বিনা ধান-১৭ জাতের ধানের উদ্ভাবক বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট। ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. মির্জা মোফাজ্জল ইসলাম। তিনি বলেন, এ ধান গাছের প্রতিটি শিষে ২৫০ থেকে ২৭০টি পুষ্ট দানা থাকে। ইউরিয়া সার ৩০ শতাংশ কম এবং জমিতে ৪০ শতাংশ পানি কম লাগে। এ কারণে বিনা-১৭ গ্রিন সুপার রাইস নামে নামকরণ করা হয়েছে।
উচ্চ ফলনশীল, স্বল্প মেয়াদি, খরাসহিষ্ণু, আলোক সংবেদনশীল ও উন্নত গুণাগুণের বিনা ধান-১৭।
এটি আবাদে কৃষি খাতে বিপুল সম্ভাবনা দেখছেন বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিনা) বিজ্ঞানীরা।
তাদের দাবি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কৃষক এ জাত আবাদ করে লাভবান হচ্ছেন।
এখন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে সারা দেশে জাতটি ছড়িয়ে দেয়ার।
ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা জানান, উদ্ভাবিত এ জাতের ধানগাছ খাটো।
এটি খুব শক্ত তাই হেলে পড়ে না।
একটি পূর্ণবয়স্ক গাছের উচ্চতা ৯৬ থেকে ৯৮ সেন্টিমিটার।
এর পাতা গাঢ় সবুজ ও খাড়া হয়।
এই ধান আগাম পেকে যায়, তাই কাটার পর জমিতে সহজেই রবিশস্য চাষ করা যায়।
বিনা ধান-১৭ উজ্জ্বল রঙের, চাল লম্বা এবং চিকন, খেতে সুস্বাদু।
এর বাজারমূল্য বেশি এবং বিদেশে রপ্তানির উপযোগী।
চালে অ্যামাইলোজের পরিমাণ ২৪.৬ শতাংশ।
হেক্টরপ্রতি ৬.৮ টন থেকে সর্বোচ্চ আট টন পর্যন্ত ফলন হয়।
এ ধানের চাল রান্নার পর ভাত ঝরঝরে হয়।
ভাত দীর্ঘক্ষণ রাখলেও নষ্ট হয় না।
ধানের এই জাতটি বিভিন্ন রোগ তুলনামূলকভাবে বেশি প্রতিরোধ করতে পারে।
এ ছাড়া প্রায় সব ধরনের পোকার আক্রমণ প্রতিরোধের ক্ষমতা অনেক বেশি।
বিজ্ঞানীরা আরও জানান, ধান চাষ বৃদ্ধির কারণে কমে যাচ্ছে তেল ও ডালজাতীয় শস্যের জমি।
বিনা ধান-১৭ উচ্চ ফলনশীল এবং এর জীবনকাল তুলনামূলকভাবে অনেক কম।
এর কারণে শস্য নিবিড়তা বাড়াতে খুবই কার্যকর এটি।
আগাম পাকা জাত হিসেবে এটি চাষ করা যেতে পারে।
এতে সঠিক সময়ে তেল ও ডাল ফসল চাষ সম্ভব।
বিনা ধান-১৭ জাতের ধানটি উদ্ভাবন করেছেন বিনার মহাপরিচালক ড. মির্জা মোফাজ্জল ইসলাম।
তার সহযোগী গবেষক হিসেবে উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের প্রধান ও মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শামছুন্নাহার বেগম ছিলেন।
তিনি জানান, এটি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আমন মৌসুমে ফলন পরীক্ষা করা হয়।
এর মাধ্যমে জাত হিসেবে চূড়ান্তভাবে নির্বাচন করা হয়েছে এটি।
২০১৫ সালে একে জাতীয় বীজ বোর্ড উচ্চ ফলনশীল ও স্বল্পমেয়াদি জাত হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
সারা দেশে আমন মৌসুমে চাষের জন্য বিনা ধান-১৭ নামে অনুমোদন দেয়।
ড. শামছুন্নাহার জানান, বীজতলায় লাইন করে চারা রোপণ করলে ফলন বেশি হয়।
এ জন্য দুই থেকে তিনটি সুস্থ-সবল চারা এক গুছিতে রোপণ করলে ভালো হবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ময়মনসিংহের উপপরিচালক মো. মতিউজ্জামান।
তিনি বলেন, গত বছর ২৩১ হেক্টর জমিতে বিনা ধান-১৭ আবাদ হয়েছে জেলায়।
কৃষক আগাম ধান হওয়ায় খুশি।
এ বছর চাষ করা হয়েছে ২৭০ হেক্টর জমিতে এ জাতের ধান।
আগামী বছর আরও বেশি চাষ হবে।
বিনা ধান-১৭ জাতের ধানের উদ্ভাবক ড. মির্জা মোফাজ্জল ইসলাম জানান, ইতোমধ্যে কৃষকদের অবগত করা হয়েছে।
দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এটি আবাদ হয়েছে।