
অবশেষে চীনের বাজারে বাংলাদেশের আম রপ্তানি শুরু হলো। গতকাল (বুধবার) দুপুরে ১০ টন আমের একটি চালান চীনের উদ্দেশ্যে পাঠানো হয়। এই ঐতিহাসিক রপ্তানি কার্যক্রমের উদ্বোধন উপলক্ষে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এক জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন, বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন এবং কৃষি সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এর আগে কখনো বাংলাদেশ থেকে চীনে সরাসরি আম রপ্তানি হয়নি। গত কয়েক মাস ধরে উভয় পক্ষের মধ্যে আম রপ্তানি নিয়ে আলোচনা চলছিল, যা সম্প্রতি একটি চুক্তির মাধ্যমে চূড়ান্ত রূপ নেয়। এবারের মৌসুমে সব মিলিয়ে প্রায় ১০০ টন আম চীনে রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রথম চালানে সাতক্ষীরা ও যশোর অঞ্চলের কয়েকজন রপ্তানিকারকের মাধ্যমে এই ১০ টন আম পাঠানো হয়েছে।
অনুষ্ঠানে চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেন, “চীনের বাজারে বাংলাদেশি আমের প্রবেশ কেবল আমাদের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বৃদ্ধি এবং বাণিজ্য ভারসাম্যহীনতা কমাতে সাহায্য করবে না, বরং আরও গুরুত্বপূর্ণ হলো, এটি আমাদের অর্থনৈতিক সহযোগিতার পারস্পরিক উপকারী ও লাভজনক সারাংশ প্রতিফলিত করে।” তিনি আরও যোগ করেন, “গঙ্গা বদ্বীপের উর্বর মাটিতে জন্মানো বাংলাদেশি আম সবুজ ও উচ্চমানের কৃষিপণ্যের প্রতিনিধিত্ব করে। চীনা ভোক্তাদের জন্য এটি আরও বৈচিত্র্যময় পছন্দ দেবে এবং নিঃসন্দেহে জনগণের মঙ্গল বৃদ্ধি করবে।” রাষ্ট্রদূত আশা প্রকাশ করেন যে, চীনা বাজারের বিশাল সম্ভাবনা বাংলাদেশের আম খাতের শিল্প উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করবে, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবে এবং দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে।
একযোগে ৫ দেশে আম রপ্তানি উদ্বোধন
একই দিনে গতকাল সকালে রাজধানীর বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলে যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, সৌদি আরব, কাতার ও বাহরাইনে আম রপ্তানি কার্যক্রমেরও উদ্বোধন করা হয়। কৃষি উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী এই পাঁচটি দেশে ১৩ টনের চালান পাঠিয়ে আম রপ্তানির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, “পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের আমের যথেষ্ট সুনাম ও চাহিদা রয়েছে। উন্নত দেশের মূলধারার সুপার মার্কেটগুলোতে আম সরবরাহ করা গেলে রপ্তানির পরিমাণ বহুলাংশে বাড়বে এবং আম উৎপাদনকারীরাও লাভবান হবেন।”
কৃষি উপদেষ্টা আরও জানান, বৈদেশিক আয় বৃদ্ধির জন্য আম রপ্তানি অত্যন্ত সম্ভাবনাময় একটি খাত। কৃষিবান্ধব বর্তমান সরকার আম রপ্তানির মাধ্যমে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের লক্ষ্যে নানামুখী পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করছে।
‘রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদন প্রকল্প’-এর উদ্যোগে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে কৃষক, উদ্যোক্তা, রপ্তানিকারক, দূতাবাসের কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। কৃষি সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান এতে সভাপতিত্ব করেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে কৃষি উপদেষ্টা কৃষকদের উৎপাদনে উৎসাহিত করার ওপর জোর দিয়ে বলেন, “কৃষকদের উৎপাদনে উৎসাহ দিতে হবে, তাহলেই উৎপাদন বাড়বে। কৃষকের উপকারে কাজ করলেই ভোক্তা উপকৃত হবে। রপ্তানি বাড়াতে হবে এবং আমদানি যেন কমে আসে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।” তিনি জানান, গতবারের তুলনায় এবার আমের উৎপাদনও বেশি হয়েছে।
কৃষি সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান বলেন, “গুণগত মান বজায় রেখে এবার রপ্তানিতে রেকর্ড গড়ার লক্ষ্য নিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। আম ছাড়াও কাঁঠাল ও লিচু রপ্তানির দিকেও সরকার নজর দিচ্ছে।” তিনি জানান, দেশভিত্তিক পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে রপ্তানি বৃদ্ধির পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে এবং বিমান ভাড়া কমাতে কার্গো বিমানের বিষয়ে সিভিল এভিয়েশনের সঙ্গে আলোচনা চলছে।
রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদনে প্রকল্প
উল্লেখ্য, রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদনে কৃষকদের সহায়তা দিতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) ২০২২ সালের জুলাই থেকে পাঁচ বছর মেয়াদি ‘রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদন প্রকল্প’ বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ আরিফুর রহমান জানান, কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও কারিগরি সহায়তা দেওয়ায় এর ইতিবাচক ফল মিলছে।
এই রপ্তানি উদ্যোগ বাংলাদেশের কৃষিখাত ও অর্থনীতিতে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করবে বলে আশা করা হচ্ছে।