গবাদিপশুর খাদ্য দুগ্ধ এবং মাংস উৎপাদনের উভয় ক্ষেত্রে সমান গুরত্বপূর্ন। কিভাবে খাদ্যের খরচ কমানো যায় চাষিদের বিষয়ে বেশি লক্ষ রাখা প্রয়োজন। আজকের বিষয় সাইলেজ, গবাদিপশুর খামারে পুষ্টিকর খাবার নিয়ে।
গবাদিপশুর জন্য সাইলেজ তৈরী
একটি গবাদিপশুর খামারে উৎপাদনের জন্য প্রধানশর্ত হচ্ছে পুষ্টিকর খাবার দেওয়া। কিন্তু কম খরচে পর্যাপ্ত পুষ্টি সরবরাহ করা বাংলাদেশের খামারিদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। কিন্তু এই সমস্যা দূর করতে সাইলেজ (Silage) হতে পারে একটি বড় সম্ভাবনা।
সাইলেজ কি?
সাইলেজ হচ্ছে বাতাসের অনুপস্থিতিতে গাজন প্রক্রিয়ায় প্রস্তুতকৃত একটি খাদ্য সংরক্ষণ পদ্ধতি। এটি বিশ্বব্যাপী ব্যবহৃত একটি পদ্ধতি।
সাইলো (Silo)- সাইলেজ বানানোর জন্য যে কাঠামো দরকার হয় তাকে বলে। উন্নত দেশগুলোতে এবং বড় মাপের ফার্মে যেখানে প্রচুর পরিমাণ খাদ্য চাহিদা সেখানে টাওয়ার সাইলো (Tower silo) প্রস্তুত করা হয়। কিন্তু বাংলাদেশের জন্য পিট সাইলো (Pit silo) তৈরী করাই যুক্তিসংগত এবং কম খরচে তৈরী করা যায়।
কি কি উপকরন লাগে সাইলেজ তৈরিতে
সাইলেজ বানানোর জন্য প্রথমে ঘাস সংগ্রহ করতে হবে। সাইলেজের জন্য বেশি ব্যবহৃত ঘাস হচ্ছে
-নেপিয়ার,
-আলফাআলফা
-ভুট্টা ইত্যাদি।
ভুট্টা এবং নেপিয়ার একসাথে ব্যবহার করাই শ্রেয়। ঘাস এমন সময় সংগ্রহ করতে হবে যাতে আদ্রতা ৭০-৭৫% থাকে। এখন সমস্যা হলো এই আদ্রতা বুঝবেন কিভাবে। এর জন্য ঘাসগুলোকে ফুল আসার আগ মূহুর্তে কাটতে হবে। সাধারণত এই সময়েই আদ্রতা এই রেঞ্জে থাকে।
সাইলেজ তৈরির প্রস্তুতপ্রণালী
-ঘাস সংগ্রহের পর ঘাসগুলোকে ১-১.৫ ইঞ্চি আকারে কেটে নিতে হবে। এতে করে ব্যাকটেরিয়ার কাজ করার Surface area বৃদ্ধি পাবে ও সাইলেজ দ্রুত তৈরী হবে।
-এরপর একটি মিশ্রণ প্রস্তুত করতে হবে চিটাগুড় এবং পানি দিয়ে। ১০০ কেজি ঘাসের জন্য ৩ কেজি চিটাগুড় এবং ৩-৪ লিটার পানি দরকার হবে। চিটাগুড় কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ এবং এই কার্বোহাইড্রেট পরে অর্গানিক এসিডে রূপান্তর হবে যা সাইলেজ তৈরীর প্রধান কৌশল।
-এখন আসি আসল পরিশ্রমে। এক্ষেত্রে মাটিতে একটি গর্ত করতে হবে। গর্তের জন্য আসলে মাপ নেই। আপনার সুবিধামত গর্ত করবেন কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে গভীরতা যেনো এমন না হয় মাটির লেভেলের নিচে ঘাসের লেভেল হয়ে গেছে। মাটি ও ঘাসের লেভেল সমান থাকলে ভালো হয়।
