Thursday, 25 April, 2024

সর্বাধিক পঠিত

হাওরে বোরো ধান কাটায় ব্যস্ত কৃষক


সুনামগঞ্জের হাওর অঞ্চলে বোরো ধান কাটায় ব্যস্ত কৃষকেরা। চলতি মৌসুমে ৪ হাজার শ্রমিকের পাশাপাশি ধান কাটায় ২৪৩টি যন্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে।

তবে শ্রমিক সংকটের কারণে বিভিন্ন স্থানে ধানকাটা ব্যাহত হচ্ছে বলে জানা গেছে।

সরকারি হিসেব অনুযায়ী, বুধবার (১৪ এপ্রিল) পর্যন্ত জেলায় চাষাবাদের মোট প্রায় ৫ ভাগ ধান কাটা হয়েছে। হাওরের ধান যাতে দ্রুত কাটা হয় সে লক্ষ্যে এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ২৪৩টি ধান কাটার মেশিনসহ বাইরের জেলা থেকে ৪ হাজারেরও অধিক শ্রমিক হাওরে নিয়ে আসা হয়েছে। আগামী সপ্তাহেই হাওরে ধান কাটার ধুম পড়বে বলে জানান কৃষকরা।

আরো পড়ুন
কাপ্তাই হ্রদে মাছের প্রজনন রক্ষার্থে তিন মাস মাছ শিকার বন্ধ

কাপ্তাই হ্রদে কার্প জাতীয় মাছের প্রজনন ও বংশবৃদ্ধির উন্মুক্ত স্থান। প্রজনন ক্ষেত্র বাচানোর জন্য রাঙ্গামাটির কাপ্তাই হ্রদে ২৫ এপ্রিল থেকে Read more

বোরো মৌসুমের ধান ও চালের সংগ্রহ মূল্য নির্ধারণ

এবারের ২০২৪ সালের বোরো মৌসুমের ধান ও চালের সংগ্রহ মূল্য নির্ধারণ করেছে সরকার। আজ রবিবার মন্ত্রিপরিষদ সভাকক্ষে খাদ্য পরিকল্পনা ও Read more

কৃষি বিভাগের মতে, জেলায় চলতি বছর ২ লাখ ১৯ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত করা হলেও আবাদ হয়েছে ২ লাখ ২৩ হাজার ৩৩০ হেক্টর। এর মধ্যে বিআর ২৮ ধান ৬৭ হাজার হেক্টর এবং বিআর ২৯ ধান আবাদ হয়েছে ৬৩ হাজার হেক্টর জমিতে। বাকি ধান হাইব্রিডসহ কিছু দেশীয় প্রজাতিও রয়েছে। বর্তমানে বিআর ২৮ ও দেশি প্রজাতির ধান কাটছেন কৃষকরা। আগামী সপ্তাহের মধ্যে পুরোদমে ধান কাটার ধুম পড়বে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।

আবহাওয়া অধিদপ্তর বৈশ্বিক আবহাওয়া সংস্থাসমূহের গাণিতিক মডেল পর্যালোচনা করে পূর্বাভাস দিয়েছে, ১১ এপ্রিল থেকে ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত বাংলাদেশের উত্তরপূর্বাঞ্চলে বৃষ্টিপাত হবে। হাওরের মাথার ওপর অবস্থিত আসাম, ত্রিপুরা ও মেঘালয়েও বৃষ্টিপাত হবে। এতে হাওরাঞ্চলে আকস্মিক বন্যা হতে পারে।

কৃষি বিভাগের সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ভারতের মেঘালয় ও আসামে ভারী বৃষ্টিপাত হলে সুনামগঞ্জে ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে পানি বৃদ্ধি পায়। এই পানি হাওরে প্রবেশ করে বোরো ফসলকে ঝুঁকিতে ফেলে দেয়। যে কারণে হাওরে ফসলহানির আশঙ্কা থাকে। যার ফলে কৃষকরাও উদ্বিগ্ন থাকেন।

