কৃষি আবহাওয়াবিষয়ক নির্ভরযোগ্য তথ্য কৃষকদের মধ্যে পৌঁছে দিতে হবে। এর কারণেই দেশের বিভিন্ন স্থানে কৃষি আবহাওয়ার তথ্য বোর্ড। তেমনি ঠাকুরগাঁওয়ের বিভিন্ন ইউনিয়নে স্থাপন করা হয়েছিল কৃষি আবহাওয়ার তথ্য বোর্ড। কিন্তু কৃষি আবহাওয়ার তথ্য বোর্ড অকেজো হয়ে রয়েছে। এতে আগে ও পরের তিন দিনের কৃষি ভিত্তিক আবহাওয়ার হালনাগাদ তথ্যের নানা ছক রয়েছে। সাথে সাথে ভবনের ছাদে রেইন গজ মিটার ও সৌরবিদ্যুতের প্যানেলও বসানো হয়েছে। কিন্তু এসব এখন আর কোনো কাজেই আসছে না কৃষকদের। কিন্তু কৃষি আবহাওয়ার তথ্য বোর্ড এর কোন ব্যবহার নেই। যার কারণে অকেজো হয়ে পড়েছে তথ্য বোর্ডের যন্ত্রপাতি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ঠাকুরগাঁওয়ের কার্যালয় এ ব্যাপারে খোজ নেয়া হয়।
জানা যায়, বিশ্বব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় ২০১৮-১৯ অর্থবছরে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর দেশজুড়ে একটি প্রকল্প হাতে নেয়।
‘কৃষি আবহাওয়া তথ্যপদ্ধতি উন্নতিকরণ’ শীর্ষক এই প্রকল্প পরিচালিত হয় দেশজুড়ে।
এর অংশ হিসেবে দেশের বিভিন্ন উপজেলায় ৪ হাজার ৫১টি ইউনিয়ন পরিষদে স্বয়ংক্রিয় রেইন গজ বসানো হয়।
পাশাপাশি কৃষি আবহাওয়া তথ্য বোর্ড, ৪৮৭টি উপজেলায় কিয়স্ক স্থাপন করা হয়।
সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের আবহাওয়াবিষয়ক তথ্য পাঠানোর জন্য ইন্টারনেট সংযোগসহ ৬ হাজার ৬৬৪টি ট্যাব সরবরাহ করা হয়।
এই প্রকল্পের জন্য ১১৯ কোটি টাকা প্রকল্প বরাদ্দ ছিল।
২০২১ সালের জুন মাসে প্রকল্পটির প্রথম পর্যায় শেষ হয়।
ঠাকুরগাঁওয়ের পাঁচটি উপজেলায় ৫০টি ইউনিয়নে এই প্রকল্প চলমান।
প্রকল্পের আওতায় সে সময় প্রতিটি ইউপি ভবনের ছাদে স্থাপন করা হয়েছিল স্বয়ংক্রিয় রেইন গজ মিটার।
মিটারের সাথে সাথে সৌরবিদ্যুতের প্যানেলও বসানো হয়।
ইউপি ভবনের দর্শনীয় স্থানে আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়ার তথ্য বোর্ড স্থাপন করা হয়েছিল ।
এই বোর্ডের মাধ্যমে ১০টি বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ ও তা প্রকাশের ব্যবস্থা রয়েছে।
যার মধ্যে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ, তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, বায়ুপ্রবাহ, ঝড়ের পূর্বাভাস, আলোক ঘণ্টা উল্লেখযোগ্য।
মাঠপর্যায়ের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের এই কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়।
নিয়ম অনুসারে, আগে ও পরের তিন দিনের কৃষিভিত্তিক আবহাওয়ার নানা তথ্য এই বোর্ডে হালনাগাদ থাকার কথা।
কিন্তু ঠাকুরগাঁওয়ে সেটা কোনো দিনই সচল ছিল না।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার বিভিন্ন ইউপি ভবনে দেখা গেছে, ইউপি ভবনের ছাদে ড্রামাকৃতির একটি যন্ত্র বসানো আছে।
তার সঙ্গে রয়েছে সৌরবিদ্যুতের প্যানেল।
এদিকে ভবনের নিচতলায় কৃষি আবহাওয়া পূর্বাভাসের জন্য তথ্য বোর্ড রয়েছে।
তথ্য বোর্ডের কোথাও কোন তথ্য পাওয়া যায়নি।
এমনকি কোথাও কোথাও তথ্য বোর্ডের সংখ্যার ঘুঁটিও নেই দেখা যায়।
স্বয়ংক্রিয় রেইন গজ মিটার ও সৌরবিদ্যুতের প্যানেল এর ব্যবহার না থাকায় অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে।
আবার সেসব যন্ত্র খোয়া গেছে কোথাও কোথাও।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ঠাকুরগাঁও কার্যালয়ের উপপরিচালক আবু হোসেন।
তিনি বলেন, প্রকল্প চালু হওয়ার পর থেকেই কৃষি আবহাওয়া তথ্য দেওয়ার জন্য মেশিন বসানো হয়।
কিন্তু মেশিনগুলো সচল করা যায়নি।
বিষয়টি প্রকল্প পরিচালককে লিখিতভাবে একাধিকবার জানানো হয়েছে।
তবে কোনো সুফল মেলেনি।
এই প্রকল্পের পরিচালক শাহ কামাল খান।
তিনি বলেন, ২০২১ সালের জুন মাসে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়েছে।
এর পর আরও দুই বছরের জন্য প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।
এখন যন্ত্রপাতিগুলো যেন স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলে সে প্রকল্প নেওয়া হয়েছে।
প্রকল্পটি চালু হওয়ার পর থেকেই মাঠ ও জেলা পর্যায় থেকে যথাযথভাবে মনিটরিং করা হয়নি বলে তিনি জানান।