রাজশাহীর তানোরের বিখ্যাত আদর্শ কৃষক ইউসুফ আলী মোল্লা আর নেই। মারা গেছেন স্বনামধন্য এই আদর্শ কৃষক। মৃত্যুর আগে প্রায় ২১৫ জাতের ধানের জীবিত বীজ রেখে গেছেন। রাজশাহীর তানোরের কৃষক ইউসুফ আলী মোল্লা প্রতিষ্ঠা করে গেছেন বরেন্দ্র বীজ ব্যাংক।
৭৮ বছর বয়সে তিনি মারা গেছেন
গত শুক্রবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে নিজ বাসভবনে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
মৃত্যুর সময় এই কৃষক এর বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর।
বিকেল সোয়া ৪ টায় দুবইল উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে তার জানাজা শেষ হয়।
জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
রাজশাহী শহর থেকে প্রায় ৪৫ কিলোমিটার দূরে তানোরের দুবইল গ্রাম।
এই গ্রাম এর বেশির ভাগ বাড়িই মাটির বাড়ি।
ইউসুফ মোল্লা বীজ সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেন তার মাটির বাড়ি ও ঘরের ভেতরেই।
বর্তমানে তার সংগ্রহশালায় ৩১০ জাতের ধানের বীজ সংরক্ষিত রয়েছে।
এর মধ্যে ২১৫টি জীবিত বীজের জাত রয়েছে।
বীজ আদান-প্রদানের মাধ্যমে বিরল ও ঐতিহ্যবাহী জাতের ধান সংরক্ষণ করেছিলেন তিনি।
এ জন্য সারা দেশে ইউসুফ মোল্লা খ্যাতি অর্জন করেছিলেন।
মৃত্যুর আগে তার ফুসফুসে ক্যানসার ধরা পড়ে
ইউসুফ মোল্লার ছেলে গোলাম মোস্তফা।
তিনি জানান, প্রায় ছয় মাস আগে তার বাবার ফুসফুসে ক্যানসার ধরা পড়ে।
হাসপাতালে কিছু দিন থাকার পর তার চিকিৎসা বাসায় চলছিল।
শুক্রবার সকাল সাড়ে ৭টায় তিনি বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েন।
কিছুক্ষণ পর তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।
হাইব্রিড জাতের প্রভাবে ঐতিহ্যবাহী ও সমৃদ্ধ দেশীয় ধানের প্রজাতিগুলোকে রক্ষা করতে তিনি উদ্যোগ গ্রহণ করেন।
আর তাই ইউসুফ মোল্লা ৫০ বছর আগে নিজ বাড়িতে বীজ সংগ্রহ শুরু করেছিলেন।
বেসরকারি সংস্থা ‘বারসিক’-এর সহায়তায় ‘বরেন্দ্র বীজ ব্যাংক’ প্রতিষ্ঠা করেন ইউসুফ মোল্লা।
তারপর বিভিন্ন জেলার কৃষকদের নিয়ে ধানের জাতের এক বিপুল সম্ভার গড়ে তোলেন তিনি।
লুপ্ত ধান সংরক্ষক হিসেবেেই তার পরিচিতি ছিল তা নয়।
তানোর নদী রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক, তানোর সাহিত্য পরিষদের উপদেষ্টা ও বিশিষ্ট সমাজসেবক ছিলেন তিনি।
ইউসুফ মোল্লা ২০১৩ সালে ধানের বীজ সংরক্ষণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পরিবেশ পদক গ্রহণ করেন।
প্রতিবছর তার প্রতিষ্ঠিত ‘বরেন্দ্র কৃষিবীজ ব্যাংক’-এর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে তিনি বীজ বিনিময় উৎসবের আয়োজন করতেন।
সেই উৎসব ছিল গত বছরের ২৬ জানুয়ারি।
বিভিন্ন সরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠানেও তার সংগৃহীত ধান ব্যবহৃত হচ্ছে।
মৃত্যুর সময় তিনি স্ত্রী, তিন ছেলে, এক মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।