এতে করে পানি ভিতরে প্রবেশের সুযোগ পাবেনা। গর্তের নিচে পলিথিন বিছাতে হবে। তারপর এর উপর ধাপে ধাপে কাটা ঘাস বিছাতে হবে। দুই ঘাপের মাঝে সেই চিটাগুড় এবং পানির মিশ্রণ ছিটিয়ে দিতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে মিশ্রণ যাতে খুব ঘন বা খুব পাতলা না হয়।
এভাবে সব ঘাস বিছানো হলে পা দিয়ে চাপ দিতে হবে যাতে ভিতরে বাতাস না থাকে। এবার উপরের অংশ পলিথিন দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে যাতে কোনো অংশ ফাকা না থাকে। মুড়িয়ে বা পেচিয়ে দিলে আরও ভালো হয়। এবার সবার উপরে মাটি দিয়ে ভালোভাবে গর্ত বন্ধ করে দিতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে যাতে পানি বা বাতাস না ঢুকতে পারে।
হয়ে গেলো সাইলেজ তৈরীর সব ধাপ। সাধারণত ২১-৩০ দিনের মাঝেই সাইলেজ তৈরী হয়ে যায়। এসময় সাইলেজের pH হয় ৪.১-৪.৩ এর মধ্যে। সাইলেজ প্রস্তুত হলে একটি মিষ্টি গন্ধ আসবে এর থেকে এবং দেখতে বাদামি সবুজ একটা রঙ দেখা যাবে।
কিভাবে ও কখন সাইলেজ ব্যবহার করবেন
এই সাইলেজ ৬ মাস থেকে ১ বছর খাওয়ানো যাবে। কিন্তু সম্পূর্ণ সাইলেজ একবারে খোলা যাবে না। এক সাইড থেকে খাওয়ানো শুরু করতে হবে।
সাইলেজের সতর্কতা
ফাংগাস বা মোল্ড গ্রো করলে সে সাইলেজ খাওয়ানো যাবে না। এতে বিষক্রিয়া হতে পারে। দুধ সংগ্রহের আগমূহুর্তে সাইলেজ খাওয়ানো যাবে না। এতে দুধে একটা গন্ধ আসে। সাইলেজের রঙ কালো বা কালচে হয়ে গেলে এই সাইলেজ খাওয়ানো থেকে বিরত থাকতে হবে।
প্রশ্ন আসতে পারে সাইলেজ কেনো দরকার? উত্তরটাও দিচ্ছি-
১) সাইলেজ তৈরী করলে অনেক সবুজ ঘাস একসাথে সংরক্ষণ করা যায়।
২) এই সাইলেজ তৈরী করলে বছরব্যাপী রসালো ফাইবারযুক্ত ঘাসের সরবরাহ পাওয়া যায়।
৩) সাইলেজ তৈরী করলে খাদ্য অপচয় কম হয় কারণ গাজন প্রক্রিয়ায় ঘাসের শক্ত অংশ খাবার উপযোগী হয়ে ওঠে।
৪) সাইলেজের মিষ্টি সুগন্ধ গবাদিপশুর খাবার রুচি বাড়িয়ে দেয়।
সবশেষে বলা যায় সাইলেজ কম খরচে অধিক পুষ্টিগুণ সম্পন্ন খাবার। এতে খামারির খরচ যেমন কমে তেমনি উৎপাদনও লক্ষণীয় মাত্রায় বৃদ্ধি পায়। বাংলাদেশের খামারিদের মাঝে সাইলেজ তৈরীর প্রবণতা কম শুধুমাত্র জ্ঞান এবং প্রশিক্ষণের অভাবে। তাই কর্তৃপক্ষের উচিত এ বিষয়ে আলোকপাত করা।
অনুচ্ছেদটি লেখেছেন-
আব্দুর রাজ্জাক রাজু, শেষ বর্ষ, হাবিপ্রবি
রায়ান লাবিব, তৃতীয় বর্ষ, বশেমুরকৃবি
এছাড়া উন্নত জাতের গাভির খামার করতে উন্নত গাভির খামার ব্যবস্থাপনা লেখাটি পড়ে উপকৃত হবেন আমাদের বিশ্বাস।