আমাদের দেশে লেয়ার মুরগির তুলনায় ডিমপাড়া হাঁসের খামার খুবই কম। বাজারে হাঁসের ডিমের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। অনেকেই খামারের মুরগির ডিম খেতে কম পছন্দ করেন, কারণ- কখনো কখনো লেয়ার খামারে এন্টিবায়টিকসহ বিভিন্নি প্রকার ওষুধের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার হয়ে থাকে।
ডিম অথবা মাংস উৎপাদনে হাঁসের বিকল্প নাই। বাংলাদেশে বর্তমানে ডিম উৎপাদনের উদ্দেশ্যে হাঁস পালন ক্ষেত্রে বেশ জনপ্রিয় হাঁসের জাত খাকি ক্যাম্পবেল (Khaki Cambell) জাতের হাঁস। ইংল্যান্ডের এই সংকর জাতটির হাঁসের রং খাকি বলে এর নাম খাকি ক্যাম্পবেল। ক্যাম্পবেল নামক এক মহিলা ১৯০১ সালে ইংল্যান্ডের বিভিন্ন জাতের হাঁসের মধ্যে সংকরায়ন ঘটিয়ে এ জাত সৃষ্টি করেন।
আজকের আমাদের আলোচনা উচ্চ ডিম ও সুস্বাদু মাংস উৎপাদন সম্পন্ন খাকি ক্যাম্পবেল হাঁসের পালন ব্যবস্থাপনা নিয়ে।
কেন খাকি ক্যাম্পবেল হাঁসের চাষ করবেন ?
১. বছরে ২৮০-৩০০টি ডিম দেয়। ২-৩ বছর বয়স পর্যন্ত ডিম দেয়, সেখানে লেয়ার মুরগি ডিম দেয় দেড় বছর পর্যন্ত।
২. সবাই হাঁসের ডিম খেতে পছন্দ করেন।
৩. হাঁসের বাচ্চার দাম খুব কম ১২ টাকা সেখানে মুরগির বাচ্ছার দাম ৬০-৬৫ টাকা।
৪. হাঁসের ডিমের সাইজ বড়।
৫. ১ হাজার মুরগির চেয়ে ১ হাজার হাঁস পালন করলে বেশি লাভবান হওয়া যাবে।
৬. ডিম উৎপাদন কমে গেলে ৩ বছর পর হাঁসগুলো মাংস হিসেবে বাজারে বিক্রি করা যাবে। হাঁসের মাংস মুরগির চেয়ে সুস্বাদু।
৭. মুরগি সব দিন ধরে ডিম দেয় কিন্তু হাঁস সকাল ৯টার মধ্যে ডিম পাড়া শেষ করে। ফলে নজরদারির খরচ কম লাগে।
৮. খাকি ক্যাম্পবেল হাঁস ১৭-১৮ সপ্তাহ বয়সেই ডিম দেয়।
৯. নওগাঁ, নারায়ণগঞ্জ, খুলনা ও ফেনী সরকারি হাঁস প্রজনন খামার থেকে ১ দিনের বাচ্চা সংগ্রহ করা যাবে।
খাকি ক্যাম্পবেল (Khaki Cambell) হাঁসের বাসস্থান
হাঁস চাষে মুরগির মতো ততো ভালো বাসস্থান না হলেও চলে। পুকুর, ডোবা বা জলাশয়ে হাঁস পালন করলে শুধু রাতের ঘরের প্রয়োজন হয়। এ ক্ষেত্রে হাঁস প্রতি ৭৫ বর্গ সেন্টিমিটার (প্রায় ২.৫ বর্গফুট) জায়গা হলেই চলবে। সম্পূর্ণ আবদ্ধ অবস্থায় মেঝেতে হাঁস-পালন করলে প্রতি হাঁসের জন্য ১২০ বৰ্গ সেন্টিমিটার (প্রায় ৪ বৰ্গফুট) জায়গার প্রয়োজন হয়।
এ ছাড়া হাঁসের চরবার জন্য ঘরে সঙ্গে কিছু ঘেরা জায়গা রাখলে ভালো হয়। হাঁসের ঘরের উচ্চতা ১৫০ সেন্টিমিটার (৫ ফুট) করলেই চলবে। মেঝে স্যাতসেঁতে হলে ঠান্ডা লেগে হাঁসের অসুখ হতে পারে। ঘরের মেঝে পাকা হওয়া ভালো, তবে মাটিরও করা যায়।
মেঝে সব সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন রাখতে হবে। ঘরে যাতে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস চলাচল করতে পারে তা লক্ষ রাখতে। ৩০০ বর্গফুট স্থানের জন্য ১টি ৬০ ওয়াটের বাল্ব দরকার।
খাদ্যের পরিমাণ ও খাদ্য প্রদানের নিয়মঃ
পুকুর বা জলাশয়ে হাঁস পালন করলে খুব কম খাবারের প্রয়োজন হয়। সেক্ষেত্রে হাঁসকে প্রতিদিনে ৫০-৬০ ভাগ খাবার দিলেই চলে। তবে সম্পূর্ণ আবদ্ধ অবস্থায় হাঁস পালন করলে হাঁসপ্রতি বেশি পরিমাণে খাবারের প্রয়োজন হয়। ৮ সপ্তাহ বয়স অবধি একটি হাঁসের জন্য ৪-৫ কেজি এবং ২০ সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত প্রতিটি হাঁসের জন্য ১২-১৩ কেজি সুষম খাদ্যের প্রয়োজন হয়।
হাঁসকে নির্দিষ্ট পাত্রে খাবার দিতে হবে। পানি মিশিয়ে খাদ্য বা ম্যাশ নরম করে দিলে হাঁস তা সহজে খেতে পারে । খাবার মুখে নিয়েই হাস পানিতে মুখ দেয় বলেই খাবার পাত্রের কাছে সব সময় পানির পাত্র রাখতে হবে।
পূর্ণ বয়সে অর্থাৎ ডিম পাড়া অবস্থায় প্রতিটি হাঁসের জন্য গড়ে বছরে ৫০ কেজি সুষম খাবার লাগে। ২০ সপ্তাহের পরে ডিম পাড়ার হারের ওপর নির্ভর করে প্রতিটি হাঁসের জন্য দৈনিক ১২৫-১৫০ গ্রাম খাবারের প্রয়োজন হয়।
মুক্ত জায়গায় হাঁস পালনের ক্ষেত্রে সকালে একবার এবং বিকালে হাঁসকে ঘরে আনার সময় আর একবার মাোট দু’বার অল্প করে খাবার দিলেই চলবে। সম্পূর্ণ আবদ্ধ অবস্থায় হাঁস পালনের ক্ষেত্রে দৈনিক মোট প্রয়োজনীয় খাবারকে তিন ভাগে ভাগ করে তিন বারে দিতে হবে। পানির পাত্রে সবসময়ই পরিষ্কার পানি রাখতে হবে।
বিভিন্ন অবস্থায় খাকি ক্যাম্পবেল হাঁসের খাদ্য তালিকা নিচে দেখানো হলো (একটি আদর্শ খামারে ব্যবহৃত) :
খাদ্যের উপাদান কেজি/১০০ কেজি | স্টাটার হাঁস (০-৩ সপ্তাহ) | গ্রোয়ার হাঁস (৪-২০ সপ্তাহ) | লেয়ার হাঁস (২০ সপ্তাহের বেশি) |
ভূট্টা ভাঙ্গা | ৬১.৫০ | ৬১.০০ | ৬৭.০০ |
সয়াবিন মিল | ২৬.০০ | ১৬.০০ | ১৯.০০ |
মাছের গুঁড়া | ৮.০০ | ৮.০০ | ৬.০০ |
লুসার্ন পাতা গুঁড়া | ২.০০ | ২.৫০ | ২.৫০ |
শামুক-গুগলির খোলা ভাঙা | – | – | ৩.০০ |
খনিজ পদার্থের মিশ্রন | ২.৫০ | ২.৫০ | ২.৫০ |
প্রতি ১০০ কেজি খাদ্যে ৩৫ গ্রাম রোভিমিক্স বা ভিটাব্লেন্ড, ৫ গ্রাম নিয়াসিন এবং ৩৫ গ্রাম কোলিন ক্লোরাইড মেশাতে হবে।
খাঁকি ক্যাম্পবেল হাঁসকে দৈনিক খাবার দেওয়ার হার
০-৪ সপ্তাহ – দৈনিক ৪ বার।
৪-৮ সপ্তাহ – দৈনিক ৩ বার।
৮ সপ্তাহের উপর – দৈনিক ২ বার।
হাঁসের রোগ ও প্রতিষেধক ব্যবস্থা
খামারকারীকে হাঁসের মারাত্নক দুটি রোগ ডাক-প্লেগ ও ডাক-কলেরার অবশ্যই টিকা দিতে হবে। দুটি টিকা ও প্রয়োজনীয় পরামর্শের জন্য খামারকারীকে যেতে হবে নিকটস্থ পশু চিকিৎসা কেন্দ্রে।
৩ সপ্তাহ বয়সে বুকের মাংসে ১ সষ ডাক প্লেগ টিকা দিতে হয়।
১৫ দিন পর পুনরায় বুকের মাংসে ডাক প্লেগ টিকা দিতে হবে।
৭০ দিন বয়সে কলেরার টিকা ১/স ।
১৩০ দিন বয়সে আবার কলেরার টিকা দিতে হবে
গবাদি পশু ও পাখি পালন নিয়ে আপনি আমাদের লেখা পড়তে ক্লিক করুন।