ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে সূর্যমুখীর বাম্পার ফলন হয়েছে। উপজেলার প্রায় ২শ বিঘা জমিতে এবারই প্রথম সূর্যমুখীর চাষ শুরু করে এ সফলতা পেলেন কৃষকেরা।
জানা যায়, সরকারিভাবে বিনামূল্যে সূর্যমুখীর বীজ বিতরণ এবং উপ-সহকারি কৃষি অফিসারদের তত্ত্বাবধানে সূর্যমুখীর চাষ করা হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার রূপসী ইউনিয়নের ঘোমগাঁও গ্রামের কৃষক সিদ্দিকুল ইসলাম তোলা মিয়া, আবুল কালাম ও সিরাজুল ইসলাম আগে হাঁসের খামার করেছিলেন। এরপর শসা ও ভুট্টা। ধান পাট তো আছেই। এবার ৮০ শতাংশ জমিতে কৃষি পুনর্বাসনের আওতায় সূর্যমুখীর চাষ করেছেন।
কৃষক সিদ্দিকুল ইসলাম জানান, উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা সোহেল রানা তাকে সূর্যমুখী চাষের প্রতি উদ্বুদ্ধ করেন এবং ৫ কেজি সূর্যমুখীর বীজ দেন। এর সাথে একশ কেজি জৈব সার ও একশ গ্রাম বিষের একটি পট দেন। এতে উদ্বুদ্ধ হয়ে সিদ্দিকুলরা তিনভাই সূর্যমুখীর চাষ শুরু করেন। এরপর তারা আরো খরচ করেন ৪ হাজার টাকার কীটনাশক, ৬ হাজার টাকার টিএসপি, ডিএপি, ইউরিয়া ও পটাশ।
এছাড়া সূতা, তার ও বাঁশ বাবদ আনুমানিক ৩ হাজার টাকা খরচ করেছেন। মাত্র ২ হাজার টাকার শ্রমিক খাটিয়ে বাকি শ্রম নিজেরাই দিয়েছেন।
উপজেলা কৃষি অফিসার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, পৌষ মাসের শুরুর দিকে সূর্যমুখীর চাষ শুরু করতে হয়। এটা খুবই লাভজনক ফসল। ঠিকমত পরিচর্যা করলে মাত্র ১১০ দিনে এ ফসল ঘরে উঠানো যায়।
উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা সোহেল রানা বলেন, আমি নিয়মিত ব্লকে যাই এবং তাদের পরামর্শ দিয়ে আসছি। ওখানের মাটি অত্যন্ত উর্বর। আমার ধারণার চেয়েও বেশি ফলন হয়েছে।
কৃষক আবুল কালাম বলেন, আগে শুনছিলাম প্রতি হেক্টর জমিতে ১৬শ কেজি সূর্যমুখী বীজ ফলবে কিন্তু এখন ধারণা করা হচ্ছে, প্রতি হেক্টরে কমপক্ষে আড়াই থেকে ৩ হাজার কেজি বীজ ফলবে।
কৃষক সিদ্দিকুল বলেন, উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা মোঃ সোহেল রানা আমাদেরকে সবসময়ই পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করেছেন। কিন্তু তাঁর পরামর্শ মোতাবেক সব কাজ আমরা করতে পারিনি। এরপরও প্রচুর ফলন হয়েছে। এতে আমরা খুশি। সূর্যমুখী চাষে নানাবিধ সুফল রয়েছে। এর লাকড়ি বিক্রি করা যায়। এখান থেকে মধু সংগ্রহ করা যায়। এখানেই তেল উৎপাদনের ব্যবস্থা করতে পারলে আরো লাভবান হওয়া যেত। এ ব্যাপারে সরকারের সহযোগিতা প্রয়োজন।
আমাদের হিসেব মতে, ৮০ শতাংশ জমিতে ৯শ ৬০ কেজি বীজ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রতি কেজি বীজের বর্তমান বাজার মূল্য ১১০ টাকা। এতে বাজার মূল্য আসে ১ লাখ ৫ হাজার ৬শ টাকা। খরচ বাদে নব্বই হাজার টাকার বেশি লাভ থাকার কথা।
কৃষক সিরাজুল ইসলাম বলেন, এবার একেকটা গাছে ৩শ থেকে ৫শ গ্রাম ওজনী ফুল হয়েছে। প্রথমবার এর চাষ করাতে আমরা সার্বিক বিষয়গুলো বুঝে উঠতে পারিনি। ফলে অনেক গাছ ফুলের ভারে মাজা ভেঙে ঢলে পড়েছে। আশা করছি, আগামীতে এ ধরনের ভুল হবে না।
কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার মোঃ কামরুল হাসান ও উপ-সহকারি উদ্ভিদ সংরক্ষণ অফিসার দেলোয়ার হোসেন খান জানান, ফুলপুরে এবারই প্রথম ২শ বিঘা জমিতে সূর্যমুখীর চাষ করা হয়েছে। শুধু রূপসী ব্লকে নয় বরং ১০ ইউনিয়নের ২শ জন কৃষকের প্রত্যেকের জমিতেই সূর্যমুখির বাম্পার ফলন হয়েছে।