
মানবস্বাস্থ্য, প্রাণিস্বাস্থ্য ও পরিবেশ—এই তিনটির সমন্বয়েই প্রকৃত অর্থে ‘ওয়ান হেলথ’ বা ‘এক স্বাস্থ্য’ ধারণা বাস্তবায়ন সম্ভব বলে মন্তব্য করেছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। তিনি বলেন, “খণ্ডিতভাবে কাজ করার সময় শেষ। এখন প্রয়োজন ‘হোল অব গভর্নমেন্ট’ ও ‘হোল অব নেশন’ অ্যাপ্রোচ।”
বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) বিকালে রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় আয়োজিত “ওয়ান হেলথ কার্যক্রম: সম্ভাবনা, চ্যালেঞ্জ এবং ভবিষ্যৎ কৌশল” শীর্ষক সেমিনারে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিন মন্ত্রণালয়ের সমন্বিত উদ্যোগ
ফরিদা আখতার জানান, ‘ওয়ান হেলথ’ প্রকল্প বাস্তবায়নে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ; পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ—এই তিনটি মন্ত্রণালয় একসঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকার করেছে। প্রস্তাবিত প্রকল্পে একটি ডিপিপি-র (DPP) আওতায় তিনটি মন্ত্রণালয় থেকে তিনজন প্রকল্প পরিচালক রেখে কার্যক্রম পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যাতে প্রতিটি খাত সক্রিয়ভাবে যুক্ত থাকে।
উপদেষ্টা সতর্ক করে বলেন, “অনিরাপদ খাদ্য, পরিবেশ দূষণ, অতিরিক্ত অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার এবং অপরিকল্পিত নগরায়ন স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়াচ্ছে। মানুষ যেমন রোগের ভুক্তভোগী, তেমনি অনেক ক্ষেত্রে মানুষই দায়ী। তাই প্রতিরোধমূলক ও প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় আমাদের গুরুত্ব দিতে হবে।”
প্রকৃতির মালিক নয়, মানুষ অবিচ্ছেদ্য অংশ: সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান
সেমিনারে সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, “উন্নয়নের নামে পরিবেশ ধ্বংস করলে তার চূড়ান্ত মূল্য সমাজকেই দিতে হয়। রাস্তা বা অবকাঠামো তৈরি করা সম্ভব হলেও একটি সুন্দরবন বা নদী নতুন করে সৃষ্টি করা যায় না।”
তিনি আরও বলেন, ওয়ান হেলথ বাস্তবায়নে আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয়ের ঘাটতি ও দীর্ঘসূত্রতা বড় বাধা। এসব দূর করতে জেলা পর্যায়ে পরামর্শক কমিটি গঠন ও প্রতিটি মন্ত্রণালয়ে ‘ফোকাল পয়েন্ট’ নির্ধারণ করা জরুরি। তিনি মনে করিয়ে দেন, “মানুষ প্রকৃতির মালিক নয়, বরং এর অবিচ্ছেদ্য অংশ।”
কেন্দ্রবিন্দুতে মানবস্বাস্থ্য
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান বলেন, ওয়ান হেলথের মূল কেন্দ্রে অবশ্যই মানবস্বাস্থ্য থাকতে হবে। মাছ, পশু বা পরিবেশের স্বাস্থ্য গুরুত্বপূর্ণ কারণ এর সরাসরি প্রভাব মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা ও জীবনের ওপর পড়ে। এই প্রকল্পকে তিনি বাংলাদেশের জন্য একটি ‘আই-ওপেনিং’ উদ্যোগ হিসেবে অভিহিত করেন।
অন্যান্য আলোচকবৃন্দ
সেমিনারে আইইডিসিআর-এর পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরীন, বন অধিদপ্তরের উপপ্রধান বন সংরক্ষক মো. জাহিদুল কবির এবং প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. আবু সুফিয়ান যৌথভাবে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
এছাড়া পরিকল্পনা কমিশনের সচিব ড. কাইয়ুম আরা বেগম, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. সাইদুর রহমান, পরিবেশ সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ সচিব আবু তাহের মুহাম্মদ জাবেরসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বক্তব্য রাখেন।

