Monday, 20 May, 2024

সর্বাধিক পঠিত

গত বছরের চাইতে চার থেকে পাঁচগুণ বেশি ইলিশ মাছ ধরা পড়ছে জালে


টানা ৬৫ দিন বন্ধ থাকার পর গত ২৩শে জুলাই মধ্যরাত থেকে সমুদ্রে মাছ ধরা শুরু হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা ওঠার পর গত বছর যে পরিমাণ মাছ উঠেছিল এবারে তার চাইতে চার থেকে পাঁচগুণ বেশি ইলিশ পাচ্ছেন তারা। বেশিরভাগ মাছের আকার বড়, ওজনেও বেশি।

কুয়াকাটার মহিপুর মৎস্য বন্দরের জেলে হালিম শিকদার জানিয়েছেন গত বছরের নিষেধাজ্ঞার পর যেখানে তারা এক সপ্তাহে তারা পাঁচ থেকে সাত মন ইলিশ তুলেছিলেন। এবারে তারা একই সময়ে মাছ তুলছেন ২০ থেকে ২৫ মন। অর্থাৎ চার থেকে পাঁচ গুণ বেশি। জালভর্তি মাছ পেয়ে খুশি হালিম শিকদার।

তিনি বলেন, সাগরে সাত দিন পাঁচদিন থাকলে ২০ মন, ২৫ মন, ৩০ মন মাছ পাওয়া যায়। চার লক্ষ, পাঁচ লক্ষ টাকার মাছ ধরেন।

আরো পড়ুন
বায়োফ্লকের পানি তৈরি করার পদ্ধতি বা নিয়ম
বায়োফ্লক ট্যাংক

বায়োফ্লকে পানি তৈরি বায়োফ্লক মাছ চাষের অন্যতম প্রধান কাজ। বায়োফ্লক শুধুমাত্র ফ্লক তৈরি করতে না পেরে অনেকে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। Read more

চলমান তাপ প্রবাহে হাঁস-মুরগি ও প্রাণিসম্পদ ব্যবস্থাপনা
চলমান তাপ প্রবাহে হাঁস-মুরগি ও প্রাণিসম্পদ ব্যবস্থাপনা

তীব্র তাপপ্রবাহ হাঁস- মুরগি ও গবাদিপ্রাণির দেহে নানা ধরনের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ পীড়ন (স্ট্রেস) তৈরি করে, ফলে হাঁস-মুরগি ও গবাদিপ্রাণির Read more

“আগে তো মাছ ছিল না। এখন তো গেলে কিছুটা মাছ হয়। একবার জাল বাইরে কোনদিন হাজার বারোশ মাছও উঠছে। ইলিশের সাইজও ভালো,” তিনি বলেন।

এ বছর বর্ষাকালে বৃষ্টিপাত খুব কম হওয়ায় ধারণা করা হয়েছিল মাছের উৎপাদন কম হবে। কিন্তু ট্রলার ভর্তি করে মাছ আসায় খুশি আড়তদার ও খুচরা ব্যবসায়ীরা।

দীর্ঘদিন মাছ ধরা বন্ধ থাকায় মাছগুলো বড় হওয়ার সুযোগ পেয়েছে এবং জালে ৮০০ গ্রাম থেকে শুরু করে দেড় কেজি এমনকি দুই কেজি ওজনের মাঝ উঠছে বলে জানান মহিপুরের মৎস্য আড়তদার মালিক সমিতির সভাপতি রাজু আহমেদ রাজা।

“যে মাছটা ৭০০ গ্রাম ছিল, সেটা সময় পেয়ে এক কেজি ওজনের হইসে, পুষ্টি হয়ে বড় হইসে, তিনি বলেন।
”একটা ট্রলারে যদি ২০ মন মাছ ধরে। বন্দরে যদি ২শ ট্রলার ওঠে তাহলে চার হাজার মন মাছ হইয়ে যায়। এখন এমনই চলতেছে।”

কেন এত ইলিশ ধরা পড়ছে ?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন বাংলাদেশের সমুদ্র-সীমায় ভারতীয় জেলেদের মাছ ধরা ঠেকানো এই ইলিশ বেশি ধরা পড়ার বড় কারণ।

ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ বিভাগের শিক্ষক রোকসানা জাহান জানান, জেলেদের নিষেধাজ্ঞার সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারি, জেলেদের সরকারি সহায়তার কারণে ইলিশের উৎপাদন এবারে এতো বেশি হচ্ছে।

“নিষেধাজ্ঞা দেয়া এই সময়টাতে ইলিশ নির্বিঘ্নে প্রজনন করতে পারে। মাছগুলো সেই সময় পেলে মা মাছগুলো ডিম পেড়ে বাচ্চা ফোটানোর সময় পায়। বড় হতে পারে। এজন্য উৎপাদও বেড়ে যায়,” জাহান জানান।

বাংলাদেশে সমুদ্রে মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর থেকে ইলিশের উৎপাদন প্রতিবছর উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে বলে জানান ইলিশ গবেষক আনিসুর রহমান।

মৎস্য অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, ২০০১-০২ সালে বাংলাদেশে যেখানে ইলিশের উৎপাদন ছিল ২ লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টন, ২০২০-২১ সালে সেটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৬৫ হাজার মেট্রিক টনে। অর্থাৎ দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে।

মাছের প্রজনন যেখানে এক শতাংশেও কম ছিল সেটা এবারে বেড়ে ৫০ শতাংশ ছাড়িয়েছে। আনিসুর রহমান ইলিশের উৎপাদন বাড়ার পেছনে এমন কয়েকটি কারণ তুলে ধরেন।

“এতদিন তিন স্তরের নিষেধাজ্ঞার কথা সবার জানা হয়ে গিয়েছে। মা ইলিশের সুরক্ষা, জাটকা ইলিশের সুরক্ষা, সাগর থেকে নদীতে ইলিশের প্রবেশ নিরাপদ করা। এই নিরাপদ পরিবেশের কারণে ইলিশগুলো পরের বছরের জন্য বড় হতে পারছে। ” বলেন আনিসুর রহমান।

সাগরে মাছ ধরার ওপর ২০১৫ সালে শুধুমাত্র ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রলারের ওপর নিষেধাজ্ঞা ছিল। ২০১৯ সালে সব ধরনের নৌযানকে এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা হয়।

0 comments on “গত বছরের চাইতে চার থেকে পাঁচগুণ বেশি ইলিশ মাছ ধরা পড়ছে জালে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *