আমাদের দেশে বাণিজ্যিকভাবে হাঁস-মুরগির পালন শুরু হয়েছে বেশ কয়েক বছর ধরে। বর্তমানে বেশ লাভজনক ব্যবসা হিসেবে পরিচিত হাঁস-মুরগির খাবার বা পোল্ট্রি ফিড। আবার হাঁস-মুরগির খাবার তৈরি করে খামারগুলোতে সরবরাহ করে বেশ লাভজনক ব্যবসা করা যেতে পারে। আমাদের দেশে পোলট্রি শিল্পের সম্ভাবনা খুব বেশি। তবে এর প্রধান সমস্যা হচ্ছে রোগবালাই এবং সুষম খাদ্যের অভাব হওয়া।
বাজারজাতকরণের সম্ভাবনা
বেশ কয়েক ধরণের পোলট্রি ফিড বাজারে বর্তমানে তৈরি অবস্থায় পাওয়া যায়। এগুলোর মধ্যে কিছু উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান আছে বিএসটিআই কর্তৃক অনুমোদিত। আবার পণ্যের মান নির্ধারিত মানের অনেক নীচে অনেক প্রতিষ্ঠান আছে। প্রায়শই দেখা যায় যে খাদ্য উৎপাদনের সময়কার মান ব্যবহারের সময় পর্যন্ত আর অক্ষুণ্ন থাকে না। যার ফলাফল মুরগির স্বাস্থ্যহানী ঘটে ওই সব খাবার খেয়ে। খাদ্য তৈরিকে ঝামেলা মনে করেন অনেক ছোট হাঁস-মুরগির খামারী। অন্যদিকে বাজার থেকে তৈরি খাদ্যদ্রব্য কিনে থাকা খামারীর সংখ্যা নেহায়েত কম নয়। সেদিক বিবেচনা করলে পোলট্রি ফিড একটি লাভজনক ব্যবসা। খামারে গিয়ে এসব খাদ্য সরবরাহ অথবা বাড়িতেও বিক্রির ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এভাবে বাজারের সম্ভাবনা অনেক ভালো।
কেমন মূলধন লাগতে পারে
আনুমানিক ৮০০ থেকে ১০০০ টাকার স্থায়ী উপকরণ প্রয়োজন হয় পোল্ট্রী ফিড তৈরিতে। হাঁস-মুরগির খাদ্য তৈরির ব্যবসা শুরু করা যায় প্রায় ১৮০০-২৩০০ টাকার কাঁচামাল কিনে।এছাড়া বিভিন্ন ব্যাংক এখন কম সুদে ঋণ প্রদান করে। সেখান থেকে স্বল্প সুদে স্বল্প ঋণ নিয়ে এটা শুরু করা যায়।
কোথায় প্রশিক্ষণ নেবেন
আলাদা কোন প্রশিক্ষণের প্রয়োজন পড়ে না। স্থানীয় যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরে হাঁস-মুরগি পালন বিষয়ে প্রশিক্ষণ নেয়া যেতে পারে।
কি কি উপকরণ লাগবে, কি পরিমাণে লাগবে, কোথায় পাবেন
স্থায়ী উপকরণ
উপকরণ | পরিমাণ | আনুমানিক মূল্য (টাকা) | প্রাপ্তিস্থান |
খাদ্য উপাদানশুকানোর জন্য চট (বড়) | ১টি | ৩০-৩৫ | হার্ডওয়ারের দোকান |
টিন | ৫/৬টি | ৩০০-৩২০ | তৈজসপত্রের দোকান |
চট বা পলিথিনের বস্তা | ৭/৮টি | ৮০-১০০ | হার্ডওয়ারের দোকান |
দাঁড়িপাল্লা | ১ সেট | ২৫০-৩০০ | হার্ডওয়ারের দোকান |
কাঠের চামচ (বড়) | ১টি | ২০-২৫ | কাঠের পণ্য বিক্রির দোকান |
বড় পাত্র | ১টি | ২০০-২৫০ | তৈজসপত্রের দোকান |
মোট=৮৮০-১০৩০ টাকা |
কি কি কাঁচামাল লাগবে
উপকরণ | পরিমাণ | আনুমানিক মূল্য (টাকা) | প্রাপ্তিস্থান |
গমের ভূষি | ৫ কেজি | (৫X ১০-১৫)=৫০-৭৫ | মুদি দোকান |
গম/ভূট্টা ভঙ্গা/চালের খুদ | ৪০ কেজি | (৪০X ১৫-১৮)=৬০০-৭২০ | মুদি দোকান |
চালের কুড়া | ২৫ কেজি | (২৫X ১০-১৫)=২৫০-৩৭৫ | মুদি দোকান |
শুটকি মাছের গুড়া | ১০ কেজি | (১০X ৫৫-৬০)=৬৫৫০-৬০০ | মুদি দোকান |
তিলের খৈল | ১২ কেজি | (১২X ২০-২২)=২৪০-২৬৪ | মুদি দোকান |
ঝিনুকের গুড়া | ৭.৫ কেজি | (৭.৫X ২০-২৫)=১৫০-১৮৭-৫০ | মুদি দোকান |
লবণ | ০.৫ কেজি | (০.৫X ১৫-১৭)=৭.৫-৮.৫ | মুদি দোকান |
মোট=১৮৪৮-২৩০৫ টাকা |
খাদ্য তৈরির নিয়ম
খাদ্য উপাদানগুলো যথাযথ ভাবে মেপে নিতে হবে। সকল উপাদান এরপর রোদে দিয়ে ভালোভাবে শুকিয়ে নিতে হবে।
শুকিয়ে গেলে উপাদানগুলো ভালোভাবে গুড়ো করে নিতে হবে। এগুলো বিশেষ করে গমভাঙ্গা মেশিনে গুড়ো করা যায় সহজেই। গুড়ো করার পর উপাদানগুলো চালুনীতে ভালভাবে চেলে নিতে হবে।
প্রত্যেকটি গুড়া আলাদা আলাদা মেপে সঠিক ভাবে মাপ নিতে হবে।
একটি বড় পাত্রে এবার সবগুলো খাদ্য উপাদান একত্রে ঢেলে নিয়ে কাঠের হাতা দিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে।
কাচামালের মূল্য ১৮৪৮-২৩৫০ এবং যন্ত্রপাতি বাবদ ১০০-১৫০ টাকা হলে খরচ হবে মোট ২০০০-২৫০০ টাকা। আবার প্রতি কেজি খাদ্য বিক্রয় হয় ৩০-৩৫ টাকা, সে তুলনায় ১০০ কেজি খাদ্য বিক্রয় করা হয় ৪০০০-৪৮০০ টাকায়।
অর্থাৎ প্রতি ১০০ কেজিতে লাভ হবে অন্তত ১০০০ থেকে ১৫০০ টাকা।