আধুনিক চাষ পদ্ধতি অনুসরণ করলে আলুর উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পায় এবং চাষীদের লাভ বাড়ে। এতে উন্নত প্রযুক্তি, সঠিক জাত নির্বাচন, সুষম সার প্রয়োগ, এবং সময়মতো পরিচর্যার বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত থাকে। নিচে আধুনিক পদ্ধতিতে আলু চাষের ধাপগুলো তুলে ধরা হলো:
১. উন্নত জাত নির্বাচন
- উচ্চ ফলনশীল, রোগ প্রতিরোধী এবং স্থানীয় জলবায়ুর উপযোগী জাত নির্বাচন করুন।
- জনপ্রিয় জাতসমূহ: ডায়মন্ড, কার্ডিনাল, কুফরি, লাল পাকড়ি।
২. জমি প্রস্তুতি
- মাটি ভালোভাবে চাষ করুন এবং ঝুরঝুরে করুন।
- দোঁআশ বা বেলে দোঁআশ মাটি আলু চাষের জন্য উপযোগী।
- জমির pH মান ৫.৫-৬.৫ এর মধ্যে রাখুন।
- জৈব সার যেমন গোবর সার, ভার্মি কম্পোস্ট মাটিতে মিশিয়ে দিন।
৩. বীজ বাছাই ও রোপণ
- গুণগত মানসম্পন্ন বীজ আলু ব্যবহার করুন।
- প্রতি আলুর ওজন ৩৫-৫০ গ্রাম হলে ভালো।
- বীজ আলু রোপণের আগে ট্রাইকোডার্মা বা কার্বেন্ডাজিম দিয়ে শোধন করুন।
- আলুর টুকরা করলে কাটার পর তা ছায়ায় শুকিয়ে নিন।
৪. রোপণ প্রক্রিয়া
- কন্দ রোপণের জন্য সারি ও গাছের দূরত্ব বজায় রাখুন:
- সারির দূরত্ব: ৫০-৬০ সেন্টিমিটার।
- গাছ থেকে গাছের দূরত্ব: ২০-২৫ সেন্টিমিটার।
- ১০-১২ সেন্টিমিটার গভীর গর্তে কন্দ রোপণ করুন।
- মাটি দিয়ে গর্ত ঢেকে দিন।
৫. সার প্রয়োগ
- সুষম পরিমাণে জৈব ও রাসায়নিক সার প্রয়োগ করুন।
- বেড প্রস্তুতির সময় প্রাথমিকভাবে:
- ইউরিয়া: ১০০ কেজি
- টিএসপি: ১৫০ কেজি
- এমওপি: ১০০ কেজি প্রতি একর জমিতে দিন।
- গাছের বৃদ্ধির সময় প্রয়োজনমতো ইউরিয়া ও এমওপি সেচের মাধ্যমে যোগ করুন।
৬. সেচ ব্যবস্থাপনা
- রোপণের পর প্রথম সেচ দিন।
- মাটি শুকিয়ে গেলে পর্যায়ক্রমে ৩-৪ বার সেচ দিন।
- আধুনিক ড্রিপ ইরিগেশন সিস্টেম ব্যবহার করলে পানি সাশ্রয় হবে।
৭. আগাছা দমন ও মাটি চাষ
- আগাছা নিয়ন্ত্রণের জন্য আগাছানাশক ব্যবহার করুন অথবা হ্যান্ড হো চাষ দিন।
- আলুর গাছের গোড়ায় মাটি তুলে দিন, যা আলুর বৃদ্ধি সহজ করে।
৮. রোগবালাই প্রতিরোধ
- রোগবালাই থেকে সুরক্ষার জন্য নিয়মিত ছত্রাকনাশক এবং কীটনাশক ব্যবহার করুন।
- সাধারণ রোগ:
- লেট ব্লাইট: ম্যানকোজেব বা মেটালাক্সিল স্প্রে করুন।
- গোল্ডেন নিমাটোড: নিমপাতার নির্যাস বা কার্বোফিউরান প্রয়োগ করুন।
আলু চাষে কীটনাশকের ব্যবহার নিয়ে বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন।
৯. ফসল সংগ্রহ
- রোপণের ৯০-১০০ দিনের মধ্যে আলু সংগ্রহের উপযুক্ত হয়।
- গাছের পাতা হলুদ হয়ে যাওয়ার পর মাটি থেকে আলু উত্তোলন করুন।
- উত্তোলনের পর ২-৩ দিন ছায়ায় শুকিয়ে নিন।
১০. সংরক্ষণ
- আলুকে শুকিয়ে ঠাণ্ডা এবং শুষ্ক স্থানে সংরক্ষণ করুন।
- আধুনিক কোল্ড স্টোরেজে আলু সংরক্ষণ করলে মান ভালো থাকে।
আধুনিক পদ্ধতির উপকারিতা:
- উচ্চ ফলনশীলতা।
- রোগবালাই কম হয়।
- উৎপাদন খরচ কম।
- ভালো মানের আলু উৎপাদন।
আধুনিক প্রযুক্তি ও সঠিক ব্যবস্থাপনা মেনে চললে আলু চাষ থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে লাভ করা সম্ভব।