উজানের পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় কোমর পানিতে নেমে আধাপাকা ধান কাটতে হচ্ছে কৃষককে। এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে কুড়িগ্রাম জেলার প্রায় শতাধিক চরের মানুষের। আধাপাকা ধান কাটছে কৃষক, তলিয়ে গেছে বোরোর ফলন। এ জেলার ১৬টি নদী তীরবর্তী চরাঞ্চলসমূহে উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানি প্রবেশ করায় ডুবে গেছে নিম্নাঞ্চলের অধিকাংশ জমি। ফলে ডুবে যাওয়া আধাপাকা ফসল কাটতে বাধতে হচ্ছেন কৃষক ও তাদের পরিবার।
শনিবার কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার দুধকুমার নদের তীরবর্তী বিভিন্ন চরে গিয়ে দেখা যায় যে ধানের জমিগুলো প্রায় কোমর সমান পানিতে ডুবে আছে। বিশেষত খাসের চর, চর রাউলিয়া, প্রথম আলোর চর, রলাকাটা, গোয়ালিপুরী, উলিপুর উপজেলার আইরমারী, নাগেশ্বরী উপজেলার ব্যাপারির চর, চর কাফনা, কালীগঞ্জ উপজেলার কাঠগিরািই চর ইত্যাদি অঞ্চলে ক্ষতির পরিমান বেশি।এছাড়াও ব্রহ্মপুত্র নদের অববাহিকায় গিয়ে দেখা যায় যে নদ ফুলে-ফেপে উঠেছে।
এরূপ অনাহুত পরিস্থিতিতে কৃষকেরা চরম বিপাকে পরেছেন।স্থানীয় কৃষক ও কৃষি কর্মকর্তার অফিস হতে জানা যায় যে এ সকল চরের অধিকাংশ মানুষই দিন-মজুর অথবা জেলে। করোনা পরিস্থিতিতে একে কোন কাজ নেই তার উপর ঝড়-বৃষ্টিতে প্রচুর ক্ষতি হয়েছে, সেই সাথে এখন এই পানি। রাউলিয়ার চরের কৃষক মোশারফ হোসেন বলেন, ‘সর্বনাশ হয়ে গেল ভাই। ফলন ভালো হলেও ডুবি গেইছে।’ গোয়ালিপুরের কৃষক জানান যে তিনি দেড়বিঘা জমিতে বোরো চাষ করেছিলেন কিন্তু সব ডুবে যাওয়ায় তিনি এখন পথে বসেছেন। অপর এক কৃষক জানান যে এই সময় কখনও তারা এত পানি দেখেননি, শুধু ধান নয়, শাক-সবজিও ডুবে গেছে ।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা জানান যে সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন, কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন নির্দেশনা আসেনি। তিনি আরও জানান যে আম্পানের পর থেকে এখন অবধি কৃষিতে ক্ষতির পরিমান ১কোটি টাকারও বেশি।
কুড়িগ্রাম পাউবো নির্বাহী জানান, গত এক সপ্তাহে নদ-নদীর পানি বেড়েছে প্রায় ১০-১২ ফুট, যার দরুন চরের নিচু এলাকায় পানি জমেছে। তবে খুব দ্রুতই পানি নেমে যাবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যাক্ত করেন।
অনাকাঙ্খিত ও অসময়ে বন্যার ফলে তলিয়ে গেছে বোরোর ফলন। পরিবারের সদস্য নিয়ে তাই তাড়াহুড়ো করে আধাপাকা ধান কাটছেন কৃষক, আশা করছেন ক্ষতির পরিমান যেন কিছুটা কমে। তবে তা আদৌও কতটুকু কমাতে পারবে তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।