা ছোট মাছ হলে সাথে সাথেই খাওয়াতে হবে।
তা নাহলে রেখে দিতে হবে রেফ্রিজারেটরে।
তৈলাক্ত ও চর্বিযুক্ত খাদ্য সমূহ নিম্ন তাপমাত্রায় কালো রঙের বা অস্বচ্ছ পাত্রে রেখে দিতে হবে।
ভিটামিন ও খনিজ লবণ রেফ্রিজারেটরে বাতাস এবং আলোকবিহীন পাত্রে রেখে দিতে হবে।
এভাবে মাছের খাদ্য সংরক্ষণ করলে মাছের খাদ্য ভালো থাকবে।