মাছের রোগ (Fish Diseases) পানিতে লবন (Salt) দিয়ে দিন, পানিতে টি ডি এস কমে গিয়েছে লবন দিয়ে দিন, মাছের পোনা এক যায়গা থেকে অন্য যায়গাতে পরিবহন লবন প্যাকেটের পানিতে মিশিয়ে দেন, মাছ চাষ লবনের বহুবিদ ব্যবহার অনেক পুরাতন। মাছ চাষে কেন লবন ব্যবহার করা হয় ?
আমরা এখানে আজকে আলোচন করব মাছ চাষে লবন ব্যবহারের কারন এবং প্রভাব নিয়ে। আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট বক্সে লেখতে পারেন অথবা এখাতে প্রশ্ন করতে পারেন।
মাছ চাষের লবনের উপাদান কিভাবে কাজ করে
সোডিয়াম ক্লোরাইড একটি রাসায়নিক পদার্থ। ইহা সাধারণ লবণ, টেবিল লবণ হিসেবেও পরিচিত। এর রাসায়নিক সংকেত হলো NaCl.
সোডিয়াম ক্লোরাইডে সোডিয়ামের পরিমাণ হল ৩৯.৩৪% এবং ক্লোরিনের পরিমান হল ৬০.৬৬%। মাছের ক্ষেত্রে লবণের ক্লোরাইড অংশটাই গুরুত্বপূর্ণ। ক্লোরাইড কেন গুরত্বপূর্ন বিস্তারিত নিচে আলোচনা করব।
মৎস্য চাষের কখন এবং কোন ক্ষেত্রে লবণ ব্যবহার করা যায়
লবনের গুনাগুন নিয়ে ধারাবাহিক আলোচনায় থাকছে-
হ্যাচারিতে (Hatchery) ও পোনা পরিবহনে (Fry Transportation) লবনের ব্যবহারঃ
হ্যাচারিতে লবনের ব্যবহারের বিভিন্ন ধাপ গুলো হল-
মাছের ও পোনার কন্ডিশনিং করে শক্তি বৃদ্ধি করা;
বাহ্যিক পরজীবি ও জীবানু নিয়ন্ত্রণ,
হ্যাচারির পুকুরের পানির নাইট্রাইট (NO2) বিষাক্ততা নিরসন,
হ্যাচারির ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাক দমন এবং নাইট্রাইট নিয়ন্ত্রণ করা,
রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং মাছের শরীরে শ্লেষা(mucus) বাড়ানো ইত্যাদি কাজে লবণ উত্তম কাজ করে।
চাষের পুকুরে লবনের ব্যবহারঃ
জলাশ্বয়ে বাহ্যিক পরজীবি ও জীবানু নিয়ন্ত্রণ,
পুকুরের পানির নাইট্রাইট (NO2) বিষাক্ততা নিরসন,
ঘেরের ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাক দমন এবং নাইট্রাইট নিয়ন্ত্রণ করা,
রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং মাছের শরীরে শ্লেষা(mucus) বাড়ানো ইত্যাদি কাজে লবণ উত্তম কাজ করে।
মাছের দেহের রক্তের লবনাক্ততা ১০ পি.পি.টি.। তাই স্বাদু পানির লবনাক্ততা কম থাকায় বা পানি স্বাদু হওয়ায় সবসময় মাছের দেহে পানি প্রবেশ করে ( অসমোসিস)। এ অতিরিক্ত পানি মাছ দেহ থেকে বাহির করতে শক্তি খরচ করতে হয়।
এর ফলে মাছ দুর্বল হয়ে যায় এবং দৈহিক বৃদ্ধি কমে যায়। পানিতে লবণাক্ততা একটু বেশী থাকলে মাছের বসবাসের পানি থেকে দেহে কম পানি প্রবেশ করে বা অসমোসিস কম হয়।
মাছ চাষ ও পরিবহনে লবণের ব্যবহারে খরচ কম, উপকার বেশী। মাছের চিকিৎসায় ৩-৫০ পিপিটি পর্যন্ত লবণাক্ততা ব্যবহার করা যায়।
লবণের প্রয়োগ বা ব্যবহার বিধি –
মাছের শক্তি ও রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য-
পোনা ও বড় মাছ কন্ডিশনিং করা এবং পরিবহন কালে লবণ ব্যবহার করা হলে জীবানু ধংস হয়, মাছের দেহে শ্লেষা বাড়ে, দেহের শক্তি বাড়ে, পরিবহন কালে মড়ক কম হয়।
