
সাম্প্রতিক বন্যায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ায় কৃষকদের করণীয় সম্পর্কে জরুরি নির্দেশনা জারি করেছে কৃষি মন্ত্রণালয়। সোমবার (৮ জুলাই) প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ও আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত জমির ধান এবং অন্যান্য ফসল রক্ষায় বিস্তারিত পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
বন্যার পানি সরে যাওয়ার পর করণীয়:
- পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা: যেসব জমি বন্যার পানিতে সম্পূর্ণ তলিয়ে যায়নি বা আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেসব জমি থেকে দ্রুত কচুরিপানা, পলি, বালি এবং অন্যান্য আবর্জনা পরিষ্কার করতে হবে।
- ধান গাছ ধোয়া: বন্যার পানি সরে যাওয়ার পর ৫-৭ দিন কাদাযুক্ত ধান গাছ পরিষ্কার পানি দিয়ে, প্রয়োজনে স্প্রে মেশিন ব্যবহার করে ধুয়ে দিতে হবে।
- সার প্রয়োগে সতর্কতা: বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পরপরই সার প্রয়োগ করা থেকে বিরত থাকুন, এতে ধান গাছ পচে যেতে পারে। পানি সরে যাওয়ার ১০ দিন পর ধানের চারায় নতুন পাতা গজানো শুরু হলে প্রতি বিঘায় ৮ কেজি ইউরিয়া ও ৮ কেজি পটাশ সার উপরি প্রয়োগ করতে হবে।
চারা সংগ্রহ ও বীজতলা তৈরি:
- উঁচু জমির সদ্ব্যবহার: যেসব উঁচু জমিতে বন্যার পানি ওঠেনি, সেখানে রোপণ করা বাড়ন্ত আমন ধানের গাছ (রোপণের ৩০-৪০ দিন পর) থেকে ২-৩টি কুশি রেখে বাকি কুশি শিকড়সহ তুলে অন্য জমিতে রোপণ করা যেতে পারে।
- ভাসমান ও দাপোগ বীজতলা: যেসব এলাকায় বন্যার কারণে বীজতলা তৈরি সম্ভব হয়নি, সেখানে ভাসমান অথবা দাপোগ বীজতলা তৈরি করে চারা উৎপাদন করতে হবে।
উপযুক্ত জাত ও রোপণ পদ্ধতি:
- আলোক সংবেদনশীল জাত: বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর ব্রি উদ্ভাবিত আলোক সংবেদনশীল উফশী জাত যেমন- বিআর৫, বিআর২২, বিআর২৩, ব্রি ধান৩৪, ব্রি ধান৪৬, ব্রি ধান৫৪ এবং নাইজারশাইলসহ স্থানীয় জাতসমূহ রোপণ করতে হবে।
- স্বল্প জীবনকাল সম্পন্ন জাত: এছাড়া, ব্রি উদ্ভাবিত স্বল্প জীবনকালসম্পন্ন জাত ব্রি ধান৫৭ ও ব্রি ধান৬২ রোপণ করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে ৩০ আগস্ট পর্যন্ত বীজতলা তৈরি করা যাবে।
- বিলম্বে রোপণ: উল্লিখিত জাতগুলো বিলম্বে রোপণের ক্ষেত্রে প্রতি গোছায় ৪-৫টি চারা এবং রোপণ দূরত্ব ২০x১৫ সেন্টিমিটার হতে হবে। দ্রুত কুশি উৎপাদনের জন্য টিএসপি, জিপসাম ও জিংকসহ দুই-তৃতীয়াংশ ইউরিয়া জমি তৈরির সময় প্রয়োগ করতে হবে। অবশিষ্ট ইউরিয়া রোপণের ২৫-৩০ দিনের মধ্যে প্রয়োগ করতে হবে।
সরাসরি বীজ বপন:
- যেসব এলাকায় পুনরায় বন্যার আশঙ্কা কম (উঁচু ও মধ্যম উঁচু), সেসব জমিতে অঙ্কুরিত বীজ সরাসরি ছিটিয়ে বপন করা যেতে পারে। এতে রোপণ পদ্ধতির চেয়ে ৫-৭ দিন আগে ফসল পাওয়া যেতে পারে।
ধান গাছের পরিচর্যা ও রোগ-পোকা দমন:
- সাধারণ পরিচর্যা: বন্যার ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়া ধান গাছের আগাছা দমন, পোকামাকড় ও রোগাক্রমণ থেকে ফসল রক্ষা, সুষম পরিমাণে সার প্রয়োগ এবং প্রয়োজন অনুযায়ী সম্পূরক সেচের ব্যবস্থা করতে হবে।
- ব্যাকটেরিয়াজনিত পাতাপোড়া: বন্যা পরবর্তী সময়ে চারা গাছ সম্পূর্ণভাবে মাটিতে লেগে যাওয়ার সাথে সাথে ব্যাকটেরিয়াজনিত পাতাপোড়া রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে ৬০ গ্রাম থিওভিট ও ৬০ গ্রাম পটাশ সার ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে ৫ শতাংশ জমিতে স্প্রে করতে হবে।
- পোকা দমন: বন্যা পরবর্তী সময়ে মাজরা, বাদামি ও সাদা পিঠ গাছ ফড়িং, পাতা মোড়ানো এবং পামরি পোকার আক্রমণের হাত থেকে রক্ষার জন্য পোকা বিশেষে হাতজাল, পার্চিং এবং প্রয়োজনে অনুমোদিত কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে।
আমন ধান রোপণের শেষ সময়:
- দেশের উত্তরাঞ্চলে আগাম শীত আসার কারণে ১৫ সেপ্টেম্বরের পর আমন ধান রোপণ করা উচিত নয়। মধ্য ও দক্ষিণ অঞ্চলে ২০ সেপ্টেম্বরের পর আমন ধান রোপণ থেকে বিরত থাকতে হবে। এই সময়সীমার পর রবি ফসলের আবাদ করতে হবে।
কৃষি মন্ত্রণালয় আশা করছে, এই নির্দেশনাগুলো যথাযথভাবে পালনের মাধ্যমে কৃষকরা বন্যার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারবেন এবং ফসলের উৎপাদন স্বাভাবিক রাখতে পারবেন।