আমাদের দেশে বেশ কয়েকটি পণ্যের দাম হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে। চিনি, ভোজ্য তেল সহ এসকল পণে্যর দাম বৃদ্ধির জন্য কারণ হিসেবে দেখানো হচ্ছে বিশ্ব বাজারে দাম বেড়ে যাওয়া। বিজ্ঞানীদের মতে, এ ধরণের সংকট এড়াতে স্বনির্ভর হতে হবে কিছু পণ্যে ।
বিভিন্ন সময়ে চিনি, ভোজ্য তেল, পেয়াজ, রসুন ও ডালের মতো জরুরি নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য পণের দাম বেড়ে যায়। এ বাড়তি দাম নিয়ে তুমুল শোরগোলও হয়।
ব্যবসায়ীদের মতে, বিশ্ববাজারে সরবরাহ কম। ফলে আমদানি ব্যয় বাড়ার কারণে তার প্রভাব পড়ছে দেশের অভ্যন্তরীন বাজারে।
আমাদের দেশে ভোজ্য তেলের প্রায় ১১ লাখ মেট্রিক টন বার্ষিক চাহিদা রয়েছে। যার সত্তর ভাগই বাইরে থেকে আমদানিকৃত।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন সরকারি হিসেবে দেশে ভোজ্য তেল এর উৎপাদন হয় প্রায় সাড়ে তিন লাখ টন।
গত ছয় বছরে প্রায় ৭৭,০০০ হেক্টর জমিতে সয়াবিন উৎপাদন হয়েছে। কিন্তু তা থেকে পাওয়া সয়াবিন তেল নিষ্কাশনে ব্যবহার হয় না। ব্যবহৃত হয় মুরগী ও মাছের খাদ্য হিসেবে।
কৃষি বিজ্ঞানীরা এসব কারণে সয়াবিন তেলের বিপুল চাহিদা আপাতত শুধু উৎপাদনের মাধ্যমে মেটানো কঠিন বলেই মনে করেন।
আমাদের দেশে বছরে চিনির চাহিদা প্রায় ১৮ লাখ মেট্রিক টন। অপরদিকে সরকারি চিনিকলে উৎপাদনের পরিমাণ এক লাখ টনেরও কম।
বর্তমান মৌসুমে উৎপাদন ছিলো মাত্র ৪৯,০০০ মেট্রিক টন। ব্যাপক লোকসান এর কারণে ছয়টি চিনিকলে উৎপাদন বন্ধ। যার ফলে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
কিন্তু আধুনিক কারখানা তৈরি করা, কৃষকদের পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করে কাঁচামাল সহজলভ্য করা সম্ভব হলে উৎপাদন অনেকগুণ বাড়ানো সম্ভব।
কৃষি অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে দেশে পেঁয়াজের চাহিদা প্রায় ৩০ লাখ টন। ২০২০ সালে বাংলাদেশে পেঁয়াজ উৎপাদন হয় ২৫ লাখ ৫৭ হাজার টন যার প্রায় ২৫-৩০ শতাংশ নষ্ট হয়ে যায়।যাতে মোট পেঁয়াজের উৎপাদন গিয়ে থামে ১৮ থেকে ১৯ লাখ টনে। দেশের বাকি চাহিদা পূরণ করতে আমদানি করতে হয় প্রায় ১১ লাখ টন পেঁয়াজ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশেই অন্তত ৩৫ লাখ টন পেঁয়াজের উৎপাদন করলে সম্পূর্ণ চাহিদা পূরণ সম্ভব।
উৎপাদনচিত্র থেকে দেখা যায়, ২০০৮-০৯ সালে ১.০৮ লাখ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ আবাদ করা হয়। এতে উৎপাদন পাওয়া যায় ৭.৩৫ লাখ মেট্রিক টন। পরবর্তী ১০ বছরে তা ক্রমান্বয়ে বেড়ে ২০১৭-১৮ সালে ১.৭৮ লাখ হেক্টর জমি হয় এবং উৎপাদন পাওয়া যায় ১৭.৩৮ লাখ টন।
বিজ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞদের মতে আগামী কয়েক বছরে পেয়াজের উৎপাদন আরও অনেকগুন বৃদ্ধি পাবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন এ মূহুর্তে বাংলাদেশে পেঁয়াজের তুলনায় রসুনের ঘাটতি কম। দেশে সাড়ে সাত লাখ টন চাহিদা রয়েছে রসুনের। যার বিপরীতে উৎপাদন হচ্ছে সাড়ে ছয় লাখ টন উৎপাদন। তাদের মতে যে পনের শতাংশ ঘাটতি আছে সেগুলোর জন্যও উচ্চ ফলনশীল জাতের ব্যবস্থাসহ নানা পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
আমাদের দেশে বিভিন্ন প্রকার ডালের চাহিদা বছরে ২৫ লাখ মেট্রিক টন। যার বিপরীতে উৎপাদন হয় নয় লাখ মেট্রিক টন। বাকিটা আমদানি করা হয়, যার বেশির ভাগ আসে ক্যানাডা আর অস্ট্রেলিয়া থেকে।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট জানায়, সাতটি ডালের ৪২টি উন্নত জাত ও ৪১টি উন্নত চাষাবাদ প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে তারা।