
কক্সবাজারের প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন দীর্ঘদিন ধরে পরিচিত ছিল ‘নারিকেল জিনজিরা’ নামে। দ্বীপজুড়ে বিপুলসংখ্যক নারিকেল গাছ থাকায় এই নাম পেয়েছিল দ্বীপটি। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই চিত্র বদলে যাচ্ছে। বর্তমানে দ্বীপে নারিকেল গাছের সংখ্যা প্রায় ১২ হাজারে নেমে এসেছে। অথচ দুই দশক আগেও এই সংখ্যা ছিল প্রায় ২৫ হাজার।
স্থানীয়দের মতে, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, অনিয়ন্ত্রিত নির্মাণকাজ এবং নারিকেল গাছের পরিচর্যার অভাবে ক্রমেই কমছে গাছের সংখ্যা। পাশাপাশি সাদা মাছি বা হোয়াইট ফ্লাই নামের একটি পোকামাকড় গাছে আক্রমণ করে ফলন নষ্ট করছে। এতে অনেক গাছ মারা যাচ্ছে কিংবা ফলন অপ্রতুল হচ্ছে।
দ্বীপের স্থানীয় বাসিন্দা ও জনপ্রতিনিধিরা জানাচ্ছেন, বর্তমানে সেন্টমার্টিনে প্রায় ৪৩ হেক্টর জমিতে নারিকেল গাছ রয়েছে। কিন্তু সঠিক পরিচর্যার অভাবে এই সম্পদও আজ হুমকির মুখে। ইউপি সদস্য ছৈয়দ আলম জানান, “একসময় দ্বীপজুড়ে নারিকেল গাছের সমারোহ ছিল। এখন গাছের পাতা ও ফল পোকায় আক্রান্ত হয়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। স্প্রে বা প্রয়োজনীয় ওষুধ কিনে পরিচর্যা করার সামর্থ্য অনেকেরই নেই।”
তিনি আরও বলেন, “আমার বাড়িতে একসময় দাদার লাগানো ১৩০টি নারিকেল গাছ ছিল, এখন তা কমে প্রায় অর্ধেক হয়ে গেছে। সঠিক পরিচর্যার অভাবে নারিকেল গাছগুলো মারা যাচ্ছে বা ভেঙে পড়ছে।”
পর্যটন মৌসুমে নারিকেল ও ডাব বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন এমন অনেকেই এখন আয় হারাচ্ছেন। স্থানীয় বাসিন্দা নুরুল আলম জানান, “আগে পর্যটকদের কাছে ডাব বিক্রি করে ভালো আয় হতো। এখন পর্যটকও কম, নারিকেলও নেই। সাদা মাছির কারণে গাছ আক্রান্ত হয়ে ফলনও হচ্ছে না।”
২০২৩ সালে দ্বীপজুড়ে একযোগে স্প্রে করার উদ্যোগ নিয়েছিল টেকনাফ উপজেলা কৃষি বিভাগ। তবে কীটনাশকের প্রভাবে মানবস্বাস্থ্য ও পরিবেশের ঝুঁকির আশঙ্কায় তা বাতিল করা হয়। বর্ষাকালে পোকার উপদ্রব কিছুটা কমলেও তা স্থায়ী সমাধান নয়।
এ বিষয়ে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহেসান উদ্দিন বলেন, “সেন্টমার্টিনের নারিকেল গাছগুলো সাদা মাছির আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে—বিষয়টি জানার পরই কৃষি বিভাগকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।”
স্থানীয়রা মনে করছেন, এখনই যদি নারিকেল গাছ রক্ষায় সরকারি সহযোগিতা ও জনসচেতনতা তৈরি না হয়, তবে সেন্টমার্টিন ‘নারিকেল জিনজিরা’ নামটি হারিয়ে ফেলবে চিরতরে।