ভুট্টা বর্ষজীবী গুল্ম প্রকৃতির। ভুট্টা একটি অধিক ফলনশীল ও বহুমুখী ব্যবহার সম্পন্ন দানা শস্য। ভুট্টার দানা মানুষের খাদ্য হিসেবে এবং এর রসাল গাছ ও সবুজ পাতা উন্নত মানের গােখাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। অনেকে সাইলেজের জন্য ভুট্রা চাষ করে থাকে। গবাদিপশু, হাঁস-মুরগি ও মাছের খাদ্য হিসেবে আমাদের দেশে ভুট্টা দানার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
একই গাছে পুরুষ ফুল ও স্ত্রী ফুল জন্মে। পুরুষ ফুল একটি মঞ্জরীদণ্ডে বিন্যস্ত হয়ে গাছের মাথায় বের হয়। স্ত্রী ফুল গাছের মাঝামাঝি উচ্চতায় কাণ্ড ও পাতার অক্ষকোণ থেকে মােচা আকারে বের হয়। স্ত্রী ফুল নিষিক্ত হলে মােচার ভিতরে দানার সৃষ্টি হয়। ধান ও গমের তুলনায় স্ত্রী ফুল ভুট্টা দানার পুষ্টিমান বেশি।
কোন জাতের ভূট্রা চাষ করবেন ?
বিভিন্ন জাতের ভূট্রার মধ্যে রয়েছে- বর্ণালী, শুভ্রা, মােহর, বারি ভুট্টা-৫, বারি ভুট্টা-৬, বারি ভুট্টা-৭, বারি হাইব্রিড ভুট্টা-১, বারি হাইব্রিড ভুট্টা-২, বারি হাইব্রিড ভুট্টা-৩ অন্যতম।
এছাড়া খই (পপ কর্ণ) এর জন্য রয়েছে খই ভুট্টা এবং কচি অবস্থায় খাওয়ার জন্য রয়েছে বারি মিষ্টি ভুট্টা-১। এর বাইরে বিভিন্ন বীজ কোম্পানি বিদেশ থেকে হাইব্রিড জাতের ভুট্টা বীজ আমদানি করে থাকে।
ভূট্রা চাষের মাটি কেমন হবে
জমিতে পানি যেন না জমে এমন মাটি ভূট্রা চাষের জন্য উত্তম। এ ক্ষেত্রে দোআঁশ ও দোআঁশ মাটি ভুট্টা চাষের জন্য উত্তম।
ভুট্রা চাষের উপযুক্ত সময়
আমাদের দেশে রবি মৌসুমে অক্টোবর-নভেম্বর এবং খরিপ মৌসুমে মধ্য ফেব্রুয়ারি-মার্চ পর্যন্ত সময় বীজ বপনের উপযুক্ত সময়।
বীজের হার ও বীজ বপন পদ্ধতি
বারি ভুট্টা জাতের জন্য হেক্টর প্রতি ২৫-৩০ কেজি এবং খই ভুট্টার জন্য ১৫-২০ কেজি হারে সারিতে বীজ বুনতে হয়। সারি থেকে সারির দূরত্ব হবে ৭৫ সেমি এবং সারিতে ২৫ সেমি দূরত্বে ১টি অথবা ৫০ সেমি দূরত্বে ২টি গাছ রাখতে হবে।
ভূট্রা চাষে সারের পরিমান
বাংলাদেশে রবি মৌসুমে ভুট্টার চাষ বেশি হয়। ৪-৫টি গভীর চাষ ও মই দিয়ে জমি তৈরি করতে হয়। ভুট্টা চাষে বিভিন্ন প্রকার সারের পরিমাণ নিচে দেওয়া হলাে :
জমি তৈরির শেষ পর্যায়ে মােট ইউরিয়ার এক-তৃতীয়াংশ এবং অন্যান্য সারের সবটুকু ছিটিয়ে জমি চাষ দিতে হবে। এ সময় হেক্টর প্রতি জিংক সালফেট ১০-১৫ কেজি। বােরন সার ৫-৭ কেজি এবং গােবর সার ৫ টন প্রয়ােগ করলে ভালাে ফলন পাওয়া যায়।
