আদা প্রাকৃতিক অ্যান্টিবায়োটিক। আদা চা কিংবা শুধু আদা চিবিয়ে খেতে পারেন যা আপনার সর্দি, কাশির জন্য উপকারি। আদার রয়েছে অনেক ঔষধি গুনাগুন। আমরা আজকে আলোচনা করব বাসার ছাদে “বস্তায় বা টবে আদা চাষ” পদ্ধতি নিয়ে।
শহরে জীবন ইচ্ছে থাকলে জমিতে ফসল আবাদ করা সম্ভব না। চিন্তা নেই আদা চাষের জন্য আপনি ব্যবহার করতে পারেন ছাদ, বাড়ির উঠোন, কিংবা আপনার খোলা ব্যালকনি।
উঠানে বস্তায় বা টবে আদা চাষে একদিকে মাটিবাহিত রোগের আক্রমণ অনেক কমে যায়, অন্যদিকে প্রাকৃতিক বিপর্যয় হলে বস্তা অন্য জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়। বাড়ির উঠোন, প্রাচীরের কোল ঘেঁষে বা বাড়ির আশেপাশের ফাঁকা জায়গা অথবা ছাদে যেখানে খুশি রাখা যায়। এর জন্যে আলাদা কোনও জমি বা পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না।
ছায়াযুক্ত জায়গাতে বস্তায় বা টবে আদা চাষ করতে পারেন। সাধারণত বাঁশবাগানের তলায় কোনও ফসল চাষ হয় না। ফলে জায়গাটা পড়েই থাকে। সেই বাঁশবাগানে বস্তায় আদা চাষ করতে পারেন।
আদা (Ginger) চাষে বস্তার মাটি তৈরি করার পদ্ধতিঃ
একটি সিনথেটিক বস্তায় ৩ ঝুড়ি মাটি, ১ ঝুড়ি বালি, ১ ঝুড়ি গোবর সার ও দানাদার কীটনাশক ফুরাডান ৫জি ২৫ গ্রাম এবং বস্তার মধ্যে ১ চা চামচ পটাশ সার মিশিয়ে নিতে হবে।
বস্তার মাটির সঙ্গে গোবর, বালি ও ফুরাডান ভালোভাবে মিশিয়ে বস্তায় ভরে ঝাঁকিয়ে নিতে হবে।
Ginger চারা তৈরির পদ্ধতিঃ
একটি বালিভর্তি টবে আদার কন্দ ছত্রাকনাশক অটোস্টিন ২ গ্রাম বা লিটার পানিতে দিয়ে শোধন করে কয়েক টুকরো অঙ্কুরিত আদা পুঁতে দিতে হবে।
ছত্রাকনাশক দিয়ে শোধনের পর কন্দগুলো আধাঘণ্টা ছায়ায় রেখে শুকিয়ে নিতে হবে।
বস্তায় আদা লাগানোর পদ্ধতিঃ
২০-২৫ দিন পর ওই আদা থেকে গাছ বের হবে। তখন আদার চারা সাবধানে তুলে বস্তার মুখে তিন জায়গায় বসিয়ে দিন। দিনের অধিকাংশ সময় রোদ পায় এমন স্থানে বস্তাটি রাখতে হবে।
কয়েক সপ্তাহের মধ্যে আদা গাছ বাড়তে থাকবে। চারা লাগানোর দু’মাস পরে চার চা চামচ সর্ষে খৈল এবং আধ চামচ ইউরিয়া প্রয়োগ করুন মাটিতে। মাঝে খুঁড়ে মাটিটা একটু আলগা করে দিলে ভালো হয়।
আদা গাছের ব্যবস্থাপনাঃ
চারা লাগানোর দু’মাস পরে বস্তা প্রতি ৪ চা চামচ সরিষার খোল ও আধা চামচ ইউরিয়া মাটিতে প্রয়োগ করতে হবে।
বস্তার মাটি মাঝে মাঝে খুঁড়ে একটু আলগা করে দিতে হবে।
আদার উত্তোলনঃ
জুন-জুলাই মাসে আদা লাগালে ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে তোলার উপযুক্ত হয়ে যাবে।
এক একটি বস্তায় তিনটি গাছ থেকে এক-দেড় কেজি পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়।
আদা চাষের খরচের হিসাবঃ
প্রতিটি বস্তায় দেড় কেজি আদা হলে ৩০০ বস্তায় পাচ্ছেন ৪৫০ কেজি। ১০০ টাকা কেজি ধরলে আপনার আদার মোট দাম দাঁড়াচ্ছে সাড়ে চার হাজার টাকা। যেখানে খরচ হয়েছিল মাত্র ১৭শ ৫০ টাকা!
৩০০ বস্তা আদা চাষের জন্যে মাটি তৈরি এবং সার বাবদ ২০০০ টাকা খরচ হতে পারে।
প্রতিবছর বস্তার জন্য প্রস্তুতকৃত মাটি পরিবর্তন করলে গাছে কাঙ্ক্ষিত ফুল ও ফল ধরবে। কিভাবে ছাদের বাগানের জন্য বস্তার মাটি পরিবর্তন করবেন ? জানতে আমাদের কিভাবে ছাদের বাগানের জন্য টবের মাটি পরিবর্তন করবেন ? লেখাটি পড়ুন। বাগান করুন সুখি ও সুস্থ থাকুন।
অনুচ্ছেদটি লিখেছেন
আজনাবী সুলতানা নীলা
বি এস ইন এগ্রিকালচার, এম এস ইন এগ্রোফরেসট্রি & এনভাইরনমেন্ট
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়