১। পোনা আহরণের পর তা বিক্রি করা বা অন্য জায়গায় নেয়ার পুর্বে ৩-৬ পিপিটি লবণাক্ত পানিতে অনির্দিষ্ট সময় বা বিক্রির বা স্থানান্তরের পুর্ব পর্যন্ত রেখে দেয়া।
২। পোনা ও বড় মাছ পরিবহনের পাত্রের পানিতে ৫-৮ পি.পি.টি লবণ প্রয়োগ করা।
৩। মাছ ও পোনা অন্য পুকুরে স্থানান্তরের পর ৪/৫ দিন সময় পর্যন্ত প্রতি কেজি খাদ্যে ১০-১৫ গ্রাম হারে লবণ মিশ্রিত করে প্রয়োগ করতে হবে। প্রতি ১০-১৫ গ্রাম লবণের জন্য ১৫০ – ২০০ মিলি পানিতে মিশ্রিত করতে হয়।
রোগ ও জীবাণুর জন্য-
১। মাছের ফুলকা ও চামড়ায় পরজীবি থাকলে মাছ ধরে বা আহরণ করে ৫০ পিপিটি লবণাক্ততায় ৩০ সেকেন্ড থেকে ৩ মিনিট চুবিয়ে রাখা,
এছাড়া আপনি এ পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারেন ২০-৩০ পি.পি.টি. লবণাক্ততায় ১০- ৩০ মিনিট চুবিয়ে রাখা(পরপর ৩ দিন করতে হবে),
বা ৫-১০ পি.পি.টি. লবণাক্ততায় ৬ থেকে ১২ ঘন্টা চুবিয়ে রাখা(পরপর ৩ দিন করতে হবে),
২। মাছের ফুলকা, পাখনা ও লেজে ক্ষত হলে ২০-৩০ পি.পি.টি লবণাক্ততায় ১০-৩০ মিনিট চুবিয়ে রাখতে হবে।
৩। বায়োফ্লক ও রাসে( RAS) ৩ পি.পি.টি হারে লবণ প্রয়োগ করলে বা থাকলে ছত্রাক ও ফুলকা সংক্রমণ রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না এবং নাইট্রাইট বিষাক্ততা কমে বা নিরসন হয়।
কোন কোন সময় বায়োফ্লকে নাইট্রাইটের পরিমান ১৫-২০ পি.পি.এম হয়ে যেতে পারে। নাইট্রাইট নিয়ন্ত্রণের উত্তম পদ্ধতি হল লবণ প্রয়োগ। বায়োফ্লক চৌবাচ্চা প্রস্তুতির সময়ে ৩ পি.পি.টি লবণ দেয়া যেতে পারে।
৪। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় – পুকুরে ক্লোরাইডের পরিমাণ সাধারণত ২০ পি.পি.এম থাকে। পানিতে ২০ পি.পি.এম ক্লোরাইড থাকলে নাইট্রাইট বিষাক্ততা হয় না।
তবে পানিতে ২০ পি.পি.এম থেকে কম ক্লোরাইড থাকলে তা বাড়াতে হবে।
পানিতে ০.৭ মিঃ গ্রাম/ লিটার বা ০.৭ পি.পি.এম নাইট্রাইট থাকলে মাছের জন্য বিষাক্ততা আরম্ভ হয়।
সহজ পদ্ধতি হল পানিতে নাইট্রাইটের পরিমাণ ১ হলে ১০ পি.পি.এম ( ১০ মিঃলিঃ গ্রাম/লিঃ) হারে লবণ প্রয়োগ করতে হবে।
কিভাবে লবণের পরিমাণ জানবেন ?
ধরুন একটি পুকুরে ১ পি.পি.এম নাইট্রাইট আছে এবং ক্লোরাইড নাই বা শুন্য। এ ক্ষেত্রে লবণ প্রয়োগের পরিমাণ = ৬ x১ – (বিয়োগ) পানিতে থাকা ক্লোরাইড( এখানে নাই বা শুন্য) ÷ ০.৬= ১০ গ্রাম বা পি.পি.এম( প্রতি কিউ মিটার পানিতে)। পানিতে কি পরিমাণ ক্লোরাইড আছে তা জেনে নিয়ে তা বাদ দিয়ে লবণের পরিমাণ হিসাব করা উত্তম।
সাধারণত ১.০ মিটার গভীরতার ১ একরের একটি পুকুরের পানিতে ১ পি.পি.এম নাইট্রাইট (NO2) থাকলে ৪০ কেজি লবণ দিলে চলে। এ লবণ একদিকে নাইট্টাইট বিষাক্ততা নিরসনে কাজ করবে, অন্যদিকে মাছের অসমোসিস(osmosis) কমাবে।
জেনে রাখুন পুকুরে বা মাছ চাষে বাজারের খোলা লবন ব্যবহার করাই উত্তম এবং এতে কম দামে আপনি লবন কিনতে পারবেন।
কিভাবে মাছ চাষে লবন ব্যবহার করবেন ?
