ছাদে লাউ চাষ অথবা হাইব্রিড লাউ চাষ যেভাবে লাউ চাষ করেন না কেন? লাউ চাষে ফলন বাড়াতে কৃত্রিম পরাগায়ন গুরত্বপূর্ন। লাউয়ের লতায় প্রচুর ফুল ধরলেও লাউ ধরে কম। তবে কিছু কৌশল জানা থাকলেও অধিকাংশ ফুলেই লাউ পাওয়া যাবে।
কেননা লাউ একলিঙ্গ এবং ভিন্নবাসী উদ্ভিদ হওয়ায় প্রাকৃতিক পরাগায়ন কম হয়। তাই কৃত্রিমভাবে পুরুষ ফুল এনে স্ত্রী ফুলের সঙ্গে মিলন ঘটাতে হয়।
লাউ চাষে ফলন বাড়াতে কৃত্রিম পরাগায়ন কৌশল
প্রতিদিন ভোরে সদ্যফোটা পুরুষ ফুল ছিঁড়ে পুংরেণুসমৃদ্ধ পুংকেশর রেখে পাপড়িগুলো ছিড়ে ফেলতে হয়। এরপর পুংরেণু স্ত্রী ফুলের গর্ভমুণ্ডে হালকাভাবে সামান্য একটু ঘষে দিতে হয়। এতে স্ত্রী ফুল নিষিক্ত হয়ে ফল ধরে।
একটি পুরুষ ফুলের পুংকেশর দিয়ে ৬-৭ টি স্ত্রী ফুলের গর্ভমুণ্ডে পরাগায়ন করা যায়। এজন্য একটি লাউয়ের মাচায় শতকরা ১০টি পুরুষ ফুল রাখতে হয়। এতে শতকরা ৯৫টি স্ত্রী ফুলে ফল ধরবে।
পুরুষ লাউ ফুল এবং স্ত্রী লাউ ফুল চেনার উপায়
পুরুষ লাউ ফুলঃ ফুলের বোঁটার অগ্রভাগে ফোটে। পাপড়ির গোড়ায় গর্ভাশয় থাকেনা। পাপড়ির মাঝখান দিয়ে বেড়ে যাওয়া পুংদন্ডে পাউডারের গুঁড়ার মত পুংরেণু থাকে।
পুংদন্ডের শীর্ষভাগে গর্ভমুন্ড থাকে না। শুধু বোঁটার অগ্রভাগে ফুটে থাকা ফুলগুলো পুরুষ ফুল।
লাউ এর স্ত্রী ফুলঃ ক্ষুদ্রাকৃতি লাউয়ের মত গর্ভাশয়ধারী ফুলগুলো স্ত্রী ফুল। গর্ভাশয়ের ওপর থেকে পাপড়ি থাকবে। পুংদন্ড থাকবে না। গর্ভদন্ড ছোট ও মোটা। গর্ভদন্ডে আঠালো পদার্থ থাকবে।
পুংরেণু এখানে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে আঠায় আটকে যায়। অনেকেরই ধারণা, শুধু স্ত্রী ফুলের এই গর্ভাশয় থাকলেই লাউ ধরবে। গর্ভমুণ্ডে পুরুষ ফুলের পুংরেণু না লাগা পর্যন্ত লাউ ধরবে না।
লাউ চাষের ফলন বাড়াতে কি করবেন ?
১. গর্ভাশয় ঝরে পড়াকে অনেকেই মনে করে কচি লাউ ঝরে পড়ে। আসলে যেসব স্ত্রী ফুল পুংরেণু দ্বারা নিষিক্ত হয় না সেগুলো ঝরে পড়ে। এজন্য কৃত্রিম পরাগায়ন করাতে হবে
এরপরেও ঝরে পড়লে গাছের গোড়ায় নিয়মিত পানি দিতে হবে। গাছপ্রতি ৫০ গ্রাম করে টিএসপি ও এমপি সার গাছের গোড়া থেকে ৬ ইঞ্চি দূর দিয়ে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিতে হবে
২. কচি লাউ পচে যাওয়ার কারণ হচ্ছে ফ্রুট ফ্লাই পোকা কচি লাউয়ে ক্ষত সৃষ্টি করে। এ ক্ষতে ব্যাকটেরিয়া আক্রমণ করে লাউ পচিয়ে ফেলে। এ পোকা হাত দ্বারা মারা যায়। ছাই দেওয়া যেতে পারে অথবা ডায়াজিনন বা ডাইমেক্রন বা নগস দিতে পারেন
৩. লাউ লতা খুব বড় হয় কিন্তু ফুল কম ধরে। এ জন্য জৈব সার কম দিতে হবে। টিএসপি ও এমপি সার সম্পূর্ণ মাত্রায় দিতে হবে। এছাড়াও গ্রোথ হরমোন স্প্রে করতে পারেন
৪. ফুলের মধ্যে পিঁপড়া আক্রমণ করলে ছাই বা সেভিন দিতে পারেন
৫. ইঁদুরের আক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য বিষটোপ বা ফাঁদ দিতে পারেন
অর্গানিক (জৈব) পদ্ধতির ফসল চাষ করুন। বিষমুক্ত খাবার উৎপাদন ও সরবরাহ করে নতুন প্রজন্ম কে বাচান।