![শিং মাছ](https://i0.wp.com/agrobd24.com/wp-content/uploads/2020/05/%E0%A6%B6%E0%A6%BF%E0%A6%82-%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%9B%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%AD%E0%A6%9C%E0%A6%A8%E0%A6%95-%E0%A6%9A%E0%A6%BE%E0%A6%B7-%E0%A6%AA%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%A7%E0%A6%A4%E0%A6%BF.jpg?resize=1118%2C400&ssl=1)
দেশি শিং মাছের পোনা হ্যাচারিতে উৎপাদনের কলাকৌশল বেশ সূক্ষ্ম ও যত্নশীল প্রক্রিয়া। এটি মূলত ব্রুড মাছের নির্বাচন, প্রজনন, ডিম সংগ্রহ, রেনু উৎপাদন ও পরিচর্যার ওপর নির্ভর করে। নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো—
১. ব্রুড মাছ নির্বাচন ও সংরক্ষণ
- ১২০-১৫০ গ্রাম ওজনের সুস্থ ও পরিণত শিং মাছ (Heteropneustes fossilis) ব্রুড মাছ হিসেবে নির্বাচন করা হয়।
- ব্রুড মাছের জন্য বিশেষভাবে প্রস্তুত পুকুরে (৩-৪ ফুট গভীর) সংরক্ষণ করতে হয়।
- প্রতি ১০০০ লিটার পানির জন্য ১০০-১৫০টি ব্রুড মাছ রাখা যেতে পারে।
- খাদ্য হিসেবে উচ্চ প্রোটিনযুক্ত খাবার (২৫-৩০%) প্রদান করা হয়।
শিং মাছের (Heteropneustes fossilis) পুরুষ ও স্ত্রী মাছ চেনার কিছু নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য রয়েছে। সাধারণত প্রজনন মৌসুমে এদের পার্থক্য করা সহজ হয়। নিচে প্রধান পার্থক্যগুলো উল্লেখ করা হলো—
পুরুষ ও স্ত্রী শিং মাছের পার্থক্য
বৈশিষ্ট্য | পুরুষ মাছ | স্ত্রী মাছ |
দেহের গঠন | সরু, লম্বাটে ও চিকন | মোটা ও তুলনামূলকভাবে বড় |
পেটের আকৃতি | পাতলা এবং সামান্য চাপা | বড়, গোলাকার ও নরম |
পায়ুপথ (Genital Opening) | ছোট এবং সামান্য উঁচু | অপেক্ষাকৃত বড় ও ফোলা |
প্রজনন মৌসুমে পরিবর্তন | যৌনাঙ্গ লম্বা ও স্পষ্ট হয়ে ওঠে | পেট আরও ফোলা ও নরম হয় |
রঙের পার্থক্য | তুলনামূলক গাঢ় রঙের | কিছুটা হালকা রঙের |
শুক্রাণু নির্গমন | পেটে চাপ দিলে সাদা রঙের তরল বের হয় | পেটে চাপ দিলে ডিম বের হতে পারে |
সহজ চেনার কৌশল
- পেটের গঠন দেখে বোঝা: স্ত্রী মাছের পেট গোলাকার ও নরম থাকে, বিশেষত প্রজনন মৌসুমে।
- পায়ুপথ পরীক্ষা: স্ত্রী মাছের যৌনাঙ্গ পুরুষের তুলনায় বেশি ফোলা ও বড় হয়।
- শুক্রাণু পরীক্ষা: পুরুষ মাছের পেটে হালকা চাপ দিলে সাদা রঙের তরল বের হয়, যা শুক্রাণু।
প্রজননের জন্য সুস্থ ও পরিণত পুরুষ ও স্ত্রী মাছ নির্বাচন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
২. প্রজনন প্রক্রিয়া (Hormonal Induction)
- কৃত্রিম প্রজননের জন্য ইনজেকশন পদ্ধতিতে হরমোন প্রয়োগ করা হয়।
- সাধারণত Ovaprim, HCG (Human Chorionic Gonadotropin) অথবা P.G (Pituitary Gland) Extract ব্যবহার করা হয়।
- স্ত্রী মাছের প্রতি কেজি ওজনে ০.৫-১.৫ মি.লি. ও পুরুষ মাছের ক্ষেত্রে ০.৫-১.০ মি.লি. হরমোন ইনজেকশন দেওয়া হয়।
- ইনজেকশনের ৮-১০ ঘণ্টা পর ডিম সংগ্রহ করা হয়।
৩. ডিম সংগ্রহ ও নিষেক (Fertilization)
- স্ত্রী মাছ থেকে ডিম সংগ্রহ করে এবং পুরুষ মাছ থেকে শুক্রাণু সংগ্রহ করে শুকনো পদ্ধতিতে নিষেক করানো হয়।
- নিষিক্ত ডিমকে ২-৩ বার ধুয়ে হ্যাচিং ট্রেতে রাখা হয়।
৪. হ্যাচিং ও লার্ভা উৎপাদন
- হ্যাচিং ট্রেতে পানির তাপমাত্রা ২৫–৩০°C এবং পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত করা হয়।
- ২৪-৩০ ঘণ্টার মধ্যে ডিম ফুটে লার্ভা বের হয়।
- প্রথম ৩-৪ দিন লার্ভাকে সেলাইনের পানিতে রাখতে হয় এবং পরে কৃত্রিম খাবার বা জোঁকের রস দেওয়া হয়।
৫. পোনা পরিচর্যা
- ৫-৭ দিন পর লার্ভাগুলোকে বিশেষভাবে প্রস্তুত পোনা চাষ পুকুরে ছাড়া হয়।
- শুরুতে আর্থওয়ার্ম, ইনফুসোরিয়া ও সঠিক পুষ্টিকর খাবার দেওয়া হয়।
- প্রতি লিটার পানিতে ২–৩টি পোনা ছাড়া হয় এবং ৩-৪ সপ্তাহ পর এগুলো বড় আকারের পোনায় পরিণত হয়।
এই পদ্ধতিতে দেশি শিং মাছের পোনা উৎপাদন সফলভাবে করা সম্ভব, যা বাণিজ্যিকভাবে খুবই লাভজনক।