ফিরে আসছে বিলুপ্তপ্রায় আগুন চোখা মাছ ‘আংগুস’। দেখতে যেমন সুন্দর, খেতেও সুস্বাদু। অঞ্চলভেদে আংগুস মাছ আগুন চোখা, আংরোট ও কারসা নামেও পরিচিত। নদীর এ মাছটি দেশের নদ-নদীগুলোতে একসময় বেশ মিলত। কিন্তু বর্তমানে আংগুস মাছটির দেখা নেই বললেই চলে।
২০১৮ সালে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের সৈয়দপুর স্বাদু পানি উপকেন্দ্রে তিস্তা, চিকলী ও আত্রাই থেকে আংগুসের পোনা সংগ্রহ করে গবেষণা শুরু করে। পরে ২০২০ সালের শেষের দিকে বিজ্ঞানীরা মাছটির কৃত্রিম প্রজননে সফলতা পান।
গবেষকরা বলছেন, মিঠা পানির আংগুস মাছ আকারে ৩০০ গ্রাম পর্যন্ত হয়। একটি স্ত্রী আংগুস মাছের ডিম ধারণক্ষমতা আকারভেদে ২০-৫০ হাজারটি। সাধারণত মাছটি ৬০-৭০ গ্রাম হলেই পরিপক্ব ও প্রজননক্ষম হয়ে যায়। এর প্রজননকাল মে মাস থেকে আগস্ট পর্যন্ত। তবে জুন-জুলাই মাসে সর্বোচ্চ প্রজনন হয়।
ইনস্টিটিউট সূত্রে জানা গেছে, আংগুস মাছ তিস্তা অববাহিকার মাছ। এ মাছটি বর্তমানে বিপন্নের তালিকাভুক্ত। ফলে মাছটি সংরক্ষণের লক্ষ্যে ইনস্টিটিউট থেকে গবেষণা পরিচালনা করে এরই মধ্যে কৃত্রিম প্রজনন ও অন-স্টেশন চাষ প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে। এখন মাঠপর্যায়ে এর পরীক্ষামূলক চাষাবাদ চলছে। নীলফামারী থেকে পরিচালিত একটি গবেষণা প্রকল্পের আওতায় বৈরালী মাছের সঙ্গে বিলুপ্তপ্রায় আংগুস মাছের মিশ্রচাষ করা হচ্ছে। চাষির পুকুরে মাছের দৈহিক বৃদ্ধির হার এবং পানির ভৌত রাসায়নিক গুণাগুণ পেতে নিয়মিত গবেষকরা তদারকি করছেন।
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ জানান, মাছটি প্রায় হারিয়ে যাচ্ছিল। এর কৃত্রিম প্রজনন প্রযুক্তি উদ্ভাবিত হওয়ায় পোনা প্রাপ্তি সহজ হয়েছে এবং এই মাছটিও শিগগিরই চাষাবাদে আনার জন্য আমরা চেষ্টা করছি। আমাদের বিজ্ঞানীরা এরই মধ্যে মাছটি চাষাবাদ করে প্রাথমিকভাবে সফলতাও পেয়েছেন।
উল্লেখ্য, দেশের বিলুপ্তপ্রায় মাছ সংরক্ষণে এরই মধ্যে বেশ সাফল্য দেখিয়েছে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট। বিলুপ্তপ্রায় ৬৪ প্রজাতির মাছের মধ্যে এ প্রতিষ্ঠানটি এ পর্যন্ত ৪০ প্রজাতির মাছকে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে।