আমরা একুরিয়াম, বায়োফ্লক, কিংবা উন্মুক্ত জলাশ্বয় যেখানেই মাছ চাষ করি না কেন ? মাছ চাষের টি ডি এস (TDS) এর গুরত্ব রয়েছে।
পানি দ্রাবক হওয়াতে পানিতে দ্রবীভূত হওয়ার সুযোগ রয়েছে অনেক উপাদানের যেমন কাদা মাটি, ক্যালসিয়াম কার্বনেট, কেমিক্যাল পদার্থ, পুষ্টি উপাদান ইত্যাদি সহ আরও অনেক কিছু।
মাছ চাষের ক্ষেত্রে আপনাকে মাছের বৈশিষ্ট এবং পানির উপাদান সমূহ নিয়ে অবশ্যই পর্যাপ্ত জ্ঞান থাকতে হবে।
আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় হচ্ছে একুরিয়াম, বায়োফ্লক এবং উন্মুক্ত জলাশ্বয়ে মাছ চাষে টি ডি এস (TDS) এর গুরত্ব এবং নিয়ন্ত্রন
টি ডি এস (TDS) কি?
জৈব পদার্থ ও অজৈব রাসায়নিক দ্রব্যাদি গলিত অবস্থায় বা পানিতে মিশ্রিত অবস্থায় থাকলে তাকে টি. ডি.এস ( TDS) বা দ্রবীভূত সকল সলিড বস্তু (Total Dissolved Solids) বলা হয়।
পুকুরের মাটি, খাদ্যদ্রব্য পচন, নদনদীর পানি, ঝর্ণার পানি, পাহাড় থেকে নেমে আসা পানি, কৃষি জমির পানি, লবণাক্ত পানি ইত্যাদি উৎস থেকে পুকুর ও জলাশয়ের পানির টি ডি এস (TDS) সৃষ্টি হয়।
টি ডি এস (TDS) মিটার দিয়ে টি. ডি. এস. পরিমাপ করা যায়। টি. ডি. এস. সাধারণত পি. পি. এম. হিসেবে প্রকাশ করা হয়।
পানিতে পরিমিত পরিমাণ টি ডি এস (TDS) থাকা মাছ, চিংড়ি ও অন্যান্য জলজ প্রাণির জন্য অতীব প্রয়োজনীয়।
প্রয়োজনের কম বা অতিরিক্ত ঘনত্বের টি ডি এস (TDS) মাছ ও চিংড়ির জন্য ক্ষতিকর এবং এতে কোন কোন সময় চাষে সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে বা মাছের মড়ক ঘটাতে পারে।
টি ডি এস (TDS) গুরুত্বপুর্ন কেন?
মাছ ও চিংড়ির জন্য পানিতে সবসময় একটা নিদিষ্ট মাত্রার টি ডি এস থাকতে হয়। টি ডি এস (TDS) এর পরিমাণ অধিক বা খুব কম থাকা যেমন ক্ষতিকর ; তেমনি টি. ডি.এস. হঠাৎ কমে যাওয়া বা বেড়ে যাওয়া মারাত্মক ক্ষতিকর।
পানির টি.ডি.এস.এর ঘনত্ব কম হলে পুকুরের বা একুরিয়াম পানি মাছের দেহে প্রবেশ করে ( অসমোসিস) এবং দেহ থেকে মিনারেল পানিতে চলে যেতে পারে বা যায়( ডিফিউসন) ।
আবার পানির টি.ডি. এস. বেশী হলে মাছের দেহের পানি বের হয়ে যায় বা যেতে পারে। এর ফলে মাছ ও চিংড়ির দৈহিক বৃদ্ধি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
স্বাদু পানির টি.ডি. এস. সাধারণত ৫০০ এর নিম্নে থাকে। স্বাভাবিক অবস্থায় উপকূলীয় বা চিংড়ি চাষের এলাকার কম লবণাক্ত পানির টি. ডি. এস. ১,০০০-১০,০০০ এবং সমুদ্রের পানির টি.ডি.এস. ১০,০০০ থেকে ৩৫ হাজার বা তার বেশী (৫০,০০০) হতে পারে।
টি ডি এস (TDS) বাড়াতে হলে করনীয় কি?
