Tuesday, 11 February, 2025

সর্বাধিক পঠিত

কলার চারার নির্বাচন কৌশল ব্যাখ্যা কর

চাষির প্রশ্নCategory: কৃষি তথ্যকলার চারার নির্বাচন কৌশল ব্যাখ্যা কর
কামাল সরকার asked 15 hours ago

কলার চারার নির্বাচন কৌশল ব্যাখ্যা কর। কলার বাগান করতে কি কি পদক্ষেপ লক্ষনীয় ?

1 Answers
এগ্রোবিডি২৪ Staff answered 9 minutes ago

কলার চারার নির্বাচন কৌশল ও বাগান করার গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ

কলার চাষ বাণিজ্যিকভাবে অত্যন্ত লাভজনক, তবে ভালো ফলন পেতে সঠিক চারার নির্বাচন ও পরিচর্যা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিচে কলার চারা নির্বাচন ও বাগান করার পদ্ধতি বিস্তারিত ব্যাখ্যা করা হলো—


কলার চারার নির্বাচন কৌশল

ভালো কলার বাগান গড়ে তুলতে হলে উপযুক্ত জাতের ও স্বাস্থ্যকর চারা নির্বাচন করা জরুরি।

১. সঠিক জাত নির্বাচন:

কলার জাত মূলত দুই ভাগে বিভক্ত—

  1. দেশি জাত: যেমন সাগর কলা, কাঁঠালি কলা, চম্পা কলা, সবরি কলা।
  2. উন্নত জাত: যেমন গেন্ডারী, গ্র্যান্ড নাইন (G9), মালীভোগ, মনোহর, সিআইএম-১, কেবিএন-০১।

বাণিজ্যিকভাবে গ্র্যান্ড নাইন (G9) ও সাগর কলা বেশি লাভজনক।

২. চারার ধরন ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা:

কলার চারা মূলত ৩ ধরনের হয়ে থাকে—

  1. তলে চারা (Sword sucker): শক্ত ও ভালো শিকড়সহ বেড়ে ওঠে, দ্রুত ফল ধরে।
  2. পানি চারা (Water sucker): এটি দুর্বল হয়, ফলে কম উৎপাদন হয়।
  3. টিস্যু কালচার চারা: রোগমুক্ত, একই উচ্চতা ও ওজনের ফলন দেয়, বাণিজ্যিকভাবে ভালো।

বাণিজ্যিক চাষের জন্য তলে চারা বা টিস্যু কালচার চারা উত্তম।

৩. চারা সংগ্রহের সময় লক্ষণীয় বিষয়:

  • চারার উচ্চতা ২-৩ ফুট হলে ভালো।
  • চারা রোগমুক্ত, পাতা সবুজ ও শিকড় ভালোভাবে গঠিত কিনা নিশ্চিত করতে হবে।
  • চারা সংগ্রহের পর ছায়ায় রেখে ২-৩ দিন শুকিয়ে নেওয়া উচিত।
  • চারার গোড়ায় ফাঙ্গাস বা পচন যেন না থাকে।

 কলার বাগান করার গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ

১. উপযুক্ত জমি নির্বাচন ও প্রস্তুতি:

জমির ধরন:

  • উর্বর দোআঁশ বা বেলে দোআঁশ মাটি ভালো।
  • pH ৫.৫-৭ এর মধ্যে হলে উপযুক্ত।
  • জলাবদ্ধতা এড়াতে উঁচু জায়গা নির্বাচন করুন।

জমি প্রস্তুতির ধাপ:

  1. প্রথমে আগাছা ও আগের ফসলের অবশিষ্টাংশ পরিষ্কার করুন।
  2. ২-৩ বার গভীর চাষ দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করুন।
  3. প্রতি গর্তে চুন (২০০-২৫০ গ্রাম) ও জৈব সার (১০-১৫ কেজি) মিশিয়ে ১০-১৫ দিন রেখে দিন।
  4. পরে সার মিশ্রিত মাটি দিয়ে গর্ত ভরে চারা রোপণ করুন।

২. চারা রোপণের নিয়ম:

চারা রোপণের দূরত্ব:

  • সারিবদ্ধভাবে চারা লাগালে ৬-৮ ফুট দূরত্ব রাখতে হবে।
  • যদি বেশি ঘন করে লাগানো হয়, তাহলে গাছের পর্যাপ্ত জায়গা না পেলে ফলন কম হবে।

রোপণের সময়:

