দেশের উপকূলীয় অঞ্চলের গবাদি পশুর জন্য উচ্চ ফলনশীল ও লবণ সহিষ্ণু নেপিয়ার ঘাসের নতুন জাত উদ্ভাবন করেছে বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএলআরআই)। সম্প্রতি লবণ সহিষ্ণু ঘাসের জাত বিএলআরআই ঘাস-৫ কে মাঠ পর্যায়ে সম্প্রসারণের লক্ষ্যে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের কাছে হস্তান্তর করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
উপকূলীয় অঞ্চলের গবাদি পশুর প্রয়োজনীয় ঘাসের চাহিদা পূরণ করে দুধ ও মাংসের উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশের মানুষের প্রাণিজ পুষ্টির ঘাটতি পূরণে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে লবণ সহিষ্ণু এই ঘাসের জাত। এ ছাড়া এই ঘাসের চাষ উপকূলীয় অঞ্চলের আর্থসামাজিক উন্নয়নেও অবদান রাখবে বলে মনে করছেন উদ্ভাবনকারী বিজ্ঞানীরা।
বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চল ১৯টি জেলা নিয়ে গঠিত; যা দেশের মোট আয়তনের ৩২ শতাংশ। ৩৫ মিলিয়নেরও বেশি মানুষের বসবাস এই অঞ্চলে। জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে উপকূলীয় অঞ্চলের কৃষিতে। মাটি ও পানিতে লবণের মাত্রা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। লবণাক্ততা বৃদ্ধি উপকূলীয় জীববৈচিত্র্য ও মানব স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিএলআরআই সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশে ১৯৭৩ সালে লবণাক্ততা প্রভাবিত জমির পরিমাণ ছিল ৮৩.৩ মিলিয়ন হেক্টর, যা ২০০০ সালে বেড়ে দাঁড়ায় ১০২ মিলিয়ন হেক্টর এবং ২০০৯ সালে বেড়ে ১০৫.৬ মিলিয়ন হেক্টর হয়েছে। অর্থাৎ ৩৬ বছরের ব্যবধানে লবণাক্ত প্রভাবিত এলাকা বৃদ্ধি পেয়েছে ২৬ শতাংশ। যার প্রভাব পড়ছে এই অঞ্চলের কৃষি খাত ও প্রাণিসম্পদ লালন পালনে। দিন দিন কমছে ঘাসের উৎপাদন ও চারণভূমি। দানাদার খাদ্যের অপর্যাপ্ততা ও উচ্চ বাজার মূল্যের কারণে খামারিদের নির্ভর করতে হচ্ছে শুধু খড়ের ওপর। ফলে ব্যাহত হচ্ছে দুধ ও মাংসের কাংক্ষিত উৎপাদন।
এসব সমস্যা সমাধান করতেই বিএলআরআই এবং বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার এগ্রিকালচার (বিনা) যৌথভাবে গবেষণার মাধ্যমে পিআইইউ, এনএটিপি ফেজ-২, বিএআরসির অর্থায়ন, প্রাণিসম্পদ বিভাগ, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের তত্ত্বাবধানে লবণ সহিষ্ণু ঘাসের এই জাত উদ্ভাবন করেছে। উপকূলীয় অঞ্চলের গো খাদ্যের ঘাটতি পূরণে ভূমিকা রাখবে ঘাসের এই নতুন জাত।
লবণ সহিষ্ণু ঘাসের জাত বিএলআরআই ঘাস-৫
বছরে পাঁচবার কাটা হলে দ্বিগুন লাভ করবে খামারি পর্যায়ে হেক্টর প্রতি মোট উৎপাদন হবে ২৬৪ মেট্রিক টন। রোপণ থেকে শুরু করে কাটা পর্যন্ত বিভিন্ন খরচ বাবদ প্রতি হেক্টরে বার্ষিক খরচ পড়বে ২ লাখ ৩৯ হাজার ৫৪৫ টাকা। প্রতি মেট্রিক টনে খরচ ৯০৮ টাকা। বিদ্যমান বাজার ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে নেপিয়ার ঘাস ঋতুভেদে আড়াই টাকা কেজিতে বিক্রি হয়।
বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, খামারিরা আর্থিকভাবে লাভবান হবে এবং তাদের জীবনযাত্রার মানের উন্নয়ন ঘটবে। উপকূলীয় অঞ্চলের বিপুল সম্ভাবনাময় প্রাণিসম্পদকে কাজে লাগিয়ে দুধ ও মাংসের উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে আর্থসামাজিক উন্নয়নের পাশাপাশি দেশের মানুষের প্রাণিজ পুষ্টির ঘাটতি পূরণে সহায়ক হবে।