Thursday, 12 December, 2024

সর্বাধিক পঠিত

চারাগাছ রোপনের নিয়ম


চারাগাছ রোপনের কৌশল

চারাগাছ রোপনের সবচেয়ে উৎকৃষ্ট সময় বর্ষাকাল। বিশেষ করে এসময় প্রচুর বৃষ্টিপাত হয় ফলে মাটি নরম থাকে এবং মাটিতে প্রচুর রস থাকে। তাছাড়া নিয়মিত বৃষ্টিপাত গাছের দ্রুত বেড়ে উঠাতেও সহায়তা করে। কিছু অসতর্কতা বা ভুলের কারনে এ সময় অধিকাংশ ক্ষেত্রে একটি সুস্থ, সবল ও ভালো যাতের চারা রোপণ করলেও কয়েকদিনের মধ্যেই তা দুর্বল ও নিস্তেজ হয়ে ধীতে ধীরে মারা যেতে শুরু করে। গাছ ভালো না হলে অথবা গাছের বীজ কিংবা কলম করা ভালো না হলে সেই গাছ বেড়ে ওঠার সময় নানান সমস্যা হয়।

চারা রোপনের নিয়ম

নতুন চারা কেনার পর প্রথমেই আমাদের চারাগুলো কে অনেক রোদ অথবা বৃষ্টির মধ্যে না রেখে অন্তত ২৫/৩০ দিন ছায়াযুক্ত জায়গা অথবা পার্শিয়াল সানলাইটে রাখতে হবে।

আরো পড়ুন
আধুনিক আলু চাষে কীটনাশকের ব্যবহার ও সতর্কতা

আলু চাষে কীটনাশক ব্যবহারের প্রধান লক্ষ্য হলো পোকামাকড় ও রোগবালাই নিয়ন্ত্রণ করা, যা আলুর উৎপাদন ও গুণগত মান বজায় রাখতে Read more

আলুর আধুনিক চাষ পদ্ধতি এবং পরিচর্যা

আধুনিক চাষ পদ্ধতি অনুসরণ করলে আলুর উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পায় এবং চাষীদের লাভ বাড়ে। এতে উন্নত প্রযুক্তি, সঠিক জাত নির্বাচন, সুষম Read more

গাছটি যে পলিথিন ব্যাগ বা টবে কিনে আনা হয়েছে সেই টব অথবা পলিথিনের ব্যাগেই অন্তত সপ্তাহ খানেক রেখে আস্তে আস্তে রোদের সংস্পর্শে আনতে হবে। নতুন পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নেয়ার পর একসময় গাছটি নতুন পাতা ছাড়তে শুরু করবে। তখনই গাছটিকে পলিথিন অথবা টব থেকে বের করে মাটিতে বা টবে লাগাতে হবে। আবার নার্সারিতে গিয়ে আমরা অনেকেই সর্বপ্রথম সেই চারাগুলো পছন্দ করি যেগুলোতে ফুল অথবা ফল ধরে রয়েছে অথবা একটু বেশি লম্বা ধরনের গাছ। আর এসব গাছ বাসায় এনে রোপনের পর দেখা যায় গাছের ফুল বা ফল সব ঝরে পড়ছে ।

এমন চারাগাছ রোপনের পর ফুল ও ফল ঝরে পড়া কিংবা পাতা হলুদ হয়ে যাওয়ারও কিছু কারণ আছে। আমরা যখন কোনো গাছ নার্সারি থেকে কিনে ছোট কোনো পলিথিনে করে গাছটা বাসায় নিয়ে আসি এবং তারপর বড় কোনো ড্রাম বা টবে গাছটা রোপণ করি তখন ছোট চারাগাছ টি তার শেকড় ছড়ানোর দিকে নজর দেয় আর সব শক্তিই খরচ করে তার শেকড় ছড়ানোর কাজে।

ফলে ফুল এবং ফল গাছ থেকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি পায়না। আর এর ফলেই চারাগাছের ফুল ও ফল ঝরে পড়ে অথবা পাতা হলুদ হয়ে ঝড়ে পড়তে আরম্ভ করে।

প্রথমে ভেজা বালি ভর্তি টবে চারাটি বসিয়ে ১৫ দিন অপেক্ষা করতে হবে। ১৫ দিন পর যখন দেখা যাবে ভালো শিকড় গজিয়েছে,তখন গাছটি তুলে একটা টবে লাগিয়ে ফেলা উত্তম। পাশাপাশি ছোট সাইজের সবজির চারা এনেও সরাসরি টবে লাগানো যাবেনা। বেগুন, মরিচ, টমেটোর মত ছোট ছোট চারা এনে প্রথমে সম্ভব হলে ফাঙ্গিসাইড মিশ্রিত পানিতে চুবিয়ে তারপর কোকোডাস্ট বা বালিতে বসিয়ে দিতে হবে।তারপর কিছু দিন পর যখন শেকড় বড় হবে তখন অন্য কোথাও রোপণ করতে হবে।

কি ধরনের সার চারাগাছ রোপনে প্রয়োগ করবেন ?

চারাগাছ রোপনের প্রথম মাটিটি হবে একদম সাধারণ বেলে দোআঁশ মাটি যাতে কোন রাসায়নিক সার থাকবে না। সম্ভব হলে ৫০ শতাংশ মাটির সাথে ৩০ শতাংশ গোবর সার এবং শতাংশ বালি এবং ২০ শতাংশ কোকোপিট মিশিয়ে নিলেই নতুন চারা বসানোর মাটি তৈরি হয়ে যাবে।

ড্রামে বা টবে চারাগাছ রোপনের নিয়ম

টবে বা ড্রামে চারা লাগাতে চাইলে টব অথবা ড্রাম এর দিকেও নজর দিতে হবে যেনো ড্রাম অথবা টবের নিচে একটা দুটো ছিদ্র করা থাকে। প্রথমে টবের বা ড্রামের ঐ ছিদ্রের উপর কিছু পাথর বা ইটের ভাঙ্গা টুকরো অংশ দিয়ে তার উপর কিছু পরিমাণ বালি দিয়ে বালির বেড তৈরি করে নিতে হবে। তারপর চারা লাগতে হবে।

আর ছোট টবের ক্ষেত্রে নতুন চারা গাছ লাগানোর পর কয়েকদিন কখনোই পুরো রোদে রাখা যাবেনা। সপ্তাহ খানেক শেড এর নিচে রাখার পর রোদে রাখতে হবে। অন্তত এক মাস কোনো সার দেয়া যাবেনা। চারা রোপনোর পর যে যে কারণে গাছ মারা যায় তার মধ্যে প্রধান কারণ হলো ঘন ঘন বেশি বেশি পানি দেয়া। পানি দিলেই যে গাছ ভালো হবে এ ধারণা কিন্তু মোটেও ঠিক নয়।

সব সময় সকালে বা পড়ন্ত বিকেলে গাছে পানি দেয়া উত্তম । আবার সব গাছের পানির চাহিদাও সমান নয়। অর্থাৎ গাছের চাহিদা বুঝেই তাতে পানি দিতে হবে। সুতরাং নার্সারি থেকে চারা কিনে আনার পর এই সাধারণ কয়েকটি বিষয়ে যথাযথ সতর্কতা অবলম্বন করে তা রোপণ ও পরিচর্যা করলে গাছও ভালোভাবে বেড়ে উঠবে আর ভবিষ্যতে ফলনও সন্তোষজনক হবে।

0 comments on “চারাগাছ রোপনের নিয়ম

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *