উপকূলীয় অঞ্চল কুয়াকাটা সম্প্রতি লন্ডভন্ড হয়ে গেছে ঘুর্ণিঝড় আম্পানের তান্ডবে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে উপকূলীয় সবুজ বেষ্টনী প্রকল্প এবং সংরক্ষিত বন। উপড়ে পড়েছে ঝাউগাছ সহ প্রায় কয়েক হাজার গাছ। মাইলের পর মাইল ঝড়ো হাওয়ায় পড়ে গেছে অসংখ্য গাছ। প্রবল ঢেউয়ের তোড়ে বিলীণ হয়ে গেছে সৈকতে অবস্থিত বেশিরভাগ গাছ পালা। বনবিভাগের সূত্রানুসারে, এই ক্ষতির পরিমান এতই বেশি যে তা পূরণ করা কতটা সম্ভব তাতে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।
উপকূলীয় সবুজ বেষ্টনীর প্রয়োজনীয়তা যে অপরিহার্য তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা। প্রাকৃতিক দুর্যোগের দেশ বাংলাদেশে তার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। প্রতিবছর বিভিন্ন প্রকার ঘূর্ণিঝড়ে যে পরিমান ক্ষতি হতে পারতো তার অনেকটাই কমিয়ে দেয় এই উপকূলীয় বনভূমি। তবে সমসাময়িক ঝড়ে প্রচুর পরিমানে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও তার ক্ষতি পূরনে তেমন কোন উদ্যোগ নজরে পড়েনি কখনো। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় আম্পানের কারণে হওয়া ক্ষতি এ যাবতকালের মত খুব বেশি বলে মনে করছেন সকলে।
প্রতি বছর ঘূর্ণিঝড়ের কবলে বন ও সবুজ বেষ্টনীর ধ্বংস হবার ফলে পরিবেশের উপর মারত্মক প্রভাব পড়ছে বলে মনে করে পরিবেশবাদী সংগঠন ‘বেলা’। সংগঠনটির বরিশাল বিভাগীয় সমন্বয়কারী বন ও সবুজ বেষ্টনীর ক্ষতির বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
উপকূলীয় বনভূমি উপকূলকে বিভিন্ন ঝড় থেকে সবসময় রক্ষা করে আসছে। এই বন না থাকলে সিডর আইলা বা নার্গিস এর মত ঝড়ে আরও বেশি ক্ষতি হতে পারতো। এসকল ঝড় মোকাবিলা করে উপকূলীয় েএ বনভূমি মানুষের জীবন ও সম্পদ রক্ষাকারী হিসেবে কাজ করেছে। পরিবেশবিদ রা মনে করেন, উপকূলীয় বনাঞ্চলের কারণে ঘূর্ণিঝড় সেভাবে আঘাত হানতে পারেনি। এই বনাঞ্চলের অনুপস্থিতিতে এই তান্ডব আরও বড় হতে পারতো বলে তারা মতামত দেন।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, উপকূলে যে বায়ুর গতিবেগ ঘন্টায় ১০০ মাইলেরও বেশি তা এই উপকূলের বনভূমির উপস্থিতির জন্য লোকালয়ে গিয়ে দমকা হাওয়ায় রূপ নেয়। আর তাই প্রতিবছর উপকূল ভাগ অভ্যন্তরীণ স্থলভাগ থেকে বেশি পরিমানে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।উদাহরন স্বরূপ ২০০৭ সালের সিডর ও ২০০৯ সালের আইলার কথা উল্লেখ করে বিশেষজ্ঞরা অভিমত প্রকাশ করেন যে, উপকূলীয় বনভূমির যে ক্ষতি সাধন হয়েছে তা দ্রুত পুনরুদ্ধারের জন্য বিশেষভাবে পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন।স্থানীয় অধিবাসীরা মনে করেন সিডর-আইলার মত ক্ষতিগ্রস্ত না হলেও এবারের ক্ষতি পূরণ হতে অনেক সময় লাগবে। সেক্ষেত্রে উপকূলবাসী সরকার ও বনবিভাগের সু-নজর কামনা করছেন।