
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, “গরুর দেশি জাত হারিয়ে যাচ্ছে—এ কথা সঠিক নয়। বরং বিদেশি জাত আমদানির প্রবণতা বাড়ছে, যা টেকসই নয়। দেশি জাত রক্ষা করেই দুধ ও মাংস উৎপাদনে সক্ষমতা বাড়াতে হবে। আমাদের আধুনিক জাত নয়, প্রয়োজন দেশীয় জাতের উন্নয়ন।”
আজ মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশে ‘দেশীয় গবাদিপশুর জাত উন্নয়ন: চ্যালেঞ্জ ও অগ্রগতির পথ’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কৃত্রিম প্রজনন বিভাগ এ সেমিনারের আয়োজন করে।
ফরিদা আখতার বলেন, “দেশীয় গরুর জাত বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে—এই ধারণা বিভ্রান্তিকর। উন্নত জাতের কথা বলে নানা বিদেশি জাত আনা হয়েছে। বলা হচ্ছে, ফ্রিজিয়ান কিংবা ক্রসব্রিড ছাড়া উপায় নেই—এ বক্তব্য প্রশ্নবিদ্ধ। আমরা যদি দেশি জাত সংরক্ষণে উদ্যোগ নেই, তাহলে এই জাত টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে। এজন্য একটি সুস্পষ্ট রোডম্যাপ নেওয়া জরুরি।”
তিনি আরও বলেন, “সিমেন (বীজ) এখন কেবল ব্যবসার পণ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। যারা বিদেশি জাত প্রমোট করেছেন, তারা অতীতে দেশীয় জাত নিয়ে নেতিবাচক কথা বলেছেন। অথচ আজ তারাই বলছেন, খামারিরা কিছু বোঝেন না। দেশীয় গরুর জাত রক্ষা করা গেলে প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের নামকরণই সার্থক হবে।”
মানুষ যেমন অঞ্চলভেদে বৈচিত্র্যময়, প্রাণীর ক্ষেত্রেও তেমন বৈচিত্র্য রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “জোনভিত্তিক দেশীয় গরুর জাত সংরক্ষণের প্রকল্প গ্রহণ করা প্রয়োজন। দেশীয় জাত পালনে কৃষকদের জন্য প্রণোদনা দিতে হবে। উপযুক্ত সহায়তা পেলে কৃষকরাই দেশি জাত রক্ষায় অগ্রণী ভূমিকা রাখবেন।”
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. আবু সুফিয়ান। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়া, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নীলুফা আক্তার এবং বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক শাকিলা ফারুক।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কৃত্রিম প্রজনন দপ্তরের উপপরিচালক ড. মো. সফিকুর রহমান। আলোচনায় অংশ নেন অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) ডা. মো. বয়জার রহমান। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন কৃত্রিম প্রজনন দপ্তরের পরিচালক কৃষিবিদ মো. শাহজামান খান।
সেমিনারে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।