দুই দশক ছিলেন প্রবাসে। করেছেন দরজির কাজ, দেশে সংসার চালিয়েছেন। কিন্তু একসময় কমে আসে আয়। বিপাকে পড়ে দেশে ফেরার চিন্তা করলেও কী করবেন এ ভাবনা পেয়ে বসে। একদিন ইউটিউবে ঘুৃরতে ঘুরতে দেখেন পিরোজপুরের এক মাল্টাচাষির প্রতিবেদন। তারপর ইন্টারনেট, ইউটিউবে ঘাঁটাঘাঁটি শুরু করেন, সিদ্ধান্ত নেন মাল্টা চাষের। দেশে ফিরে এসে করেন ‘গ্রিন মাল্টার’ বাগান। এই গ্রিণ মাল্টার বাগানে সফল হয়েছেন মোহাম্মদ আবদুর রহমান।
সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার চিনাকান্দি গ্রামের বাসিন্দা আবদুর রহমান। প্রবাস থেকে ফিরে তিনি সুদিনের দেখা পেয়েছেন গ্রিন মাল্টার চাষ করে । একই বাগানে তিনি বিভিন্ন মৌসুমি জাতের সবজির চাষও করেছেন। একই সাথে গরু ও ছাগলের খামার করেছেন। সব মিলিয়ে আয় হচ্ছে তাঁর ভালোই।
মাল্টার বাগানের শুরু
১৯৯৯ সালে তিনি সৌদি আরবে পাড়ি জমালেও ২০১৫ সালে ফিরে আসেন আবদুর রহমান। দেশে ফিরে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয়ে যোগাযোগ করেন মাল্টা চাষের বিষয়ে । সেখান থেকে তাঁকে বেশ উৎসাহ পেয়ে গ্রামে থাকা তাঁর ৫০ শতক জমির মাটি ভরাট করে মাল্টা চাষের উপযুক্ত করেন। চারদিকে নিরাপত্তাবেষ্টনী দিয়ে তৈরি এ প্লট কৃষি কার্যালয় তাদের প্রদর্শনী প্লট করতে উদ্যোগ নেয়।
একপর্যায়ে মাল্টার চারা আবদুর রহমানকে দেওয়া হয়। কৃষি কার্যালয়ের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা শামছুল আলম বাগান তৈরিতে সব ধরনের সহযোগিতা করেন। প্রথম বছর গাছে ছোট ছোট ফল এলেও প্রায় দুই লাখ টাকার মাল্টা বিক্রি করেছেন। তবে বিক্রি এবার আরও বাড়বে বলে আশা করছেন আবদুর রহমান।
ভারত সীমান্তবর্তী এলাকায় অবস্থিত এই চিনাকান্দি গ্রামের জমি তুলনামূলক উঁচু। মাল্টার বাগান করা হয়েছে মাটি ফেলে আরও উঁচু করে। সরেজমিনে দেখা যায় ছোট ছোট গাছে থোকা থোকা মাল্টা ঝুলে আছে। দেখতে কাঁচা মনে হলেও এগুলো সবুজ, মিষ্টি ও রসাল হয়। বর্তমানে ৫ থেকে ১০ কেজি পর্যন্ত মাল্টা ধরেছে প্রতিটি গাছে। আবদুর রহমান আগামী বছর ৩০ কেজি পর্যন্ত হবে বলে আশা করছেন। ১৪০টি গাছ থেকে এ বছর ৩ লাখ টাকার মাল্টা বিক্রি করতে পারবেন বলে তিনি মনে করেন।
আবদুর রহমান বাগানটি করতে খরচ করেছেন দুই লাখ টাকা। এখন তিনি মৌসুমি সবজির চাষ করছেন সেখান থেকেও বাড়তি লাভ পাচ্ছেন। তাছাড়া বাড়িতে আরেকটি খামার করেছেন ৭টি গরু ও ২০টি ছাগল নিয়ে ।
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা শামছুল আলম এর সাথে কথা হয়। তিনি জানান যে একজন পরিশ্রমী মানুষ আবদুর রহমান। শুরু থেকে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করার কারণে এখন তিনি সুফল পেতে শুরু করেছেন।