Saturday, 28 June, 2025

সর্বাধিক পঠিত

বিভিন্ন রকম মাথাল সংগ্রহ হতে পারে নান্দনিক শখ


মাথাল একটি ঐতিহ্যবাহী বস্তু। আমাদের দেশে সেই আদিকাল থেকেই এর ব্যবহার হয়ে আসছে। মাথাল সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার কৃষকেরা। এ অঞ্চলের মাথাল সবচেয়ে বেশি মজবুত হয়। আবার সিলেট অঞ্চলের কৃষকেরা দৃষ্টিনন্দন মাথাল তৈরি করেন। অন্যদিকে মাথালের ব্যবহার করেন না ভোলা ও নারায়ণগঞ্জ জেলার কৃষকেরা। তবে শখের বশে বিভিন্ন রকম মাথাল সংগ্রহ করেছেন শৌখিন জাহাঙ্গীর। তার অদ্ভুত কিন্তু নান্দনিক শখ বিভিন্ন রকম মাথাল সংগ্রহ করা।

তবে বাংলাদেশ ছাড়া বিশ্বের আরও ১১টি দেশে মাথাল ব্যবহার হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, একেক দেশের মাথালের একেক রকম গঠন দেখা যায়।

আরো পড়ুন
কবুতর পালনে করনীয় ও লক্ষনীয়

অনলাইনে কবুতরের জাত নিয়ে প্রচুর কৌতূহল দেখা যায়। শুধু গিরিবাজ বা সিরাজি নয়, আরও অনেক ধরনের কবুতর বাংলাদেশে জনপ্রিয়। এদের Read more

ফলের ঘ্রাণে মাতোয়ারা জনপদ: এক অনন্য উৎসব ‘ফল মেলা’

বাংলার বাতাসে যখন আমের সুবাস, কাঁঠালের ঘ্রাণ আর জাম-লিচুর মিষ্টি রসে ভরে ওঠে জনপদ, তখনই দেশের প্রতিটি অঞ্চলে বসে এক Read more

তবে সবগুলোর মধ্যে সাধারণ ব্যপার হল সব দেশের মাথালই কৃষি উপকরণ দিয়ে তৈরি করা হয়।

কিন্তু বিভিন্ন রকম নামে নামাঙ্কিত এটি।

আর সেটি শুধু বাইরে না, বাংলাদেশেও একেক জেলায় একেক রকম নাম রয়েছে মাথালের।

বেসরকারি পর্যায়ে দেশের একমাত্র কৃষিতথ্য পাঠাগার ও জাদুঘরের প্রতিষ্ঠাতা জাহাঙ্গীর শাহ।

মাথাল সংগ্রহ ও মাথাল নিয়ে গবেষণার কাজ শুরু করেছেন তিনি।

নওগাঁ জেলার মান্দা উপজেলার কালীগ্রামে তার নিবাস।

রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলে শিক্ষকতা করেন তিনি।

মাথালের বিচিত্র চেহারা ও নাম জানতে তিনি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ঘুরে বেড়িয়েছেন।

গত ১২ বছর ধরে তার এ গবেষণায় তিনি বিভিন্ন অঞ্চলের সাধারণ চাষিদের সাথে কথা বলেছেন।

এমনকি দুর্গম অঞ্চলের অচেনা চাষির বাড়িতে রাত যাপনও করেছেন তিনি।

এক এক অঞ্চলে মাথালের এক এক নাম

তাঁর গবেষণালব্ধ তথ্য অনুসারে, রাজশাহী অঞ্চলের মাথালকে চট্টগ্রামে জুইর, কুড়িগ্রামে ঝাঁপি, পঞ্চগড়ে ভাতি, টাঙ্গাইলে মাথোল বলা হয়। নড়াইল ও ভোলায় এটা টুয়া নামে পরিচিত।

অন্যদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও নেত্রকোনায় এর নাম পাতলা, মৌলভীবাজারে ছাতা, ফেনীতে জোংরা/জুমলা, পটুয়াখালী ও বাগেরহাটে জুমলা।

দেশের বাইরে অবশ্য এটি ফারমার্স ক্যাপ হিসেবে পরিচিত।

আমাদের দেশের মাথালের মধ্যে জোংরা/জুমলা/ জুইর আলাদা। এদের আবার বিশেষ বৈশিষ্ট্য রয়েছে।

সাধারণ মাথালগুলো আকারে গোল হয়।

গোলাকার এই মাথাল দিয়ে শুধু মাথার রোদ-বৃষ্টি ঠেকানো সম্ভব হয়।

কিন্তু জোংরা/জুমলা/ জুইর আকারে অনেক বড় হয়, এগুলো গোল হয় না।

এটা দিয়ে চাষিরা ঢেকে রাখতে পারেন মাথা থেকে পিঠ ও কোমর পর্যন্ত।

নওগাঁ জেলার মান্দা উপজেলার কালীগ্রামে জাহাঙ্গীর শাহ প্রতিষ্ঠা করেন শাহ কৃষিতথ্য পাঠাগার ও জাদুঘর।

এই জাদুঘরে দেশের এ রকম ৪২টি জেলার মাথাল এবং ১০টি দেশের ফারমার্স ক্যাপ রয়েছে।

তার জাদুঘরে এগুলো প্রদর্শনের জন্য বিশেষ গ্যালারিতে রাখা হয়েছে।

তাঁর প্রতিষ্ঠিত এই  জাদুঘরটি ৫০টি কর্নারে ভাগ করা।

এর মধ্যে একটি কর্নার বরাদ্দ রাখা হয়েছে শুধু মাথাল সংগ্রহ প্রদর্শনীর জন্য।

সারা দেশে ঘুরে ঘুরে এই মাথাল সংগ্রহ করেছেন জাহাঙ্গীর শাহ।

একইভাবে সেখানকার কৃষকের কাছ থেকে কোন জেলায় মাথালের কী নাম, তা-ও জেনে এসেছেন।

জাহাঙ্গীর শাহ জানান, মাথাল নিছক কৃষকের মাথা ঢাকার একটি জিনিস নয়।

এটি শিল্প সম্মতভাবে তৈরি একটি কৃষি উপকরণ।

প্রাচীনকাল থেকে এর ব্যবহার হয়ে আসছে।

এই মাথালগুলোর প্রতি মনোযোগ দিয়ে দেখলে তাঁদের ভেতরের শিল্পীসত্তার পরিচয় পাওয়া যায় বলে তিনি জানান।

এমনকি একেক অঞ্চলের মাথালের একেক ধরনের বুনন ও গঠন দেখেও পরিচয় পাওয়া যায় কৃষকের বিচিত্র শিল্পীমনের।

দিন দিন হারিয়ে যাওয়া এই শিল্পকে নতুন প্রজন্মের সঙ্গে পরিচয় করে দেওয়ার জন্য তিনি এই সংগ্রহশালা গড়ে তুলেছেন।

0 comments on “বিভিন্ন রকম মাথাল সংগ্রহ হতে পারে নান্দনিক শখ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সাম্প্রতিক লেখা

আর্কাইভ