  • বর্ষার শুরুতে (জুন-জুলাই) বা শীতের শেষে (ফেব্রুয়ারি-মার্চ) লাগানো ভালো।
  • গ্র্যান্ড নাইন (G9) জাতের জন্য সারাবছরই রোপণ করা যায়।

৩. সার প্রয়োগ পদ্ধতি:

কলার গাছে বেশি পুষ্টি প্রয়োজন হয়, তাই সঠিক মাত্রায় সার দিতে হবে।

প্রতি গর্তে প্রাথমিক সার:

সারপরিমাণ (প্রতি গর্তে)
জৈব সার (গোবর/ভার্মি কম্পোস্ট)১০-১৫ কেজি
ইউরিয়া২৫০ গ্রাম
টিএসপি (ফসফেট)১৫০ গ্রাম
এমওপি (পটাশ)২০০ গ্রাম
চুন২০০ গ্রাম

সার প্রয়োগের নিয়ম:

  • প্রথম মাসে সারের ২৫% দিন।
  • ৩ মাস পর অন্য ২৫% প্রয়োগ করুন।
  • ৬ মাসে ফুল আসার সময় ৫০% সার দিন।
  • ফুল আসার পর পটাশ বেশি দিতে হবে, যাতে কলা বড় হয়।

৪. পানি ব্যবস্থাপনা ও পরিচর্যা:

  • শুষ্ক মৌসুমে সপ্তাহে ২-৩ বার পানি দিতে হবে।
  • বর্ষায় পানি নিষ্কাশনের জন্য ড্রেন (নালা) তৈরি করুন।
  • ফুল আসার সময় পর্যাপ্ত পানি নিশ্চিত করতে হবে।

মালচিং পদ্ধতি:
গাছের গোড়ায় খড়, শুকনো পাতা বা প্লাস্টিক দিয়ে ঢেকে দিলে মাটির আর্দ্রতা বজায় থাকে ও আগাছা কম হয়।


৫. রোগবালাই নিয়ন্ত্রণ:

সাধারণ রোগ ও প্রতিরোধ ব্যবস্থা:

রোগের নামলক্ষণপ্রতিরোধ
পানামা রোগ (ফিউজেরিয়াম উইল্ট)গাছ হলুদ হয়ে শুকিয়ে যায়চারা রোপণের আগে ট্রাইকোডার্মা বা চুন ব্যবহার
সিগাটোকা পাতা দাগপাতায় কালো দাগ পড়েপ্রতি ১৫ দিনে বোরোডক্স মিশ্রণ স্প্রে
গোঁড়া পচা রোগগোড়ায় ফাঙ্গাস ও পচন ধরেপ্রতি মাসে ২-৩ গ্রাম ট্রাইকোডার্মা প্রয়োগ

কীটপতঙ্গ দমন:

  • কলা গাছে ছত্রাকনাশক ও নিম তেল ব্যবহার করলে পোকার আক্রমণ কম হয়।
  • রাসায়নিক কীটনাশকের পরিবর্তে জৈব কীটনাশক (নিম, তেতুল পাতা) ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।

৬. ফল সংগ্রহ ও বাজারজাতকরণ:

ফসল সংগ্রহের সময়:

  • ফুল আসার ৭-৮ মাস পর কলা সংগ্রহ উপযুক্ত হয়।
  • বাজারজাত করার জন্য ৪০-৫০% পাকা অবস্থায় কলা সংগ্রহ করা ভালো।
  • কলা কাটার পর ২০-৩০ মিনিট রোদে শুকিয়ে প্যাকেটজাত করুন।

বাজারজাতকরণ কৌশল:

  • পাইকারি ব্যবসায়ীদের সাথে যোগাযোগ করুন।
  • স্থানীয় বাজার ছাড়াও সুপারশপ ও অনলাইন মাধ্যমে বিক্রির চেষ্টা করুন।
  • বিদেশে রপ্তানির জন্য মানসম্মত কলা উৎপাদন করতে হবে।

উপসংহার:

সঠিক জাত নির্বাচন, পরিচর্যা ও রোগবালাই ব্যবস্থাপনা করলে কলার চাষ অত্যন্ত লাভজনক হতে পারে। বাণিজ্যিক চাষের জন্য টিস্যু কালচার চারা ব্যবহার করলে ফলন বেশি হয় ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো থাকে। পরিকল্পিত চাষাবাদ ও বাজারজাতকরণের মাধ্যমে একজন কৃষক সহজেই সফলতা অর্জন করতে পারেন।

জনপ্রিয় লেখা

সাম্প্রতিক প্রশ্ন