লবন পুকুরে ছিটিয়ে দিলে ও কোন সমস্য নাই। আপনি জলাশ্বয়ে লবন ছিটিয়ে দিন।
কৃতজ্ঞতা ম. কবির আহম্মেদ স্যার
শান্তনু পাল
March 23, 2023 at 11:28 pmআমি শিঙি মাছ চৌবাচ্চা চাষ করতে চাই।
আমায় একটু সাহায্য করুন।
আমার whatsapp +919883744298
মানিক সরকার
May 31, 2022 at 5:58 pmপুকুরের মাছ থাকাকালীন অব্থায় লবন কতদিন পরপর ব্যাবহার করা যায়
এগ্রোবিডি২৪
May 31, 2022 at 9:21 pmমানিক ভাই আপনাকে মূল্যবান প্রশ্নের জন্য ধন্যবাদ। আপনি প্রতি মাসে মাছ থাকা অবস্থায় ১০০-১৫০ গ্রাম প্রতি শতকে লবন দিতে পারবেন।
Fahad molla
September 3, 2021 at 12:43 pmসার আমার একটি ৫০০ লিটার এর ট্যাংক আছে তা আমি কি পরিমান এবং কি লবন ব্যবহার করব
এগ্রোবিডি২৪
September 4, 2021 at 9:53 amবায়োফ্লকে লবন টিডিএস কমে গেলে দিতে হয়। বায়োফ্লকে প্রতি লিটার পানিতে ১ গ্রাম লবন দেয়া যেতে পারে । পানির প্যারামিটার এর উপর ভিত্তি করে অনেক সময় কম বেশি হতে পারে।
মেহেদি হাসান
September 21, 2020 at 8:05 pmঅনেক বিষয় জানা ছিল না । লবন নিয়ে লেখার জন্য ধন্যবাদ
masum
September 18, 2020 at 10:28 pmস্যার আমার দশ হাজার ট্যাংকে প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ টা মাচ মারা যায় এর জন্য কী করবো।
স্যার আমার ট্যাংকে অক্সিজেন ৪ থাকে এখন অক্সিজেন বাড়ানোর জন্য কত গ্রাম অক্সিজেন ট্যাবলেট ব্যবহার করবো ।১০ হাজার লিটার পানির জন্য।
এগ্রোবিডি২৪
September 19, 2020 at 12:42 amবায়োফ্লকে মাছ চাষ নিয়ে লেখাটি পড়েন। মাছ মারা যাওয়ার অক্সিজেনের অভাব ছাড়াও অনেক কারন থাকতে পারে।
বায়োফ্লকে অক্সিজেন (Dissolve Oxygen) কমে গেলে অনেক ধরনের সমস্য দেখা দেয়। এক্ষেত্রে অপেক্ষাকৃত ছোট মাছ গুলো আগে মরে যায়।
কিভাবে বুঝবেন বায়োফ্লকে অক্সিজেন (Dissolve Oxygen) কমে গেছে?
মাছ গুলো এয়ার স্টোনের আসে পাশে অবস্থান করবে
মাছ গুলো উপরের স্তর এসে খাবি খাবে
মাছের খাবারের প্রতি অনিহা দেখা দেবে
কিভাবে বায়োফ্লকে অক্সিজেন (Dissolve Oxygen) নিয়ন্ত্রন করবেন ?
প্রাথমিক খুব বেশি সমস্যাতে ১০-১৫ শতাংশ পানি পরিবর্তন করুন।
এয়ার স্টোনের পরিমান বাড়িয়ে দিন।
বায়োফ্লকের এলাকা যদি বদ্ধ হয় তাহলে বেড়া খুলে দিন ।
ফ্লকের পরিমান নিয়মিত পরীক্ষা করুন এবং নিয়ন্ত্রন করুন।
বায়োফ্লকে অক্সিজেন (Dissolve Oxygen) জন্য অক্সিজেন ট্যাবলেটের প্রয়োজন হয় না।