আমন ধান নিয়ে শংকিত নীলফামারির কৃষকেরা। এমনিতেই এ বছর তেমন ভালো বৃষ্টিপাত হয়নি। তার উপর মাস ঘুরতে না ঘুরতেই হুট করে দাম বেড়ে গেছে তেলের। সেইসাথে যুক্ত হয়েছে লোডশেডিং। এতে করে পানি সেচ দিতে গিয়ে ঝামেলায় পড়েছেন তারা। বেড়ে গেছে সেচ দেবার খরচ।
একজন কৃষক জানান যে এবার পাঁচ বিঘা জমিতে আমন চারা রোপণ করেছেন তিনি।
কিনতু এ বছর ভালো বৃষ্টি না হবার কারনে পানি সেচ দিতে হচ্ছে।
প্রতি দিন অন্তত সাত আট ঘণ্টা লোডশেডিং হয়।
এবার পানি সেচের জন্য শ্যালো মেশিন বসিয়েছেন তিনি।
এতে তার খরচ আরও বেশি বেড়ে গেছে।
তার উপর জ্বালানি তেলের সাথে ইউরিয়া সারের দাম বেড়ে গেছে।
বছর শেষে তাই ধানের দাম নিয়ে শংকিত তিনি।
সদর উপজেলার কয়েকজন কৃষক এর সাথে কথা হয়।
তারা বলেন, বর্ষার সময় আমন আবাদে তেমন সেচের কোনো প্রয়োজন হয় না।
কিন্তু প্রয়োজনীয় বৃষ্টি এবছর ছিল না।
আর তাই এ বছর জমিতে সেচযন্ত্র বসিয়ে সেচ দিতে হচ্ছে।
এতে প্রতি বিঘা জমিতে সেচবাবদ প্রতি চাষের জন্য বাড়তি খরচ হচ্ছে আরও ৯০০ টাকা।
তাছাড়া প্রতি বিঘা জমিতে ইউরিয়া সার তিন দফায় ৩০ কেজি প্রয়োগ করতে হবে।
যদি কোনভাবে সরকারি দরে সার পাওয়া যায় তবে প্রতি বিঘায় বাড়তি ১৮০ টাকা খরচ হবে।
কিন্তু খোলাবাজারে সারের দাম পড়ছে আরও বেশি।
এ ছাড়া রোপণ থেকে মাড়াই পর্যন্ত আরও ৩৫০০ টাকা খরচ হবে।
তেলের দাম বাড়ায় এই খরচ আরও বেড়ে যাবে।
কৃষকেরা জানান সার পাচ্ছেন না তারা।
ইউরিয়া সারের দাম কেজিতে বাড়িয়ে ১৬ থেকে ২২ টাকা করা হলেও এ দামে এলাকায় সার নেই।
বাদিয়ার মোড় বাজারের খুচরা সার ব্যবসায়ীদের সাথে কথা হয়।
তিনি বলেন, পাঁচ কেজি ইউরিয়া সার ১১০ টাকায় কিনে ১২০ টাকায় বিক্রি করছেন তারা।
অন্যদিকে প্রতি বস্তা সার আমরা ১১০০ টাকায় কিনে ১১৩০ টাকায় বিক্রি করছেন তারা।
তবে তারা কেউ সার কেনার উৎস নিয়ে মুখ খোলেননি।
ইটাখোলা ইউনিয়নের কানিয়ালখাতা ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা গোলাম জাকারিয়া।
তিনি জানান, সরকারিভাবে সারের দাম বেড়েছে।
তবে নতুন দামের সার এখনো বাজারে আসেনি।
নতুন বরাদ্দ যতক্ষণ না আসে ততক্ষণ পর্যন্ত আগের দামেই সার বিক্রি করতে হবে।
পরিবেশক পর্যায়ে আগের দামে সার বিক্রি হচ্ছে বলে তিনি দাবি করেন।
বিসিআইসির একজন সার পরিবেশক জানান সরকারিভাবে ইউরিয়া সারের দাম বেড়েছে।
তবে নতুন বরাদ্দ না হওয়ায় তাঁরা আগের দামেই বিক্রি করছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ সূত্রে জানা যায় এ বছর আনন চারা রোপণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ১৩ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে।
আজ মঙ্গলবার পর্যন্ত এর বিপরীতে চারা রোপণ হয়েছে ৭৫ হাজার ৫৫ হেক্টর জমিতে।
গত জুলাই মাসের গড় বৃষ্টিপাত ছিল ১৮১.৫ মিলিমিটার।
এটি আমন আবাদের জন্য খুবই কম।
আর তাই জমিতে কৃষকদের সেচ দিতে হচ্ছে।
জেলায় ইউরিয়া সারের লক্ষ্যমাত্রা ১৬ হাজার ৯৬৫ মেট্রিক টন ধরা হয়েছে।
সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. কামরুল হাসান।
তিনি বলেন, সারের দাম ঠিক রাখতে তারা নিয়মিত তদারক করছেন।
প্রতিটি ডিলার পয়েন্টের মজুত এর উপর নিয়মিত পর্যবেক্ষণ চলছে।
পূর্ববর্তী মজুত করা সার অতিরিক্ত দামে বিক্রির অভিযোগ পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, বৈশ্বিক বাজারে সারের দাম বাড়ার কারণে দেশেও দাম বেড়েছে।
এ জন্য পরিমিত পরিমাণ সার ব্যবহার করার পরামর্শ দেন।