বাকি ইউরিয়া সমান দুই কিস্তিতে ভাগ করে, প্রথম কিস্তি বীজ গজানাের ২৫-৩০ দিন পর এবং দ্বিতীয় কিস্তি বীজ গজানাের ৪০-৫০ দিন পর উপরি ভাগে প্রয়ােগ করতে হবে।
চারা গজানাের ৩০ দিনের মধ্যে জমি থেকে অতিরিক্ত চারা তুলে ফেলতে হবে, চারার বয়স এক মাস না হওয়া পর্যন্ত জমি আগাছা মুক্ত রাখতে হবে। দ্বিতীয় কিস্তির ইউরিয়া সার উপরি প্রয়ােগের সময় দুই সারির মাঝখান থেকে মাটি গাছের গােড়া বরাবর তুলে দিতে হবে।
ভাল ফলনের জন্য নিয়মিত সেচ প্রয়োগ
উচ্চ ফলনশীল জাতের আশানুরূপ ফলন পেতে হলে রবি মৌসুমে ৩-৪টি সেচ দেওয়া প্রয়ােজন।
ভূট্রা গাছের ৫ পাতা পর্যায়ে প্রথম, ১০ পাতা পর্যায়ে দ্বিতীয়, মােচা বের হওয়ার সময়ে তৃতীয় এবং দানা বাঁধার পূর্বে চতুর্থ সেচ দিতে হয়। জমিতে যাতে পানি না জমে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
ভুট্রা চাষের রোগ সমূহ কি কি ?
ভুট্রায় বেশ কয়েকটি রােগ দেখা দেয়। যেমন-ভুট্টার বীজ পচা ও চারা মরা রােগ, পাতা ঝলসানাে রােগ, কাণ্ড পচা রােগ, মােচা ও দানা পচা রােগ। এ রােগগুলাে বিভিন্ন ধরনের বীজ ও মাটিবাহিত ছত্রাকের আক্রমণে হয়ে থাকে।
বীজ বপনের সময় মাটিতে রস বেশি এবং তাপমাত্রা কম থাকলে বীজ পচা ও চারা মরা রােগ দেখা দেয়। পাতা ঝলসানাে রােগে। আক্রান্ত গাছের নিচের দিকের পাতায় লম্বাটে ধূসর বর্ণের দাগ দেখা যায়। পরে তা গাছের উপরের অংশে ছড়িয়ে পড়ে। রােগের আক্রমণ বেশি হলে পাতা আগাম শুকিয়ে যায় এবং গাছ মরে যায়।
রােগ দমন পদ্ধতি:
রােগ প্রতিরােধী জাত ব্যবহার করতে হবে, বীজ বপনের পূর্বে শােধন করে নিতে হবে।
কাটার পর পরিত্যক্ত অংশ পুড়িয়ে ফেলতে হবে এবং একই জমিতে বার বার চাষ বন্ধ করতে হবে।
কখন ভুট্টা সংগ্রহ ও মাড়াই করবেন
মােচা চকচকে খড়ের রং ধারণ করলে এবং পাতা কিছুটা হলদে হলে, দানার জন্য ভুট্টা সংগ্রহের উপযুক্ত হয়।
গাছের মােচা ৭৫-৮০% পরিপক্ব হলে ফসল সংগ্রহ করা যাবে। মােচা সংগ্রহের পর ৪-৫ দিন রােদে শুকাতে হবে।
অতঃপর হস্ত বা শক্তিচালিত মাড়াই যন্ত্র দ্বারা দানা ছাড়িয়ে বাছাই-ঝাড়াই করে সংব্রক্ষণ করতে হবে।
ভুট্রার জীবনকাল
রবি মৌসুমে ভুট্রা গাছের জীবনকাল ১৩৫-১৫৫ দিন এবং খরিপ মৌসুমে ভুট্রা গাছের জীবনকাল ৯০-১১০ দিন।