জানা গেছে, এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেকোনো মূল্যেই হাওরের বোরো ধান কাটতে সব ধরনের নির্দেশনা দিয়েছেন। হাওরে বোরো ফসল রক্ষায় তিনি এ বছর ১৩৬ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন। বাঁধের কাজ শেষ হওয়ার পর এখন ফসল পাকার উপক্রম হয়েছে। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখে দাঁড়িয়ে থাকা অসহায় কৃষকের কষ্টের ধান যাতে শ্রমিকের অভাবে ক্ষেতে নষ্ট না হয় সেদিকে সতর্ক থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। প্রতিদিনই কৃষি মন্ত্রণালয় ও জেলা প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা হাওরে ঘুরছেন।

এর মধ্যে হাওরের ধান কাটতে সরকারিভাবে ৮৯টি ধান কাটার মেশিন বিতরণ করা হয়েছে। গতবারের বিতরণকৃত আরো ১২৯টি মেশিনও হাওরে কাজ করছে। তা ছাড়া কৃষকদের অনেকেই ব্যক্তিগত উদ্যোগে আরো ২৫টি মেশিন হাওরে নামিয়েছেন। স্থানীয় ১ লাখ ৮৩ হাজার শ্রমিকও ধান কাটছেন বিভিন্নভাবে। তা ছাড়া স্থানীয় বালু ও পাথর মহাল বন্ধ থাকায় সেখানকার শ্রমিকরাও হাওরের ধানকাটায় এসে যুক্ত হবেন বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

হাওরের কৃষকরা জানিয়েছেন, এ বছর মৌসুমি বৃষ্টি না হওয়ায় ধানের ফলন কমেছে। অনেকের ক্ষেত পরাগায়ণের সময় গরম বাতাসে হয়ে নষ্ট গেছে। তা ছাড়া কমবেশি সব কৃষকের জমিতেই বৃষ্টির অভাব বাম্পার ফলনের সম্ভাবনাটা নষ্ট করেছে বলে জানিয়েছেন তারা। তবে কৃষি বিভাগ বলেছে, বাম্পার ফলনে বড় কোনো প্রভাব পড়বে না। পুরো ফসল গোলায় তুলতে পারলে লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহত হবে না।

সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. ফরিদুল হাসান বলেন, ধান কাটতে বাইরের জেলা থেকে শ্রমিক নিয়ে আসার পাশাপাশি প্রায় আড়াই শ ধান কাটার মেশিন হাওরে রয়েছে। এ মাসের মধ্যেই আমরা আশা করছি ৮০ ভাগ ধান কাটা শেষ হবে। তিনি বলেন, অতিবৃষ্টি ও অনাবৃষ্টিতে কিছু চিটা হয়। তবে এবার হাওরের গড় ফলনে এতে কোনো প্রভাব পড়বে না। শ্রমিকেরও অভাব হবে না। প্রাকৃতিক বড় দুর্যোগ না এলে এবারও কাঙ্ক্ষিত ফলন আসবে হাওর থেকে। আজ পয়লা বৈশাখেও দলে দলে কৃষকরা মাঠে নেমেছেন।

সুনামগঞ্জ-৩ আসনের এমপি ও পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী হাওরবাসীর প্রতি খুবই আন্তরিক। হাওরের ফসল গোলায় তুলতে সব ধরনের নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।

তিনি বলেন, একসময় বাইরের জেলার শ্রমিকরা আসা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। কিন্তু গত বছর থেকে তারা আবার আসতে শুরু করেছেন। তাই আমাদের ফসল কাটার উদ্বেগ কমেছে। এবারও হাওরবাসীর মুখে হাসি ফোটাবে বোরো ধান।

0 comments on “হাওরে বোরো ধান কাটায় ব্যস্ত কৃষক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *