তরুন উদ্যোক্তা আকতার হোসেন। শখের বসে প্রথমে ১২টি গরু দিয়ে খামার শুরু করেন। সেই থেকে শুরু, তার বছর ছয়েক পরে তার খামারে এখন গরুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে সাড়ে তিন শতাধিক। গরু, হাঁস, মুরগি, কবুতর, মাছ ও ফল চাষ করে প্রতি মাসে এখন তিনি আয় করেন লাখ টাকা। শখের খামার থেকে লাখ-টাকা আয় করেন এই উদ্যোক্তা।
ইতোমধ্যে জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদফতর থেকে বেশ কিছু সম্মাননা পেয়েছেন তিনি। সেই সাথে পরিচিত লাভ করেছেন জেলার সফল খামারি হিসেবে। এলাকার অসংখ্য বেকার যুবক তার এই সফলতা দেখে উৎসাহী হয়ে আত্মকর্মী হয়ে উঠছেন।
শখের বসে করেছেন খামার
ভোলা পৌরসভার কালিবাড়ি রোড ৩ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা সুলতান আহমদের ছেলে আকতার হোসেন। শৈশব থেকে শহুরে পরিবেশে বড় হয়েছেন তিনি। তার কর্মজীবনে ঠিকাদারি ব্যবসা করেন, তার পাশাপাশি গ্রামের পৈতৃক জমিতে শখের বসে গরু পালন শুরু করেন। ধীরে ধীরে বড় হতে থাকা খামারের নাম দেন ‘আকতার ডেইরি ফার্ম’।
তার খামারে ১৯ জন শ্রমিক কাজ করেন। যাদের পরিবারের ভরণপোষণ জোগান হয় এখানের পারিশ্রমিক দিয়ে।
সরেজমিনে আকতার ডেইরি ফার্মে গেলে চোখে পড়ে আকতার হোসেনের সফলতার চিত্র। একদিকে গোয়ালভরা গরু, অন্যদিকে পুকুরে মাছ। সেই সাথে রাজহাঁস, দেশি হাঁস, অন্য পাশে দেশি মুরগি ও কবুতরের ডাকে মুখর পুরো খামার। পাশাপাশি বিভিন্ন জাতের পেঁপে, কলা ও পেয়ারার বাগান রয়েছে ।
আকতার হোসেন জানান, ২০১৫ সালে গ্রামের বাড়িতে শখের বসে বাবার জমিতে ১২টি দেশি গরু দিয়ে খামার শুরু করেন। এর পরেই কোরবানির ঈদে গরুগুলো বিক্রি করে তার লাভ হয় প্রায় ৭০ হাজার টাকা।
এরপর দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে উন্নত জাতের ২২টি দুধের গাভি সংগ্রহ করেন। কিন্তু প্রথম পর্যায়ে গাভির বিভিন্ন রোগে তিনি লোকসানের মুখে পড়েন। এর পর ইন্টারনেট ও ঢাকার পশু চিকিৎসকের পরামর্শে এগিয়ে চলেন।
ছয় বছরে তার খামারে গরুর সংখ্যা হয়েছে সাড়ে তিন শতাধিক। গাভিগুলো প্রতিদিন প্রায় সাড়ে ৩০০ লিটার দুধ দেয় যা ৬০ থেকে ৭০ টাকা লিটার বিক্রি হয়।
এ ছাড়া প্রতি কোরবানির ঈদে ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকার গরু বিক্রি করেন তিনি। গরুর পাশাপাশি ৭০০ দেশি মুরগি, ৭০০ খাকি ক্যাম্পবেল হাঁস, ২০০ রাজহাঁস, ৫০০ কবুতর ও ৭টি পুকুরে মাছ চাষ করেন। সেই সাথে জৈব সার ব্যবহার করে বিভিন্ন জাতের কলা, পেঁপে ও পেয়ারাসহ সবজির চাষাবাদ করছেন তিনি।
আকতার জানান, প্রতি মাসে তার খামারের গরু, দুধ, ডিম, হাঁস, মুরগি বিক্রি করে প্রায় পাঁচ লাখ টাকা আয় হয় যাতে চার লাখ খরচ হয়ে বাকি এক লাখ টাকা থেকে যায়।
নতুন খামারিদের সতর্ক করেন তিনি
নতুন খামারিদের উদ্দেশে আকতার বলেন, আগে প্রশিক্ষণ ও সঠিক পদক্ষেপ নিয়ে সততার সঙ্গে কাজ করতে হবে। গরু কিনতে সতর্ক থাকতে হবে। সঠিক জায়গা নির্বাচন করতে হবে, সঠিক জাত নির্বাচন করতে হবে। সঠিক পরিচর্যা ও খাবারের সঠিক সমন্বয় রেখে সঠিকভাবে পরিচর্যা করতে হবে।
ভোলা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত ইন্দ্রজিৎ কুমার মন্ডল। তিনি বলেন, আকতার হোসেন গাভি পালনের পাশাপাশি হাঁস, মুরগি, কবুতর ও মাছ চাষ করে জেলায় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। একজন সফল খামারি হিসেবে তিনি অধিক পরিচিত। তার চেষ্টা আর উদ্যোগকে সাধুবাদ জানান এ কর্মকর্তা ।