Thursday, 03 July, 2025

সর্বাধিক পঠিত

নতুন উদ্ভাবন: মিষ্টি, মাংসল ও পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ ‘বাউ বিফস্টেক টমেটো-১


Hybrid Tomato

বাংলাদেশের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় টমেটো একটি বহুল ব্যবহৃত উপাদান। সালাদ থেকে শুরু করে রান্না করা সবজি—প্রায় প্রতিটি পদেই টমেটোর ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। শীতকাল এ দেশে টমেটো চাষের মৌসুম হলেও সব জাতের টমেটো একরকম মানসম্পন্ন হয় না। এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) একদল গবেষক উদ্ভাবন করেছেন উন্নতমানের এক নতুন জাত—‘বাউ বিফস্টেক টমেটো-১’।

নতুন এই জাতের টমেটো আকারে বড়, গঠন মাংসল এবং স্বাদে মিষ্টি। প্রতিটি ফলের ওজন গড়ে ৩০০ থেকে ৬০০ গ্রাম পর্যন্ত হতে পারে, যা সাধারণ টমেটোর তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। এর অভ্যন্তরীণ কোষবিন্যাস গরুর গোশতের মতো হওয়ায় একে ‘বিফস্টেক’ নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে।

‘বাউ বিফস্টেক টমেটো-১’

আরো পড়ুন
কবুতর পালনে করনীয় ও লক্ষনীয়

অনলাইনে কবুতরের জাত নিয়ে প্রচুর কৌতূহল দেখা যায়। শুধু গিরিবাজ বা সিরাজি নয়, আরও অনেক ধরনের কবুতর বাংলাদেশে জনপ্রিয়। এদের Read more

ফলের ঘ্রাণে মাতোয়ারা জনপদ: এক অনন্য উৎসব ‘ফল মেলা’

বাংলার বাতাসে যখন আমের সুবাস, কাঁঠালের ঘ্রাণ আর জাম-লিচুর মিষ্টি রসে ভরে ওঠে জনপদ, তখনই দেশের প্রতিটি অঞ্চলে বসে এক Read more

জাতটি উদ্ভাবনের নেতৃত্ব দিয়েছেন বাকৃবির কৃষি রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. আতিকুর রহমান। তার ভাষ্য অনুযায়ী, এই টমেটোতে রয়েছে উচ্চমাত্রার গ্লুকোজ (১.২%), ফ্রুকটোজ (৩.৭%) ও সুক্রোজ (৩.৬%)—যা একে স্বাদে মিষ্টি ও পুষ্টিতে সমৃদ্ধ করে তোলে।

গবেষণাটি শুরু হয় ২০১৯ সালে। দীর্ঘ চার বছরের সংকরায়ন ও বাছাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ২০২২ সালে জাতটি উদ্ভাবিত হয়। তত্ত্বাবধান করেন অধ্যাপক ড. আতিকুর রহমান ও কৌলিতত্ত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের অধ্যাপক ড. এ বি এম আরিফ হাসান খান রবিন। এই প্রকল্পে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী মেশকুল জান্নাত তাজ, যিনি গবেষণার অংশ হিসেবে জাতটি নিয়ে টানা তিন বছর কাজ করেছেন।

অধ্যাপক ড. আরিফ হাসান খান রবিন জানান, এই টমেটো বার্গার ও স্যান্ডউইচের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। একটি বড় স্লাইস পুরো বার্গারে ব্যবহারযোগ্য হওয়ায় এটি খাবার প্রস্তুতকারকদের কাছে নতুন সম্ভাবনা তৈরি করতে পারে। তিনি বলেন, জাতটি হেক্টরপ্রতি ৪০-৫০ টন ফলন দিতে সক্ষম এবং মাত্র ৯০-১০০ দিনের মধ্যেই ফসল সংগ্রহ করা যায়।

অন্যদিকে, অধ্যাপক ড. আতিকুর রহমান জানান, গাছের উচ্চতা ৯০ থেকে ১২০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। প্রতিটি গাছে ১৫-২০টি ফল ধরলেও প্রতিটির আকার বড় হওয়ায় মাত্র তিন-চারটি ফলেই এক কেজি ওজন পূরণ হয়। ফলে প্রতি গাছ থেকে গড়ে পাঁচ থেকে ছয় কেজি পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়, যা প্রচলিত জাতের তুলনায় বেশি।

জাতটির আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যের মধ্যে রয়েছে কম বীজযুক্ত হওয়া, উজ্জ্বল লাল রঙ ও দীর্ঘ সময় সংরক্ষণযোগ্যতা। স্বাভাবিক তাপমাত্রায় সংরক্ষণের ক্ষেত্রে ১৫-২০ দিন পর্যন্ত ভালো থাকে, এবং এটি রোগবালাই ও পোকামাকড় প্রতিরোধে অধিকতর সক্ষম। ফলে ক্ষতিকর কীটনাশক ব্যবহারের প্রয়োজন কম, যা একে পরিবেশবান্ধব ও কম খরচে উৎপাদনযোগ্য করে তোলে।

‘বাউ বিফস্টেক টমেটো-১’ জাতটি দেশের জলবায়ু ও মাটির জন্য অত্যন্ত উপযোগী এবং কৃষিতে এক নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করতে পারে বলে মনে করছেন গবেষকরা। এটি শুধু কৃষকের আয়ের উৎসই বাড়াবে না, একই সঙ্গে ভোক্তাদের পুষ্টিকর ও সুস্বাদু খাদ্য সরবরাহেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

0 comments on “নতুন উদ্ভাবন: মিষ্টি, মাংসল ও পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ ‘বাউ বিফস্টেক টমেটো-১

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সাম্প্রতিক লেখা

আর্কাইভ