টি.ডি. এস. বাড়ানোর উত্তম পদ্ধতি হল লবণ বা নুন ( আয়োডিন বিহীন সাধারণ লবণ) প্রয়োগ করা।
সাধারণত পুকুর ও নদনদীর স্বাদু পানির টি. ডি. এস. ১০০-৫০০ পি.পি.এম. থাকে। প্রতি লিটার স্বাদু পানিতে ১ গ্রাম বা ১০০০ লিটারে( ১ টন বা ১ কিউঃমিঃ) ১ কেজি লবণ হারে মিশ্রিত করলে টি.ডি. এস. ৮০০-৯০০০ পি.পি.এম বাড়ে।
এই হিসেবে বায়োফ্লক পদ্ধতির চাষ আরম্ভের পূর্বে লবণ যোগ করে টি.ডি. এস বাড়িয়ে চাষ আরম্ভ করতে হবে। তবে চাষ আরম্ভের পরপরও লবণ যোগ করে টি. ডি.এস বাড়ানো যায়।
লবণ একদিকে টি ডি এস (TDS) বাড়াবে, অন্যদিকে বায়োফ্লকের নাইট্রাইট বিষাক্ততা কমাতে সাহায়তা করে।
স্বাদু পানির বায়োফ্লকে ১ পি.পি.টি হারে( ১০০০ লিটার বা ১ টনে ১ কেজি লবণ) লবণ যোগ করলে কোন সমস্যা হয় না।বায়োফ্লক পদ্ধতির চাষে নাইট্রাইট বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশী। এ ক্ষেত্রে নাইট্রাইট নিয়ন্ত্রণে লবণ খুব উপকারী
বায়োফ্লক পদ্ধতিতে বাগদা চিংড়ি চাষের ক্ষেত্রেও প্রয়োজনে একই পদ্ধতিতে টি. ডি. এস বাড়াতে হবে। অবশ্য বাগদা চিংড়ির বায়োফ্লকে লবণাক্ত পানি থাকায় টি. ডি. এস সমস্য হওয়ার কথা নয়।
টি ডি এস (TDS) কমাতে হলে করণীয় কি ?
টি ডি এস (TDS) কমানোর একমাত্র উত্তম পদ্ধতি হল ” রিভার্স অসমোসিস ” মেশিনের মাধ্যমে কমানো। এটা বসবাস গৃহ, অফিস, ল্যাব ইত্যাদিতে ব্যবহারযোগ্য অল্প পরিমাণ পানির ক্ষেত্রে সম্ভব।
মাছ ও চিংড়ি চাষের বিপুল পরিমাণ পানির ক্ষেত্রে সম্ভব নয়। মাছ চাষের ( সাধারণ ও বায়োফ্লক) ক্ষেত্রে টি.ডি.এস. কমানোর উত্তম পদ্ধতি হল পানি কমিয়ে টি ডি এস (TDS) কম থাকা স্বাদু পানি যোগ করা।
ফাইটোপ্লাংটন উৎপাদনের সার প্রয়োগ বন্ধ করতে হবে।
নদনদী, খালিবিল, নলকুপ ইত্যাদির পানি চাষের ক্ষেত্রে ব্যবহারের পুর্বে অবশ্যই টি. ডি.এস এর পরিমাণ পরীক্ষা করে ব্যবহার করতে হবে।
বায়োফ্লক মাছ চাষে কত টি ডি এস (TDS) প্রয়োজন?
পুকুরে স্বাদু পানি মাছ চাষের পুকুরে টি. ডি. এস ২০০- ৩০০ থাকলে সমস্যা হয় না।
বায়োফ্লকে পদ্ধতির মাছ ও গলদা চিংড়ি চাষে টি. ডি. এস. ১০০০- ১৫০০ থাকতে বা রাখতে হবে।
কৃতজ্ঞতায় ম কবির আহম্মেদ স্যার