
দেশজুড়ে চাহিদাসম্পন্ন ফল চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম। প্রতি বছর মৌসুমে জমজমাট হয়ে ওঠে জেলার আমবাজার। তবে এবারও গাছ থেকে আম নামানোর নির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারণ না করায় সংশয় দেখা দিয়েছে বাজার ব্যবস্থাপনায়। তারপরও বাগান মালিকরা আশাবাদী—কিছুদিনের মধ্যেই বাজারে আসবে পরিপক্ব আম।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও কৃষি বিপণন অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে জেলায় আম উৎপাদনের সম্ভাব্য পরিমাণ প্রায় চার লাখ টন। গড়ে কেজি প্রতি ৫০ টাকা মূল্য ধরলে আম ব্যবসার আর্থিক পরিমাণ দাঁড়াতে পারে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা।
কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, চাঁপাইনবাবগঞ্জের পাঁচ উপজেলায় এবার আমের ফলন হয়েছে ৩৭ হাজার ৫০৪ হেক্টর জমিতে, যা গত বছরের তুলনায় ১০০ হেক্টর কম। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আমবাগান রয়েছে শিবগঞ্জ উপজেলায়—২০ হাজার ১০০ হেক্টর। সবচেয়ে কম বাগান রয়েছে ভোলাহাটে—৩ হাজার ৬৩৪ হেক্টর।
এবার প্রায় শতভাগ গাছে মুকুল আসলেও আবহাওয়ার প্রতিকূলতা, বিশেষ করে খরা ও অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে অনেক গুটি ঝরে পড়েছে। ফলে আশানুরূপ ফলন না হলেও গত বছরের তুলনায় কিছুটা বেশি আম রয়েছে বাগানে।
আমচাষি গোলাম মোস্তাফা সুমন বলেন, “মুকুল ভালো এসেছিল, কিন্তু গুটি তেমন আসেনি। খরার কারণে অনেক গুটি পড়ে গেছে। তাই ফলন আশানুরূপ হয়নি।”
তবে যেসব বাগানে গুটি টিকে আছে, সেখানে থোকায় থোকায় আম ঝুলছে। ইতিমধ্যে বিচ্ছিন্নভাবে কিছু বাগানে গোপালভোগ ও গুটি আম পাকার খবরও পাওয়া গেছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মুনজের আলম মানিক বলেন, “এ বছর গাছ থেকে আম নামানোর নির্দিষ্ট সময়সীমা নেই। যেদিন আম পরিপক্ব হবে, সেদিনই নামানো যাবে। মে মাসের শেষ দিকে গোপালভোগ ও গুটি আম বাজারে আসতে পারে।”
ম্যাংগো প্রোডিউসার কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল খান শামীম বলেন, “মৌসুমের শুরুতে গুটি আম ৮০০ টাকা, গোপালভোগ ২,৫০০–৩,০০০ টাকা এবং ক্ষীরশাপাত ২,০০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হতে পারে। তবে চাহিদা ও সরবরাহ অনুযায়ী দাম উঠানামা করবে।”
চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. মো. ইয়াছিন আলী বলেন, “এখন পর্যন্ত বড় কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ হয়নি। তাই আমের ফলন নিয়ে আমরা আশাবাদী। এমনকি উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রাও ছাড়িয়ে যেতে পারে।”
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সময়মতো গাছ থেকে আম সংগ্রহ এবং সঠিক বাজারজাত নিশ্চিত করা গেলে এ জেলার আম খাত আরও সমৃদ্ধ হতে পারে। এছাড়া নির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারণ না করলে বাজারে অপরিপক্ব আমের সরবরাহ ও ক্রেতা ঠকানোর আশঙ্কা থেকেই যায়।